শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে সংলাপে রাজি নয় সরকার

বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে সংলাপে রাজি নয় সরকার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
বিএনপির সঙ্গে সরকার কোনো ধরনের সংলাপ করতে রাজি না। সরকার মনে করছে সংলাপের সুযোগ নেই। বিএনপি সেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বিএনপি মনে করছে, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। এ কারণে জনগণের মতামত উপক্ষো করছে। তারা ভারতকে দেওয়া কমিটমেন্ট রক্ষা করছে। নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক দল অপর দলের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, বিএনপির প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক অন্তত বিএনপির সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিবেন। কিন্তু সেটাতো তিনি নিচ্ছেন না। বরং বিএনপির ভুল খুঁজে খুঁেজ সেটা সংশোধন করার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতা বলেন, বিএনপি যদি বসে বসে স্বপ্ন দেখে সরকার ও আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনে আনার জন্য সংলাপ করবে ও নির্বাচনের জন্য বর্তমানের বিধান পরিবর্তন করবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। হয় বিএনপি নির্বাচনে আসুক আর না আসুক। বিএনপির সামনে উপায় থাকবে নেই নির্বাচনে না এসে। পরিস্থিতি এমন হবে যে তারা একপর্যায়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য নির্বাচনে আসবে ও সরকারের সব কিছুই মেনে নিবে। এখন তারা যত কথাই বলছে এসব কথার কোনোটিই ধোপে টিকবে না। নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কিছু করবেন এমনটি তারা প্রত্যাশা করলেও সে রকম হবে না কারণ তিনি দলের সভাপতির সিদ্ধান্তের বাইরে একচুলও যেতে পারবেন না। তাই আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং তার অধীনেই হবে। আন্তর্জাতিক মহল কিংবা কোনো মহলের চাপকেই আমরা গুরুত্ব দেব না। আমাদের দেশের নির্বাচন আমরাই করব। বিদেশিরা কেন এনিয়ে কথা বলবেন। আমরাতো তাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে যাই না। তাছাড়া বিএনপির সঙ্গে নতুন করে কোনো সমঝোতা হবে না। সংলাপ করলে সময় ব্যয় হবে। কালক্ষেপণ হবে। আর তারা সংলাপে বসার ছলে নানা শর্ত দেওয়ার সুযোগ পাবে। তেমন কোনো সুযোগ তাদের দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা যথাসময়ে নির্বাচন করব বার বার বলে আসছি। দুই বছর দুই মাস সময় আছে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন করা সংবিধানের নিয়ম। দলের কাউন্সিল থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা অলরেডি প্রস্তুতি শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের সার্বিক প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণ আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে ছিল আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, সে ব্যাপারে একটা দিকনির্দেশনার জন্য। তারা কোনো দিকনির্দেশনা দেননি। তারা কাউন্সিল করেছে ঠিকই। কিন্তু এই কাউন্সিল থেকে জনগণ কিছু পায়নি। তিনি অভিযোগ করেন,  ভরাডুবির ভয়ে আওয়ামী লীগ আলোচনায় বসতে চায় না। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসেছে। আওয়ামী লীগকে বার বার আহ্বান জানানো হয়েছে ও অনুরোধ করা হয়েছে আলোচনায় বসার জন্য। কিন্তু তারা বসেনি। তিনি বলেন, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, এ জন্য  জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা ভারতকে দেওয়া কমিটমেন্ট রক্ষা  করছে। সরকার মানুষের রক্তের উপর দিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। কেবল ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য কাজ করছে।

বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করবে সরকার এটা এখনো বিএনপি প্রত্যাশা করে। এ ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচন করতে চায় তাহলে এখন সংবিধানে যা আছে তা পরিবর্তন, সংশোধনের সুযোগ নেই। সংবিধানেই বলা আছে নির্বাচন কমিশন করার ব্যাপারে। বিএনপিকে তা মেনে নিতে হবে। তা না মেনে তারা যদি পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কোনো কনফিউশন তৈরি করে তাহলে নিজেরা নিজেদের ভুলে ফাঁদে পড়ে যাবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা আশাবাদী সরকার এখন যত কথাই বলুক না কেন তারা আলোচনায় বসবে। বসতেই হবে। তবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি কী? বিএনপির সঙ্গে কেন আলোচনা করতে হবে? বিএনপি কী আলোচনা বা সংলাপের পথ খোলা রেখেছে? তারা তো দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কোকোর লাশ যেদিন এলো, সেদিনই তো ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে মনের দরজা-সংলাপের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেছেন, যেদিন গণভবনে আমন্ত্রণ জানানো হলো, খালেদা জিয়া যদি  সেদিন প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিতেন, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনেও তাদের অংশগ্রহণ থাকতো। এদেশে গণতন্ত্রের ইতিহাস ভিন্নভাবেও লেখা হতে পারতো। অভিযোগের কোনো কারণ থাকতো না। এখন তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে। তারা নির্বাচনও করেনি আবার আন্দোলনেও ব্যর্থ। নালিশ আর অভিযোগ করছে। পেশাগত তাদের কিছু নেই।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কেমন করে গঠন করা হবে। কিভাবে সার্চ কমিটি করা হবে এগুলো সব বলা আছে। সে হিসেবেই তা করা হবে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। এনিয়ে বিএনপি যত কথাই বলুক না কেন তাদের মনে রাখতে হবে যা হবে সংবিধানের মধ্যেই।

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য কমিশনের সেই কর্তৃত্বপূর্ণ ও স্বাধীন ভূমিকা থাকবে, যদি আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিঘœ সৃষ্টি না করি, সহযোগিতা করি তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা তো নেই। সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি কীভাবে করা যায়। সংবিধানে যা আছে তাই করব।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবীর রিজভী বলেছেন, সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। এজন্য সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন দায়ী। কাজী রকিবউদ্দিনের নির্বাচন কমিশন এমন ন্যক্কারজনক দালালি করছে, বিশ্বে এমন নজির নেই। যার দৃষ্টান্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংসদ এ সরকারের সিলমোহরের কাজ করছে। এ সমস্ত জায়গাগুলো সরকারের অপকর্ম অপরাধকে ন্যায্যতা দিয়ে সিল দেয়। সেখানে সরকারের দলের লোকজন বসিয়ে এটা করা হয়েছে। তিনি  বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জনগণকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর সরকারকে ও আওয়ামী লীগকে সংলাপে বসার উদ্যোগ নিতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।