রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > বাজেট ভাবনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি

বাজেট ভাবনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি

শেয়ার করুন

রফিক রাফি, সমীরণ রায় ও আদিত্য রিমন
বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

আগামী ২০১৪ অর্থবছরের বাজেট আগামীকাল বৃহস্পতিবার পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এর ঠিক আগ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতারা মতামত তুলে ধরেছেন। বাংলামেইলের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসন্ন বাজেটে নির্বাচনী ইশতেহার পূর্ণ করা হবে বলে জানানো হয়। একই সঙ্গে বর্তামান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে প্রতিবারের মতো দেয়া ছায়া বাজেট থেকে এবার বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

এই বজেটকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলেছে জনগণের শতভাগ চাহিদা পূর্ণ না হলেও নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ৯০ শতাংশ আশা পূরণ হবে। যা একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে জনগণের কল্যাণে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকবে। দল ও সরকারের ২০২১ ভিশন ও সম্ভাবনাময় বাজেট হবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তালমিলিয়ে দ্রব্যেমূল্য বৃদ্ধি পেলেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

নোতার বলেছেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে একটি জনমুখী শিক্ষা, কৃষি ও চিকিৎসাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এ বারের বাজেটে যে ঘাটতি ধরা হয়েছে তাতেও দেশের অর্থনীতির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। আর বাজেটের লক্ষ্যমাত্রায় যে আয় ধরা হয়েছে তাও কল্যাণমুখী হবে। এছাড়া ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের টাকা দিয়েই ঘাটতি মেটানো সম্ভব বলেও জানিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত এই বাজেট অনুমোদন করেছেন। এডিপির আকার, রাজস্ব আয়, ব্যাংক ও বিদেশি ঋণের হিসাব ধরে এটি চূড়ান্ত হয়েছে। এ বাজেটে সব মিলে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এদিকে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। আর ঘাটতি রাখা হয়েছে ৬৭ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলামেইলকে বলেন, ‘২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট হবে গণমুখী, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার বাজেট।’

তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বলেন, ‘জনকল্যাণমুখী বাজেটে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই বাজেটে আশা করি দ্রব্যমূল্য এমন কোনো পর্যায়ে পৌঁছাবে না যা জনগণের জন্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাবে।’ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী জনগণের চাহিদার অন্তত পক্ষে ৯০ শতাংশ পূরণ হবে বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘এবারের বাজেট গত বছরগুলোর চেয়ে ভালো হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকেই হবে। আশা করি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যা ২০২১-এর ভিশন বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।’

আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘এই অর্থবছরের বাজেটকে উচ্চাবিলাশী বাজেট বলবো না। এটা হবে সম্ভাবনাময় একটি বাজেট। যদি সততার সঙ্গে বলতে হয়, তাহলে বলবো সরকারের ২০২১ সালের ভিশন বাস্তবায়ন হবে। যা জনগণের শিক্ষা, কৃষি ও চিকিৎসাসহ জনস্বার্থ নিশ্চিত করবে। এক কথায় বলতে গেলে জনমুখী সবচেয়ে বড় বাজেট ২০১৪-১৫ অর্থবছরে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, ‘এবারের বাজেট কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা এই তিনটি জিনিসের ওপর নির্ভর করবে। এছাড়াও দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে বিষয়টিও উঠে আসবে। যা হবে জনগণের মঙ্গলের জন্য। তবে দ্রব্যমূল্য বিষয়টি আশা করি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর যদিও বাড়ে তা আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে বাড়তে পারে।’

এদিকে, এ সরকারের মেয়াদে আর ছায়া বাজেট দেবে না বিএনপি। দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ও চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের প্রেসউইং সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নবম জাতীয় সংসদের বাজেট ঘোষণার আগে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বাজেট ভাবনা শিরোনামে ছায়া বাজেট দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাজধানীর শেরাটন হোটেলের বল রুমে সে অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাজেটে বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয় ও কিছু সুপারিশও রাখা হয়, যদিও সরকার সেসব গ্রাহ্য করেনি। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদের এ ‘অবৈধ’ সরকারের মেয়াদে আর ছায়া বাজেট দেবে না বিএনপি।

গত ২৪ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে আইনজীবী সমাবেশে বাজেট ভাবনা না দেয়ার ইঙ্গিত দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘অবৈধ সরকারের বাজেট পাস করার অধিকার নেই। এটি বাজেট বলে গণ্য হবে না। এর জন্য আজ না হয় কয়েকদিন পর জবাবদিহি করতে হবে। কারণ এই সংসদে জনপ্রতিনিধি নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে জনগণ যায়নি, কুকুর বসা ছিল।’

এ যুক্তিতে বিএনপি মনে করে, এই সরকার অবৈধ, সংসদ অধিবেশনও অবৈধ। যে সংসদকে জনগণ মূল্যায়ন করে না সেই সংসদে বাজেট পেশ ও পাসের কোনো অর্থ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির বাজেট ভাবনা তৈরির সদস্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিএনপি এই সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাই অবৈধ সরকারের সবই অবৈধ। তাই বাজেট ভাবনা অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তাছাড়া গত পাঁচ বছর বিরোধী দলে থাকাকালে বাজেট ভাবনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দিক তুলে ধরলেও সরকার ওই ভাবনা থেকে কোনো কিছুই গ্রহণ করেনি।’

চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বাংলামেইলকে বলেন, ‘যেহেতু বিএনপি এই সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে, তাই এই সরকারের সবকিছুই অবৈধ। তাই এবার বিএনপি চেয়ারপারসন ছায়া বাজেট দেবেন না। সেরকম প্রস্তুতিও নেই।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুক এ ব্যাপারে বাংলামেইলকে বলেন, ‘কীসের ছায়া বাজেট? এই সরকার অবৈধ। বিএনপি চেয়ারপারসন তো বলেই দিয়েছেন এই অবৈধ সরকারের বাজেট পাসের কোনো অধিকার নেই। তাই এই সরকারের মেয়াদে কোনো বাজেট ভাবনা দেবে না বিএনপি। এই সরকারের বাজেট দেয়ার কোনো অধিকার নেই।’
বাংলামেইল