ওসমান আল হুমাম
জেলা প্রতিনিধি ॥
কক্সবাজার: মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত দুদিনে জেলেদের বোটে করে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ দেড় থেকে আড়াই হাজার ফোর্স বাংলাদেশ সীমান্তে মুভমেন্ট করছে। গত কয়েকদিন আগেও সীমান্তের এত কাছে কোন বার্মিজ বর্ডার আউটপোস্ট ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে বার্মিজ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পোশাকে সেখানে বার্মিজ সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্হান করছে। বাংলাদেশের পক্ষে এখনো সীমান্তে সৈন্য সংখ্যা বাড়ানো না হলেও ৩৪ বিজিবি’কে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে, এবং সীমান্ত জুড়ে টহল আরো বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজারের লাগোয়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে বাইশফাঁড়ি এলাকায় মিয়ানমার সেনারা তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ী চৌকি স্থাপন করায় কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
সোমবার সীমান্তে নজর রাখেন এমন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়, মিয়ানমারে অভ্যন্তরে সমাবেশে সন্দেহজনক গতিবিধি সেনাদের উপস্থিতির কারণ জেনেই সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি।
জানা যায়, সীমান্তের মিয়ানমারের এই ধরণের উস্কানিমূলক আচরণে শূন্যরেখায় অবস্থানরত হাজার হাজার রোহিঙ্গা ও সীমান্তের এপারের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার-৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, আমরা আমাদের টহলসহ কার্যক্রম আরো জোরদার করেছি। সীমান্তে সবাইকে সতর্ক অবস্থানে রেখেছি। এ ব্যাপারে কোনোরকম নতুন অনুপ্রবেশসহ কোনো ঘটনা ঘটলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। ওদের এলাকায় সন্দেহজনক গতিবিধিসহ সেনাদের উপস্থিতি আছে, সেটি জেনেছি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ বলেন, দ্বীপের বরাবরের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমারের জলসীমানায় বড় বড় জাহাজ দেখা যাচ্ছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফয়সল হাসান খান বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনা সমাবেশ ও তাদের সন্দেহজনক গতিবিধির কথা জেনেছি। তবে সীমান্তে সেনা টহল বৃদ্ধির বিষয়টি সত্য না। সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
গত শুক্রবার হঠাৎ করে সীমান্তে মিয়ানমার সেনাদের সন্দেহজনক গতিবিধির মধ্যে রোববার ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে সীমান্তে দেশটির সেনা টহলের বিষয়ে ঢাকার উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, রাখাইনের আরাকান আর্মির সঙ্গে যে সংঘাত চলমান, তার অংশ হিসেবে সৈন্যদের আসা-যাওয়া হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরো চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
তবে কেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সৈন্য সমাবেশপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার সেলের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেনের দপ্তরে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়।
মিয়ানমার ও ঢাকার সম্পর্কে বিষয়ে যুক্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, সন্দেহজনক গতিবিধির মাধ্যমে এ সেনাসমাবেশ দুই দেশের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করতে পারে।