শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বাংলাদেশ নিয়ে সুর নরম যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশ নিয়ে সুর নরম যুক্তরাষ্ট্রের

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের প্রতি যুদ্ধংদেহি মনোভাব থেকে কিছুটা সরে এই প্রথম সুর নরম করলো যুক্তরাষ্ট্র। একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের সহ-সচিব নিশা দেশাই বিসওয়াল মার্কিন সেনেটের একটি বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সম্পর্কেও বিরূপ মনোভাব প্রত্যাহার করারও প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন মনোভাবে স্বাভাবিকভাবে নয়াদিল্লি খুশি বলে জানিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী এই বাংলা পত্রিকাটি।

বুধবার আনন্দবাজারে প্রকাশিত ‘দিল্লির সাফল্য, বাংলাদেশ নিয়ে সুর কিছুটা নরম করল আমেরিকা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব সাইদুল ইসলাম এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসিনা সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সম্পর্কে বিশদে তিনি ব্যাখ্যা করছেন মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে। গোটা বিষয়টির দিকে অবশ্য সতর্ক ভাবে নজর রাখছে নয়াদিল্লিও।

সম্প্রতি গ্যারি বাস রচিত ‘দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম’ গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সেই ‘নিক্সন-নীতির’ সত্যিই কোনও পরিবর্তন হলো কিনা, তাই আগে খতিয়ে দেখতে চাইছে ভারতের সাউথ ব্লক।

প্রাক্তন কূটনীতিক এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের অন্যতম রূপকার রণেন সেন বলছেন, ‘এ’টি অবশ্যই ইতিবাচক ঘটনা। তবে বিষয়টি আচমকা ঘটেনি। বাংলাদেশে ভোট হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটনের তরফে কিছু ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। একটু দেরিতে হলেও যুক্তরাষ্ট্র অনুধাবন করছে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আইএসআই ছাড়াও ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলিরও যোগসাজস রয়েছে। মায়ানমারে রোহিঙ্গা উপজাতিদের নিয়ে উদ্ভূত সমস্যাতেও যে জামায়াত যুক্ত এমন খবরও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে পৌঁছেছে।’

বাংলাদেশে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রজিত মিটারের (মিত্র) মতে, ‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের সেই রাজনৈতিক জোর যে আর নেই তা স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র বুঝছে বাইরে থেকে হাওয়া দিয়ে তাদের বেশিক্ষণ ভাসিয়ে রাখা যাবে না। ড. ইউনূসের সঙ্গে হাসিনার সম্পর্ক খারাপ হওয়াটা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করেনি। কিন্তু আজকের দিনে সব দেশই নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, যুক্তরাষ্ট্রও।’

অবশ্য ভারতের বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গেই গোটা বিষয়টি দেখতে চাইছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো দেশই তার বৈদেশিকনীতি রাতারাতি বদলায় না। কিছু সূক্ষ্ম তারতম্য ঘটায় মাত্র। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কেনো হাসিনা সরকারের প্রতি নরম মনোভাব নিচ্ছে, তার কোনো সাময়িক কারণ রয়েছে কি না, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে তবেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্র এর আগে বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছিল, বাংলাদেশে কোনো রকম সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার তারা বরদাস্ত করবে না। আবার ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ এর লক্ষ্য অর্জন ও জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির জন্য হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেছে হোয়াইট হাউস।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, সিনেটে যে ব্রিফিংটি নিশা দেশাই করেছেন, সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আবার নতুন করে দেখার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শিল্প সংস্থাও এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সিনেটের উপর চাপ তৈরি করেছে।

নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে লেখা হয়, মার্কিন নীতি কিছুটা নরম হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত তাদের জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানের হার ৪০.৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে ৫০ শতাংশ ভোট পড়লে তাকে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ সাফল্য বলে মনে করা হয়। ফলে বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনকে কিছুতেই ব্যর্থ বলতে পারছে না পশ্চিমা বিশ্ব।

ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দুতাবাস আরো যে একটি রিপোর্ট হোয়াইট হাউসকে পাঠিয়েছে, তাতে আপাতভাবে সন্তুষ্ট ওবামা প্রশাসন। বাংলাদেশে এখন উপজেলা নির্বাচন চলছে। সেখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা যথেষ্ট ভাল ফল করছে। আওয়ামী লীগ সরকার রিগিং-সন্ত্রাস করলে এই প্রার্থীরা জিততে পারত কিনা তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে নয়াদিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস ?

এদিকে বাংলাদেশ নিয়ে নয়া মার্কিন মনোভাবকে দিল্লি নিজেদের কূটনৈতিক সাফল্য বলে দাবি করছে। তারা বলছে, মাত্র কয়েক মাস আগেও পরিস্থিতিটা ভিন্ন ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের দাবি অগ্রাহ্য করে, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে না দাঁড়িয়েই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। গোটা ঘটনার জেরে সহিংসতা তুঙ্গে ওঠে। তখনই প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে হাসিনার অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সে সময়ে পশ্চিমের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে কূটনৈতিক দৌত্য চালিয়ে যায় নয়াদিল্লি।

দিল্লির সাউথ ব্লক নাকি সেসময় মার্কিন নেতৃত্বকে স্পষ্ট ভাষায় জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে পশ্চিমা বিশ্বের উচিত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক এবং সহিংসতামুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা। জামায়াতের হিংসাত্মক কার্যকলাপের জন্য সে দেশের পরিস্থিতি যে ক্রমশই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, সে কথাও যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করে নয়াদিল্লি।