রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বাণিজ্যমেলায় ভ্যাট ফাঁকি

বাণিজ্যমেলায় ভ্যাট ফাঁকি

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় চলছে ভ্যাট ফাঁকি। এব্যাপারে মেলায় আগত স্টল মালিকরা মানছেন না কোন নীতিমালা। ভ্যাট দিচ্ছেন খেয়ালখুশিমতো। ইতিমধ্যে মেলার ১৮দিন অতিবাহিত হয়েছে। প্রতিদিন ভ্যাট পরিশোধের নিয়ম থাকলেও অনেক স্টল মালিক এ পর্যন্ত ভ্যাট বাবদ রাজস্ব বোর্ডকে কোন প্রকার টাকা পরিশোধ করেননি। এ নিয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র মালিকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে রাজস্ব বোর্ড। অন্যদিকে বিদেশী ব্যবসায়ীদের ভাট পরিশোধ করতে হচ্ছে দুই দফা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকিয়ে রয়েছেন মেলার শেষ দিনের অপেক্ষায়। মেলায় অবস্থিত কাস্টমস অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের বাণিজ্যমেলায় খাদ্যসামগ্রীর জন্য ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে বিক্রয়মূল্যের ৬ শতাংশ। যদি খাবারের স্টলে এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করা হয় তবে ভ্যাটের পরিমাণ হবে বিক্রয়মূল্যের ১৫ শতাংশ। সাধারণ পণ্যের ভ্যাট বিক্রয়মূল্যের ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। স্টলগুলোতে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিও) এবং পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও খুব কমসংখ্যক মালিকই তা ব্যবহার করছেন। আর বেশির ভাগ স্টলে কোন প্রকার ক্যাশ মেমো ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে ভ্যাট প্রদানের সময় স্টল মালিকরা বিক্রি কম দেখিয়ে ভ্যাট পরিশোধ করছেন। বিক্রয়ের পরিমাণ জানার উপায় নেই কাস্টমস কর্মকর্তাদের। এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ভ্যাট জমা নেয়ার কাজটি করছে সোনালী ব্যাংক। সেখানকার প্যাভিলিয়ন ম্যানেজার মো. ফারুক আহমদ জানান, গত বছর প্রথম ১৮ দিনে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৯২ টাকা। এবছর প্রথম ১৮ দিনে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪১ লাখ ২১ হাজার ১ টাকা। গত বছরের তুলনায় এই সময়ের মধ্যে রাজস্ব আদায় কমেছে ২ লাখ ২৫ হাজার ১৯১ টাকা। এছাড়া, এবার প্রথম সপ্তাহের সাত দিনে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ১৭২ টাকা। আর দ্বিতীয় সপ্তাহের সাত দিনে আদায় হয়েছে ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৯১ টাকা। আর গত বছর প্রথম সপ্তাহে আদায় হয়েছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার ২৬২ টাকা এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে আদায় হয় ১৯ লাখ ৩১ হাজার ১৩১ টাকা। সে হিসেবে চলতি সপ্তাহের শেষে এই ব্যবধান আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা রাজস্ব কর্মকর্তাদের। গতবার মেলায় সারা মাসে মোট ভ্যাট আদায় হয়েছিল ১ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার ২০৫ টাকা। বর্তমানে যে হারে ভ্যাট আদায় হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে গতবারের সমান ভ্যাট আদায় অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। মেলায় অবস্থিত কাস্টমস অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, এবার মেলায় দর্শক বেশি এলেও বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক কম। এছাড়া, গতবারের তুলনায় এবার স্টল সংখ্যাও কম। অনেক স্টল শেষ পর্যন্ত চালু না হওয়ায় ভ্যাট আদায় কিছুটা কম হয়েছে। এ জন্য সার্বক্ষণিক স্টল মালিকদের উৎসাহ দেয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে শেষ পর্যন্ত গতবারের চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি। এখন পর্যন্ত ভ্যাট আদায়ের হার কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, সাধারণত মেলার শেষ দিকে গিয়ে বেশি বিক্রি হয়। এসময় রাজস্ব আদায়ের হার অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এবার দেরিতে মেলা শুরু হওয়ায় শেষদিকে প্রচণ্ড গরম শুরু হয়ে যাবে। তাছাড়া, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে বইমেলা শুরু হয়ে গেলে মানুষের নজর সেদিকেই চলে যাবে। এতে আশানুরূপ বেচা-বিক্রি না-ও হতে পারে। তবে রাজস্ব কর্মকর্তারা সারাক্ষণ মেলায় অভিযান চালিয়ে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করছেন বলেও তারা জানান। এদিকে বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে দেশে ঢোকার সময় ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়েছে বিদেশী স্টলের মালিকদের। আবার প্রতিদিনের বিক্রি শেষে ভ্যাট পরিশোধ করছেন তারা।
মেলায় কর্তব্যরত কাস্টমস কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন আলী সরকার বলেন, আমরা নিয়মিত প্যাভিলিয়ন ও স্টলের মালিকদের ভ্যাট পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছি। কিন্তু অনেক মালিকই এবিষয়ে কর্ণপাত করছে না। যারা ভ্যাট প্রদান করবে না তাদের রাজস্ব বোর্ড প্রত্যয়নপত্র দিবে না। আর প্রত্যয়নপত্র ছাড়া মেলা কর্তৃপক্ষ অগ্রিম জামানতের টাকা ফেরত দেবে না। বিদেশীদের দুই দফা ভ্যাট পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশীদের মেলায় ভিন্ন কোন নিয়ম নেই। তাদের অন্যদের মতো ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।