বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
বিএনপির জাতীয় সম্মেলন করতে খরচ হয়েছিল ৫৫ লাখ টাকা। আর সরকারী দল আওয়ামী লীগের সম্মেলনে খরচ হয়েছে বিএনপির চেয়ে বিশগুনের কাছাকাছি। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপির চেয়ে অফিসিয়াল বাজেটও খরচ ধরা হয়েছিলো পাঁচগুন বেশি। আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে সম্মেলন উপলক্ষে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়। তবে ওই বাজেটের মধ্যে তাদের সম্মেলনের খরচ সীমাবদ্ধ থাকেনি । কারণ যে বাজেট ধরা হয়েছিলো অনুষ্ঠানের জন্য ওই বাজেট অনেক আগেই সীমা অতিক্রম করেছে। মোট বাজেটের টাকায় ৫০ হাজার মানুষের থাকা, খাওয়া, যাতায়াত ব্যবস্থা হয়নি। আড়াই কোটি টাকার অনেক বেশি খরচ হয়েছে খাওয়া বাবদ। জন প্রতি প্রতি বেলার এক একটি প্যাকেটের খাবার খরচ ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও বিদেশি অতিথিদের পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা খাওয়া, যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেও বড় বাজেট রাখতে হয়েছে। থাকা খাওয়ার বাইরেও রয়েছে নানা ধরনের আপ্যায়ণ। সেই সব অপ্যায়নেও টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও মঞ্চ তৈরি, ব্যানার ফেস্টুন, বিলবোর্ড, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, প্রচার প্রকাশনা খাতেও ব্যয় হয়েছে উল্লেখ্য যোগ্য পরিমাণ। যে বাজেট ধরা হয়েছে এর চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি খরচ হয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে তা দশ কোটি টাকার বেশি হবে, কম হবে না। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মোট ৫০ হাজার নেতা কর্মী হিসাবে ধরা হয়েছে। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি নেতা কর্মী যোগ দিয়েছেন। এত বড় একটা সম্মেলনে ৫০ হাজার লোকের খাওয়া দাওয়া ও যাতায়াত খাতে খরচ আছে। এছাড়াও এর বাইরেও যারা এসেছেন তাদেরকেতো কিছু খাওয়া দাওয়া দিতে হয়েছে।
ওই নেতা বলেন, ৫০ হাজার লোকের খাওয়াতে সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর বাইরে মঞ্চ তৈরিতে খরচ করা হয়েছে কমপক্ষে এক থেকে দেড় কোটি টাকা। প্রচারে এক থেকে দুই কোটি টাকা। আলোকসজ্জাতেও কোটি টাকার কম না।
এর বাইরে যেভাবে অন্যান্য প্রচার, প্রচারণা করা হয়েছে তাতে খরচ হওয়ার হওয়ার কথা দুই কোটি টাকা। এছাড়াও আলোকসজ্জাসহ আরো কত রকম খরচ আছে। অনুষ্ঠানের জন্য বই, সিডিতে খরচ আছে। যদি মঞ্চ ও সাজ সজ্জায় সঠিক হিসাব ধরা হয় তাও মনে হয় মূল বাজেটের চেয়ে বেশি হবে। আর প্রচার ও প্রকাশনাতেও মূল বাজেটের কাছাকাছি খরচ হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো এত টাকা কোথা থেকে এল। আর আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের কাছে যে হিসাব দাখিল করেছে সেখানে তাদের পার্টির ফান্ডে এই বিপুল পরিমাণ টাকা জমা আছে এমনটাই দেখানো হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সেই ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে এত টাকা কোথা থেকে এসেছে?
তিনি বলেন, আবার এও শুনেছি মূল যে বাজেট ধরা হয়েছে ওই বাজেটের টাকাও বিভিন্ন কমিটিকে দেওয়া হয়নি। তাহলে আমার কথা হলো বাজেটের টাকা থেকে নাকি কিছু কিছু করে টাকা বিভিন্ন কমিটিকে দেওয়া হয়েছে। তাহলে সম্মেলনতো শেষ হয়ে যাচ্ছে ওই সব টাকা কোথা থেকে এলো? এটাতো বড় প্রশ্ন আমরা মনে করি এই সম্মেলনের প্রকৃত খরচের ব্যাপারে স্বচ্ছসেই স্বচ্ছানলে সমস্যা।
এদিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দলীয় ফান্ডের থেকে সম্মেলনের জন্য খরচ করা ছাড়াও বিভিন্ন নেতারা, দলের ব্যবসায়ী এমপিরা খরচ দিয়েছেন। আবার আলোকসজ্জার টাকা যতটা না ব্যয় হয়েছে এরচেয়ে বড় একটি অংশ ব্যয় হয়েছে লাইটিংয়ের জন্য নেতাদের বাসা বাড়ি প্রতিষ্ঠান থেকে লাইন নেওয়া হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ এখনও বলতে পারছেন না ঠিক কত পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে। কারণ সম্মেলন শেষে এই ব্যাপারে একটা হিসাব নিকাশ হবে সেখানে ঠিক কোন খাতে কত খরচ হয়েছে তা বোঝা যাবে। এখন ধারনা করা যায় যে বাজেটের বাইরেও খরচ হয়। এটা পার্টি ফান্ড ছাড়াও দলের নেতাদের কেউ কেউ ডোনেট করেন। আবার প্রভাবশালী ,মন্ত্রীরাও একটি বড় অংশ দেন। দুইজন মন্ত্রী বিভিন্ন ভাবে খরচ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা ছিলো বাজের মধ্যেই যাতে ব্যয় সংকুলান হয়। কিন্তু সম্ভব হয়নি। কারণ বাজেটের চেয়ে খরচ বেড়ে গেছে। কাউন্সিলে অতিথির সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি। এছাড়া প্রতিযোগিতা ছিলো কে কার চেয়ে বেশি ভার কাজ দেখাতে পারবেন, নেত্রীর নজর কাড়তে পারবেন এবং তার অবস্থাান তৈরি করতে পারবেন। সেই জন্য সব কিছুইতেই একটা প্রতিযোগিতা ছিলো।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানের জন্য যারা অনুদান দেন সেটা তারা নিজে থেকেই দেন। ডোনেট করেন। এটা কারো কাছ থেকে জোর করে নেওয়া হয় না।
খাওয়ায় যাতে নেতারা ও কাউন্সিলররা সন্তুষ্ট থাকেন সেটাও এটা টার্গেট ছিলো। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ৫০ হাজার লোকের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একেক বেলায় এক জনের খরচ গেছে ৩০০-৪০০ টাকা। খাবারের খাতেও খরচ হয়েছে মূল বাজের বেশি টাকা। খাবারের সঙ্গে আবার ছিলো আরো বিভিন্ন ধরনের পান ও মিষ্টি জাতীয় খাবার। পাঁচ তারকা হোটেল ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটারিং সার্ভিস এই কাজটি করেছে। ডেকোরেটরও ছিলো একাধিক।
একটি অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য থাকে একটা মঞ্চ। কত সুন্দর করে সেই মঞ্চটাকে তৈরি করা ও সাজানো যায়। সেটা করতে হলে অর্থের প্রয়োজন আছে। এবারের মঞ্চ তৈরি করার জন্য তেমন একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যাতে করে সবাই অবাক হয়। এই কারণে যারা মঞ্চ করেছেন তাদের চেষ্টা ছিলো মঞ্চটা এমনভাবে তৈরি করার যাতে করে সেটা জমকালো হয়। সেই জন্য তেমনভাবে তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে সেটাতেও খরচ হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। মঞ্চ তৈরি ও এই খাতের জন্য দলীয় ফান্ড থেকে যে টাকা পেয়েছেন নির্মাণকারীরা তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। এই কারণে নেতাদের কাছ থেকেও তারা টাকা নিয়েছেন। মঞ্চ ও সাজ সজ্জায় এবং আলোক সজ্জায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
সাজসজ্জা উপ কমিটির একটি সূত্রে জানা গেছে, খরচের পরিমাণ তারা এখনও ঠিক করতে পারেনি। কারণ বিভিন্নভাবে খরচ হয়েছে। দলের ফান্ড থেকে টাকা খরচ হয়েছে আবার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও সাজসজ্জার জন্য অর্থ ব্যয় করেছেন। এই কারণে সব হিসাব এখনই করা সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলের সম্মেলনের জন্য নিজ অর্থ দিয়েছেন। এর বাইরে বিত্তশালী নেতা ও মন্ত্রীরাও টাকা দিয়েছেন।
বিদেশি যেসব অতিথিরা এসেছেন তাদেরকে পাঁচ তারকা হোটেলে রাখা হয়েছে, তাদের যাতায়াত, খাওয়া থাকার জন্য বড় অংকের অর্থ খরচ হয়েছে। দলের ফান্ড থেকে যে টাকা এই খাতে দেওযা হয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রীদেরও কয়েকজন এই খরচ দিয়েছেন। ৫০ জন অতিথি এসেেছন বিদেশ থেকে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা অনেক বেশি। আমরা আমাদের সম্মেলনে ব্যয় করেছি ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা। আর তারা ব্যয় করছে আমাদের চেয়ে কত বেশি। আসলে এত টাকা কোথা থেকে আসে সেটা জনগণের জানা উচিত।
তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে এটা গোটা দেশবাসী দেখেছে। তিনি বলেন, আমি সঠিক অ্যামাউন্ট বলতে পারবো না। আমাদের চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশি। এটা বলতে পারি।
বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান তার নাম না প্রকাশ অনুরোধ করে বলেন, এই সম্মেলনের বিভিন্ন দিক হিসাব করে আমি দেখছি তাতে খরচ হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি। এই টাকাতো আওয়ামী লীগ ফান্ড থেকে আসছে না। কিছু আসছে। বাকিটা কি সবই ডোনেশন নাকি অন্য খাত থেকেও এসেছে।
তিনি বলেন, এত বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে এত বড় সম্মেলন করছেন তারা আর আমাদেরকে একটা মঞ্চও দেওয়া হয় না একটা হলেও দেওয়া হয় না। এটাতো ঠিক না।
তিনি বলেন, আমি মনে করি জনগণ এই সব এক সময়ে জানতে চাইবে। এছাড়া আওয়ামী লীগ এনবিআরের কাছে ও নির্বাচন কমিশনের কাছে যে হিসাব দাখিল করবে সেখানে তারা এই সম্মেলনে খরচের হিসাব দেয় সেটাও দেখতে হবে।
আমরা একটা কোন রকম পোস্টার করেছিলাম। তারা কি প্রচার করেছে। বিজ্ঞাপন চিত্র প্রচার, কত রকম প্রচার করেছে। এছাড়াও তাদের উপহার সামগ্রীও কম ছিলো না। অনেক কিছুই দিয়েছে কাউন্সিলরদের ব্যাগে। তারা কাউন্সিল করে নেতা কর্মীদের চাঙ্গা করার সুযোগ পেল। আমরা তা পেলাম না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কত কম টাকায় একটি সম্মেলন করেছি। আমরা আমাদের খরচের হিসাবও কমিশনে দিবো। আবার রাজস্ব বোর্ডেও দিবো। কিন্তু তারা সঠিক হিসাব দিতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এত টাকা খরচের পর বলাই হতে পারে দলের নেতারা দিয়েছেন। কিন্তু সেটাওতো একটা হিসাবেরই টাকা। সূত্র: আমাদের সময়.কম