শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বাসের ৩০% টিকিট অলিখিত কোটায়

বাসের ৩০% টিকিট অলিখিত কোটায়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: রাজধানীর তিনটি প্রধান বাস টার্মিনাল ও তার বাইরে পাঁচ শতাধিক কাউন্টারে এবারের ঈদযাত্রার ৩০ শতাংশ আসনই ‘কোটায়’ বিক্রি হয়ে গেছে। সংসদ সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তা, পরিবহন নেতাদের নামে ৩০ শতাংশ টিকিট সংরক্ষণ করা হয় অলিখিত কোটায়। ঈদে বাড়ি ফেরার মূল স্রোত শুরু হবে আগামী মঙ্গল ও বুধবার।

তবে রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনালে (গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ) নামিদামি পরিবহনের বাসগুলোয় এ দুই দিনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ঈদযাত্রায় প্রতিদিন উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করবে প্রায় আড়াই হাজার বাস।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ন্ত্রণাধীন এই টার্মিনাল ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন স্ট্যান্ড থেকে ঈদের যাত্রী পরিবহন করা হবে। গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে উত্তর-দক্ষিণের এসব রুটের বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ঈদ উদ্যাপিত হবে আগামী শুক্রবার। তার আগে মঙ্গল ও বুধবারের টিকিটের চাহিদা এবার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু গত বৃহস্পতি থেকে আগামীকাল সোমবারের টিকিটের চাহিদা একেবারে কম।

পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মঙ্গল ও বুধবারের টিকিট বিক্রি শুরুর দিনই শেষ হয়ে গেছে। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব টিকিটের ৩০ শতাংশই সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। নির্ধারিত দিনে কাউন্টারে প্রকাশ্যে বিক্রি হয়েছে ৭০ শতাংশ টিকিট। সেগুলোও বিক্রি হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মো. সালাহউদ্দিন গতকাল শনিবার দুপুরে বলেন, ‘প্রতিদিন এ টার্মিনাল থেকে বাস চলবে আড়াই হাজার। ৪০ থেকে ৫৭ আসনের এসব বাসে ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের যাত্রীই বেশি। সবাই এ সময়টাতেই বাড়ি যেতে চায়। এ ক্ষেত্রে টিকিট পেতে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। সবাইকে কি আর দেওয়া যায়? সব বাসে মালিক নির্দেশনা দিয়েছেন, জরুরি অবস্থায় যাতে কেউ টিকিট পেতে পারে তার জন্য যেন আসন সংরক্ষণ করা থাকে। এ জন্য প্রতিটি বাসেই আসন রাখা হয়।

প্রশাসন, এমপি বা এ ধরনের ব্যক্তিরা নির্দেশ দিলে তো যেকোনোভাবে ম্যানেজ করে দিতে হয়। সেই ক্যাপাসিটি আমাদের আছে।’ তবে এ জন্য বেশি আসন রাখা হয় না। তবে একটি বাসে কতটি আসন সংরক্ষণ করা হয় তা তিনি বলতে চাননি।

গত কয়েক দিন গাবতলী টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনালে সাধারণ মানের বাসের কাউন্টারগুলো প্রায় ফাঁকা। কিন্তু অভিজাত শ্রেণির বাস যেমন শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সাকুরা পরিবহনের মতো কম্পানির বাসের টিকিট পেতে যাত্রীদের ভিড় লেগেই আছে। যদিও ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট তারা পাচ্ছে না।

বাধ্য হয়ে তার আগে বিভিন্ন দিনের টিকিট কিনছে। হানিফ পরিবহনে বরিশাল যাওয়ার জন্য ২০ সেপ্টেম্বরের (আজকের) একটি টিকিট চেয়ে পর পর দুই দিন টার্মিনালে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে রাশেদ নিজামকে। তিনি বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন, বাসের আসনগুলো আগেই বুকিং হয়ে গেছে। গতকাল শ্যামলী পরিবহনের বাসগুলোয় টিকিট নেই-টিকিট নেই রব শোনা গেল বালুর মাঠের কাউন্টারের সামনে। সেখানে টিকিটের জন্য লাইন ধরছিলেন আল আমীন। রাজশাহী যাওয়ার টিকিট তিনি পাচ্ছেন না, কারণ জানতে চেয়ে শুনেছেন টিকিট আগেই বুকিং হয়ে গেছে।

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এবার ঈদযাত্রা শুরু হবে মূলত আগামীকাল সোমবার থেকে। এই টার্মিনাল থেকে মঙ্গল ও বুধবারের টিকিট শেষ হয়েছে দিন কয়েক আগেই। টিকিট প্রত্যাশীরা কাক্সিক্ষত দিনের টিকিট পাচ্ছেন না। জানা গেছে, ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-জামালপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ-এসব বিভিন্ন রুটের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। মহাখালী টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালামের কাছে কোটা প্রথার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাবতলীতে এই কোটা প্রথা আছে। আমাদের টার্মিনালে প্রতি বাসে চার-পাঁচটি টিকিট সংরক্ষণ করে থাকি। এটা বহু আগে থেকেই করা হচ্ছে।’

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টার্মিনালে বাসপ্রতি কমপক্ষে ১৫টি আসন সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এসব বাসের অধিকাংশই ৪১ আসনের। ঢাকা-বগুড়া রুটে একতা পরিবহন চলাচল করে ৩৮টি ও ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করে ২০টি। আবুল কালাম নিজেই এগুলোর মালিক। এসব বাসেও আসন সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আবুল কালাম বলেন, পরিবহন মালিক সমিতির বন্ধুবান্ধব বা পুলিশ প্রশাসন বা অন্য কোনো ভিআইপি টিকিট চাইলে আমরা কী করব? তবে সংরক্ষণ করা টিকিটের চাহিদা না থাকলে তা কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, নিয়মিত যাত্রীদের অনুরোধেই বেশির ভাগ কাউন্টারে আগেই বুকিং করা হয় ঈদের টিকিট। তার সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য, রাজনীতিক, পুলিশ, প্রশাসন ও সাংবাদিকদেরও অনুরোধ আসে। এ কারণে কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করেও সাধারণ যাত্রীরা কাক্সিক্ষত টিকিট পায় না। উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন রুটে ঈদের আগের টিকিটের চাহিদা এখন তুঙ্গে।