স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সৈয়দ আতা হাসনাইন বলেছেন, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আইএসের তেমন উপস্থিতি নেই। আইএস মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং অন্যান্য অঞ্চলের প্রতি মনোযোগী। তবে আইএসের মতো জঙ্গিগোষ্ঠী সর্বত্রই তাদের ভিত্তি রাখতে চায়। বাংলাদেশকে তাই সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস (বিস) আয়োজিত এক একক বক্তৃতায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এ বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিস চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমদ।
অনুষ্ঠানে দেশের সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল (অব.) সৈয়দ আতা হাসনাইন দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রবাদী নেটওয়ার্ক সম্পর্কে একটি উপস্থাপনা দেন। তারপর প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত একজন জানতে চান, বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতি আছে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, বাংলাদেশে বিস্তৃতভাবে আইএস নেই। ভারত ও পাকিস্তানেও একইভাবে আইএসের বিস্তৃত উপস্থিতি নেই। আইএস মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার আল-শাবাব অধ্যুষিত অঞ্চল প্রভৃতি এলাকার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছে। তবে সর্বত্রই তারা একটি খুঁটি রাখতে চায়। এ কারণে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধ্যুষিত একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এই দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি প্রবেশদ্বার। এখানে আইএসের মতো গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের চেষ্টা থাকবে। এ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আইএসকে একটি সফল সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে অভিহিত করে বলেন, অর্থ, আদর্শ ও ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তারা খুবই সফল।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সমস্যা, অবহেলা, শিক্ষা ও সুযোগের অভাব, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের নিরাপদ স্থান প্রভৃতি সন্ত্রাসবাদের পরিবেশ সৃষ্টি করে। আজকাল সন্ত্রাসীর জন্য সীমান্ত অতিক্রম করাটা কোনো সমস্যাই নয়।
ভারতের এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাস দমনে জনগণের সহায়তা ছাড়া সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ সফল হতে পারে না। এ অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে সার্কের অধীনে সন্ত্রাসবিরোধী প্রটোকল জোরদার করা, সন্ত্রাসের নিরাপদ আশ্রয় বন্ধ করা, সন্ত্রাসীদের কোনো দেশের ভূখণ্ড ও অর্থ ব্যবহার বন্ধ করা, সন্ত্রাসীদের আন্তঃদেশীয় সংযোগ ভেঙে দেয়া প্রয়োজন। লে. জেনারেল (অব.) সৈয়দ আতা হাসনাইন সন্ত্রাস মোকাবেলায় তিনটি বড় ইস্যুর মোকাবেলার প্রতি জোর দেন। এই তিনটি ইস্যু হল সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব, অর্থায়ন এবং আদর্শ মোকাবেলা করা। উগ্রবাদের সব উপাদানই আমাদের জন্য হুমকি। উগ্রবাদ ও সহিংসতা দমনে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। তবে সন্ত্রাসীদের বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় এ দেশে সন্ত্রাসের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবচেয়ে বড় হুমকি হল, বাংলাদেশ ঘনবসতির মুসলিম দেশ। ভারতে মুসলমান আছে। তবে তারা বিচ্ছিন্ন পকেটে অবস্থান করে। সন্ত্রাস মোকাবেলায় রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরিচয় দিতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমনে সফল হতে হলে স্থানীয় পুলিশকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। কেননা সন্ত্রাসবিরোধী যে কোনো অবস্থার মোকাবেলায় স্থানীয় পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন। স্থানীয় পুলিশই সন্ত্রাসের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সহায়তা দিতে পারে।