শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > বাংলাদেশের ১/১১-এর মতো মৃদু অভ্যুত্থান হচ্ছে পাকিস্তানে?

বাংলাদেশের ১/১১-এর মতো মৃদু অভ্যুত্থান হচ্ছে পাকিস্তানে?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
অভ্যুত্থানের তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান উচ্চ ঝুঁকিতে আছে- চলতি বছরের জানুয়ারিতে এমনটাই জানিয়েছিল ওয়াশিংটন পোস্ট
ঢাকা: পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের দাবিতে পিটিআই ও পিএটির নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড বিক্ষোভ ও সহিংস আন্দোলনে এখন টালমাটাল দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ইসলামাবাদে সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে চলছে ক্ষমতার রশি টানাটানি।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে অনেকটাই হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেওয়ার মতো ঘোষণা দিয়েছেন জাভেদ হাশমি। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টিতে যেভাবে কলকাঠি নাড়া হচ্ছে, এতে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যে এখানে হয়তো ‘বাংলাদেশ মডেলেরই’ একটি সংস্করণ কাজ করছে।
হাশমি ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ঘটা ‘মৃদু অভ্যুত্থানের’ প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পিটিআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কমিটির নেতাদের ইমরান বলেছেন যে এটাকে সামরিক আইন বলা হবে না।’ হাশমির এ মন্তব্যে স্পষ্ট আভাস রয়েছে যে পিটিআই ও পিএটিকে ব্যবহার করে প্রচ্ছন্নভাবে ক্ষমতা নিতে চাইছে সামরিক প্রতিষ্ঠান।
হাশমির বক্তব্যের বরাত দিয়ে দ্য ডন অনলাইনের প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়, বাংলাদেশে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা ছত্রচ্ছায়ায় যে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসেছিল, পাকিস্তানে সে অবস্থা তৈরি হতে যাচ্ছে। এতে বলা হয়, পাকিস্তানে বর্তমান সংকটে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থেকে সেনাবাহিনীও বাংলাদেশের ১/১১-এর সময়কার সেনাবাহিনীর ভূমিকায় আসতে চায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনস্বার্থে রাজনৈতিক ব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত থাকবে-এমন ধারণার ওপর ‘বাংলাদেশ মডেল’ তথা মৃদু অভ্যুত্থান (সফট ক্যু) প্রতিষ্ঠিত। ‘মন্দ’ থেকে ‘ভালো’কে আলাদা করার বিষয়টি খুব বেশি সময় নেওয়ার আগেই সরকারের ওপর সেনাবাহিনী ও বিচারব্যবস্থার হস্তক্ষেপ করবে—এমন নীতিকে সামনে রেখে এ মডেলটি দাঁড় করানো হয়। এ মডেলে বিশ্বাস করা হয়, রাজনীতিতে পরিচ্ছন্নতা আনার ফলে গণতন্ত্রে যে
শুদ্ধি আসে, এতে লোকজন সঠিক নির্দেশনা পায় এবং সঠিক করণীয় ঠিক করতে পারে। এ ধরনের সরকারব্যবস্থায় সেনাবাহিনী ও বিচারব্যবস্থার সঙ্গে মিলে টেকনোক্র্যাট, বর্তমান ও সাবেক কিছু কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ ব্যবস্থায় পেছন থেকে একজন কলকাঠি নাড়েন এবং নামমাত্র একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষমতায় বসানো হয়, যেমনটি ঘটেছিল ২০০৭ সালে বাংলাদেশে।
পাকিস্তানে সেই ধাঁচের সরকারই ক্ষমতায় আসছে বলে ইঙ্গিত বিশ্লেষকদের। ইসলামাবাদভিত্তিক বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা গত শনিবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘মেয়াদের বাকি সময়টা নওয়াজ শরিফ যদি টিকে থাকেন, তবে তিনি আনুষ্ঠানিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই থাকবেন। বহির্বিশ্ব তাকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নেবে না।’ তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই মৃদু অভ্যুত্থান হয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে-কখন এটি শক্তিশালী হবে।’
এদিকে ইসলামাবাদের চলমান রাজনৈতিক নাটকীয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংকট গোষ্ঠী (আইসিজি)। সংগঠনটি গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, পাকিস্তানে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা খুব জোরালো। এ ধরনের কোনো ঘটনা হবে দেশটির অর্থনীতি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য ভয়ংকর চ্যালেঞ্জ।
আইসিজির বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসলামাবাদের বিক্ষোভ সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে, আইনের শাসনকে ভেঙে দিয়েছে এবং মৃদ্যু অভ্যুত্থানের দ্বার খুলে দিয়ে সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় আসার পথ উন্মোচিত করেছে।”
পিটিআইয়ের সভাপতি হাশমির মতে, সেনাশাসনের পথে যাওয়ার একটি ছক ইতিমধ্যেই কষা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “যখন ইমরান এ পরিকল্পনা করছেন, তখন আমি তাকে বলেছিলাম, খান সাহেব, আপনি কী করছেন?”
হাশমির ভাষ্য, তার প্রশ্নের জবাবে ইমরান তাকে বলেন, “আমি আপনাকে বলছি, সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হবে। এ জন্য সব আয়োজনই সম্পন্ন হয়েছে।”
পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে হাশমির বোমা ফাটানোর আগে বোমাটি ফাটিয়েছিল ওয়াশিংটন পোস্ট। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পত্রিকাটি জানিয়েছিল, অভ্যুত্থানের তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ‘উচ্চ ঝুঁকি’তে আছে।
বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক