শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বাংলাদেশের ফুটবল কালচার এখন নেপালে

বাংলাদেশের ফুটবল কালচার এখন নেপালে

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ সামন হোসেন, কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে: দিন দুয়েক আগেও নেপালের সাফ ফুটবলের উন্মাদনা ছিল না। দর্শকদের মাঝেও তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপকে ঘিরে। কিন্তু গতকাল সকালেই পাল্টে যায় সকল দৃশ্যপট। সূর্য ওঠার আগ থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ায় নেপালের ফুটবল পাগল দর্শক। নেপালকে সাপোর্ট করতে হাতে হাতে প্লে-কার্ড চেহারায় দেশের পতাকা এঁকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ায় তারা। যা দেখে নস্টালজিয়ায় ফিরে যায় বাংলাদেশী সাংবাদিকরা। বাংলাদেশেও ফুটবল নিয়ে দর্শকদের মাঝে এমন উন্মাদনা ছিল। বছর বিশেক আগেও বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল দেখতে স্টেডিয়ামে হাজির হতো হাজার হাজার দর্শক। রুমি, সালাউদ্দিন, চুন্নুদের খেলা দেখতে দূর-দূরান্তেও থেকে মিরপুর স্টেডিয়ামে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভিড় করতো ফুটবল পাগলরা। আন্তজার্তিক ম্যাচ হলে তো কথাই ছিল না। নেপালিদের মতোই ঢাকার সমর্থকরাও ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতো। অথচ সত্তর-আশির দশকের সঙ্গে দেশের ফুটবলের বর্তমান অবস্থা মেলানো যাবে না। দিন দিন খেলোয়াড়দের নিম্নমুখী পারফরমেন্সে স্টেডিয়াম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ভক্তরা। শত শত চেষ্টা করেও দর্শকদের স্টেডিয়ামমুখী করা যাচ্ছে না। এই চিত্রের সম্পূর্ণ উল্টো নেপালে। বিশ বছর আগেও যেখানে নেপালের ফুটবলের খবর নিতে না সাধারন দর্শক। তারাই আজ নেপালের ফুটবলকে এগিয়ে নেয়ার ব্রত নিয়েছে। আর্থিক দৈনতা, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে একের পর এক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে। এরি মাঝেও তারা স্টেডিয়ামে আসছে সফলতা না থাকার পরও দলকে সাহস যোগাচ্ছে।
১৫ বছর ধরে উমেশ নাড়াং দশরথ স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা প্রহরীর ভূমিকায়। দশ বছর আগেও ষাটোর্ধ্ব বুড়োর স্মৃতিতে এমন কোলাহলময় স্টেডিয়াম ছিল না, যেটা তিনি দেখছেন এখন। অথচ তার বয়সী যে কোন বাংলাদেশীর কাছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের জনারণ্যের স্মৃতি এখন অতীত। বাংলাদেশের সেই হারানো ফুটবল সংস্কৃতি যেন নেপাল ফুটবলের নতুন অঙ্গ হয়ে উঠছে। স্থানীয় সময় সাড়ে ৬টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচ। কিন্তু বেলা দুটো থেকে স্টেডিয়াম চত্বরের বাইরে জড়ো হতে থাকে লোকজন। সাড়ে তিনটায় সেটা উপচে পড়া ভিড়, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে হাজির হয়ে জয়ধ্বনি করছে তাদের ফুটবল দলের। বাইরে দলের জার্সি ও স্কার্ফ বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। অপেক্ষমাণ দর্শক-সমর্থকরা মুখে মুখে তাদের ফুটবলারদের নাম মুখস্থ। এমনকি ম্যাচে কে বা কারা গোল করবেন, সেই ধারণাও করে ফেলছেন তাদের মতো করে। কেউ বলেন, অনিল গুড়ুংয়ের নাম কেউ-বা ভারত খাওয়াজের পক্ষে বাজি রাখছেন। সবচেয়ে বড় কথা, ম্যাচ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে স্টেডিয়ামের দুই-তৃতীয়াংশ ভর্তি। সাতদোবাতো ইয়ুথ ক্লাবের সংগঠক অশোক বিস্তা পেছনে তাকিয়ে বলছেন, ‘ফুটবলের সঙ্গে আমি ১৩ বছর ধরে আছি। ১০ বছর আগেও এই অবস্থা ছিল না আমাদের ফুটবলের। এখন সমর্থকদের সামলাতে নিরাপত্তা বাহিনী লাগে। ৩০০/৭০০ টাকায় টিকিট কেটেও তারা খেলা দেখতে আসে।’ গোল নেপাল ডটকমের সিওএ বিক্রম থাপাও এদের দেখছেন নেপালের ফুটবল উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে। ‘আমাদের একটা ফুটবল কালচার গড়ে উঠেছে। মিডিয়া হাইপ এবং স্পন্সররা ফুটবলের দিকে ঝুঁকে পড়ায় কালচারটা আস্তে আস্তে তৈরি হচ্ছে। যেমন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে সমর্থকদের জার্সি এবং স্কার্ফ বিতরণ করা হয়েছে। এ রকম আরও কয়েকটা সংগঠন এই কাজ করছে। জাতীয় দলের খেলা হলেই মাঠ এবং মাঠের বাইরে ফুটবলের অন্য রকম উন্মাদনা তৈরি হয় বলেন বিক্রম। অথচ বিশ বছর ধরে নেপালের ফুটবল দলের কোন অর্জন নেই। এরপরও সবাই ফুটবলের পেছনে দাঁড়িয়েছে এটা দুর্দান্ত এক বিনোদন বলে বললেন নেপালের সাবেক এই ফুটবলার। নেপালের ফুটবল কালচার আজ পিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে।