শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > বাড়ি ছাড়ছেন না মওদুদ সরকারের পদক্ষেপ দেখেই আইনি লড়াইয়ে যাবেন

বাড়ি ছাড়ছেন না মওদুদ সরকারের পদক্ষেপ দেখেই আইনি লড়াইয়ে যাবেন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
গুলশানের বাড়ি ছাড়ছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আপিল বিভাগের রায়ের পর গুলশানের বাড়ি নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেই অপেক্ষায় আছেন তিন। সরকারের পদক্ষেপ দেখেই তিনি আইনি লড়াইয়ে যাবেন। দুই-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবেন বলেও জানান তিনি। তবে এখনই এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি। রায়ের পর রবিবার দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘রায়ে তো সরকারকে স্বত্ব-অধিকার দেওয়া হয়নি। আমরা মূল মালিকের সঙ্গে বোঝাপড়া করব। তার ছেলে করিম সুলায়মান আছেন। এছাড়া আদালতও কিছু পর্যবেক্ষণ দেবেন।’ এ নিয়ে আইনের আশ্রয় বেবেন বলেও জানান তিনি।

মওদুদ আহমদের গুলশানের বাড়ি নিয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ কী হবে, জানতে চাইলে মওদুদ আহমদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস-এর সদস্য ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ বলেন, ‘এ নিয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। রিভিউ খারিজ হওয়ার মাধ্যমে আপাতত মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদ মালিকানা হারালেন এটা সত্য। তবে এতে সরকারের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাড়িটি যাদের কাছ থেকে মনজুর আহমদ কিনেছেন, সেই দলিল তো রয়েছে। আদালতের রায়ে যদি তিনি মালিকানা হারিয়েও থাকেন, তাহলে এর মালিক ওয়ারিশসূত্রে করিম সোলায়মান। কিন্তু‘ তিনি বাংলাদেশে নেই। অনেক বছর ধরে এ বাড়ির দখলে রয়েছেন মনজুর আহমদের ভাই মওদুদ আহমদ। কোনও অবৈধ দখলদারকেও ছয়মাসের নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ করা যায় না। বিষয়টি এখন নির্ভর করছে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেই অনুযায়ী আমরাও আইনি পদক্ষেপ নেব। মূল মালিকের সঙ্গে যে দলিল, সেটা তো আদালত অবৈধ বলেননি। সেটা এখনও বহাল আছে।’

আপিল বিভাগের রায়ের পরও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাড়ি না ছাড়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আরেক সিনিয়র আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রায়ের পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যে মনে হয়েছে তারা সিভিল মামলায় যেতে পারেন। কারণ এ মামলাটি হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। দুদকের আইন অনুযায়ী কোনও সম্পদ দুর্নীতির মাধ্যমে কেউ অর্জন করলে সেই সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে। আমি যেটা শুনেছি মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদ এই বাড়ির মালিক। এটা নিয়ে কোনও আপত্তি থাকলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে কিংবা সরকার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন। বাড়ির বৈধ মালিকানা দেখার দায়িত্ব হচ্ছে দেওয়ানি আদালতের। সেক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার তো এখানে কার্যকর হয়নি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই হয়তো মওদুদ আহমদ আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।’

গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল আহাদ বলেন, ‘মওদুদ আহমদের বাড়ি নিয়ে আদালত কিংবা সরকারের কোনও পর্যায় থেকে কোনও নির্দেশনা ও কাগজপত্র পাইনি। তাই এখন পর্যন্ত বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে নেই।’

প্রায় দেড় বিঘা জমির ওপর বানানো গুলশান-২-এর ১৫৯ নম্বর বাড়িটিতে প্রায় তিন যুগ ধরে আছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। কিন্তু এই বাড়ির মালিকানা এখন আর তার ভাই মনজুর আহমদের নামে থাকছে না। ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করতে হাইকোর্ট রায় দেন। ২০১৬ সালের ২ আগস্ট মনজুর আহমেদের নামে মিউটেশন করতে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। পরে তারা রিভিউ করলে তাও রবিবার খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। এর আগে বাড়িটি অবৈধভাবে দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ।

মওদুদ আহমদের বাড়ি না ছাড়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাড়ি তাকে ছাড়তেই হবে। বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখন সরকারের। মওদুদ আহমদ তার ভাইয়ের নামে বাড়িটির মূল মালিকের সঙ্গে যে চুক্তি দেখিয়েছিলেন, তার মামলা আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে যায়। সেই রায়ে বলা হয়েছে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ও চুক্তিপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।’ বাংলা ট্রিবিউন