বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছে ইউক্রেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তৃত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি আরো বাড়ানো সম্ভব বলেও তারা মনে করে তারা।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার ডি. শেভচেনকো একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত মনে করেন, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মৈত্রীর পাশাপাশি কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ও ইউক্রেনের মধ্যে খুবই আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। যাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতি করা সম্ভব।
এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে হবে। কাজে লাগাতে হবে সুষ্ঠুভাবে।
তিনি মনে করেন দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে উভয় দেশের সরকারকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
আলেকজান্দার ডি. শেভচেনকো বলেন, গত ৪ বছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি মার্কিন ডলার। ইউক্রেন মনে করে এ বাণিজ্যের পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ অন্যান্য দেশের তুলনায় দাম কম বিধায় ইউক্রেন থেকে আরও বেশি সংখ্যক পণ্য রপ্তানির ভালো সুযোগ রয়েছে।
বিশেষ করে তিনি উল্লখ করেন, সার, গুঁড়ো দুধ, চিনি, সেই সঙ্গে গম, সূর্যমুখী তেলসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিকে।
সাম্প্রতিক ঢাকা সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
ঢাকা সফরকালে তিনি খাদ্যমন্ত্রী ছাড়াও কৃষি, পাট ও বস্ত্র এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ সময় দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপারে অদূর ভবিষ্যতে আমরা কি করা যায় এ নিয়ে অলোচনা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের পথে রয়েছে এবং সরকারনির্ধারিত সময়েই এটি মধ্য আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কিছু শিল্প দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং তাদের পণ্যের গুণগত মানও ভালো। আমরা এখন বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, চিংড়ি ও ওষুধ আমদানি করছি। সামনে চা, সিরামিক ও পাটজাত পণ্য নেওয়ার কথা ভাবছি।
তিনি বলেন, বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করেছি এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক দৃঢ় করার বিষয়ে তার ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।
এ সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি একটি দ্বিপক্ষীয় আন্তঃসরকার কমিশন গঠনের ওপর জোর দেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বহুমুখী সম্পর্ক গড়তে আমরা এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনার পথে এগোচ্ছি। যৌথ বিনিয়োগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেভচেনকোর উত্তর হচ্ছে, বিভিন্ন শিল্প খাতে ইউক্রেনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, জাহাজ ভাঙা শিল্প তার একটি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সুস্পষ্ট কোনো বিষয়ে এখনো আমরা আলোচনা করিনি, তবে আমরা প্রথমেই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ইউক্রেন সফরে আমন্ত্রণ জানাব, তখন ইউক্রেনের ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে কথা বলে করণীয় ঠিক করবেন।
তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী, দক্ষ কারিগর, যারা বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা শিল্প বিকাশের কাজে সহযোগিতা করতে পারে।
এ সময় দেশের অন্যতম ব্যবসায়িক গ্রুপ বসুন্ধরার সঙ্গে যৌথ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসঙ্গে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম এই শিল্প গ্রুপটির কাছ থেকে কিছু প্রস্তাব পেয়েছি। আমরা ভবিষ্যতে বিবেচনার জন্য এই প্রস্তাবগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছি, আর এ সংক্রান্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বসুন্ধরা গ্রুপ ইতোমধ্যেই ইউক্রেন সফর করেছে।
বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে এ সময় তিনি বলেন, আমি নয়াদিল্লি থেকে ৫টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব পালন করছি। এ মুহূর্তে নয়াদিল্লি দূতাবাসে লোকবলে ঘাটতি থাকায় ঢাকায় কোনো স্থায়ী কনসুলেট খোলার জন্য কাউকে নিযুক্ত করতে পারছি না। তবে এমন একটি পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে, কারণ বাংলাদেশ ও ইউক্রেনের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি দিনে দিনে জোরদার হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রচুর শিক্ষার্থী ইউক্রেনে গিয়ে কম খরচে লেখাপড়া করছেন। শিক্ষাবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির লক্ষ্যে একটি খসড়াও বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি ইউক্রেনে মালয়েশীয় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সম্ভবত বিছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো এর সঙ্গে জড়িত।
এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, জঙ্গিরা এর আগে গত ১৪ ও ১৬ জুলাই যথাক্রমে ইউক্রেনের একটি কারগো ও সাধারণ বিমান এবং এর আগে ১৩ জুন একটি ‘ট্রান্সপোর্ট প্লান্ট’ ধ্বংস করে। জাতিসংঘ, এফবিআই, ইন্টারপোলসহ আরও অনেককে তদন্তের জন্য অনুরোধ করা হলেও জায়গাটি জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ঘিরে রাখায় বিদেশি বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে যেতে পারছে না বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, রাশিয়া যেদিন ক্রিমিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করল ঠিক সেদিন থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্পর্কের অবনতি হতে লাগল।
তবে ইউক্রেন সরকার কোনো গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে একটি বারের জন্যও হামলা চালায়নি।
তিনি বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসনে নারী-শিশুসহ হাজারো বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, এটি বড় মর্মান্তিক। এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে দ্রুত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা করে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সংকটের সম্ভাব্য সুষ্ঠু সমাধান বের করার আহ্বান জানান তিনি। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম