বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ঢাকা সফরকালে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বৈঠক করবেন কিনা তা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতেও সন্দিহান ছিল বিএনপি। এ জন্য বেশ চিন্তিতও ছিল দলটি। কিন্তু তাদের চিন্তার মেঘ কেটে গেছ। বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর দলটি অনেকটা আত্মহারা হয়ে ওঠে। তারা এখন নতুন হিসেব-নিকেশ নিয়ে ব্যস্ত।
সুষমা স্বরাজের কার্যসূচিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক নেই এমন সংবাদ প্রকাশিত হবার পড় নড়েচড়ে বসে দলটি। মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, রিয়াজ রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধূরী।
বৈঠক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে যেকোনোভাবেই হোক সুষমার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলেন। এর প্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক নেই তাই বিজেপির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমার সঙ্গে বৈঠক নিশ্চিত হওয়ায় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক জোরদার ও চাওয়া-পাওয়ার হিসেব-নিকেশ শুরু করেছে দলটি।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সুষমার সঙ্গে চেয়ারপারসনের বৈঠকের বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলো। বৈঠকে কি কি বিষয়ে আলোচনা হবে তার হোমওয়ার্কও সেরে রাখা হয়েছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগেই সংবাদপত্রে বৈঠক না হওয়ার খবর বের হয়ে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়ে দলটি।
এ প্রসঙ্গে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদ্স্য শামসুজ্জামান দুদু বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিজেপির ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেস, আর কংগ্রেসের ঐতিহাসির বন্ধু আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক কারণেই বিজেপি সরকারের আঁচলে স্থান পাবে না বর্তমান সরকার। এর ফসল যাবে বিএনপির ঘরেই। তবে সেক্ষেত্রে বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।’
এদিকে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে ভোটবিহীন অনির্বাচিত সরকারের সম্পর্ক অবশ্যই ভালো হতে পারে না-এমনটি ধরে নিয়েই দুর্বার আন্দোলনের দিকে এগুচ্ছে বিএনপি ও মিত্রদলগুলো।
বিএনপিপন্থি এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে ইতোমধ্যেই তার একটি খসড়া করেছে দলটি। এর মধ্যে ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন, বিরোধী দলের প্রতি সরকারের দমন-পীড়ন নীতি, দেশব্যাপী সরকারি দলের সন্ত্রাস নৈরাজ্য, একটি বিশেষ বাহিনীকে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী অপহরণ, গুম-হত্যার মিশনে নামানোসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় খসড়ায় রাখা হয়েছে।
তিস্তা চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন, সীমান্তে শান্তিরক্ষা, ভারতে মুসলিমদের প্রতি সদয় হওয়া ও ছিটমহল ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান এবং টিপাইমুখ বাঁধ না করার অনুরোধ জানানো হবে বিএনপির পক্ষ থেকে।
ভারতের মতো বাংলাদেশেও একটি নির্বাচিত সরকার যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে এরকম পরিবেশ সৃষ্টিতেও দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী এই দেশটির সহায়তা চাওয়া হতে পারে।
গত ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন চরমে পৌঁছে। মার্কিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো পাতানো নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। চীনের মতো দেশ যারা নির্বাচন নিয়ে নাকগলায় না তারাও এই নির্বাচনের বিরোধিতা করেছে।
কিন্তু একমাত্র প্রতিবেশী দেশ ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন জুগিয়েছে। বিএনপির ভাষায়, যা ছিল সম্পূর্ণ কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত।
বিএনপির অভিযোগ, ২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সাতদিনের সফরে ভারত গেলে তাকে সাক্ষাৎ দেননি কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধি। তার সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মাত্র ২৫ মিনিটের সাক্ষাৎ দিয়েছেন নির্ধারিত দিনেরও দু’দিন পর। তখনই বিএনপির সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব স্পষ্ট রূপ নেয়। ওইসময় থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়লেও বিজেপির সঙ্গে বিএনপি সুসম্পর্ক গড়ে তোলে।
জানা যায়, বেগম জিয়ার ভারত সফরকালে লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা এই সুষমা স্বরাজ, লালকৃষ্ণ আদভানীসহ বিজেপি নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছিলেন। বিজেপির পক্ষ থেকে ওইসময় বিএনপির তরুণ নেতৃত্ব তারেক রহমানের নানা পদক্ষেপ ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার জন্য অভিনন্দন ও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা সুষমা স্বরাজ। এমন আভাসও দেয়া হয়েছিল যে, বিজেপি সরকার গঠন করলে পররাষ্ট্রনীতি মেনে প্রতিবেশী দুই দেশ এবং দুই দল ‘বিজেপি-বিএনপি’ দু’দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে কাজ করবে।
সেদিনের বৈঠকের সূত্র ধরেই সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভার নির্বাচনে বিজেপির দরজার কাছে যখন বিজয় কড়া নাড়ছিল তখনই বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া অভিনন্দন জানিয়েছেন। উল্লসিতও হয় দলটি (বিএনপি)।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তিনদিনের সফরে বুধবার দুপুরে ঢাকা আসছেন ভারতের বিজেপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।