বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
‘অযোগ্য’ শিক্ষক দিয়ে চলছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। নিয়োগপ্রাপ্তদের তেমন জ্ঞান না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন’ অবগত হলেও ‘নখ-দন্তহীন’ হওয়ায় শুধু চিঠি চালাচালির মধ্যে সীমিত থাকছে এর কার্যক্রম।
শিক্ষাবিদরা উচ্চশিক্ষার নামে গড়ে উঠা এসব প্রতিষ্ঠানকে ‘কোচিং সেন্টার’ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা নামসর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়ার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন রাখেন, মাননিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকার কেন নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিচ্ছে। এটি রহস্যজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘লাগামহীন অনুমোদন দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোচিং সেন্টারে পরিণত হচ্ছে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এদের দ্রুত রোধ করতে হবে। বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে উচ্চশিক্ষাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাগজে-কলমে ক্যাম্পাসটির ঠিকানা সোনারগাঁও দেখানো হলেও মূলত মহাখালী ও গ্রীনরোডের ভাড়া বাড়িতে দুটি ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এসব ক্যাম্পাসে ১১টি বিভাগে, ১৯টি বিষয়ে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। ২২৫ খ-কালীন আর ১১৮ জন স্থায়ী শিক্ষক দেখানো হলেও মূলত বিভিন্ন ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের দিয়েই চলছে উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠান।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, নিম্নমানের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং অযোগ্য শিক্ষক দিয়ে চলছে রাজধানীসহ জেলা পর্যায়ের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকে আবার ধার করা শিক্ষক দিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা চালাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক হওয়ার মতো যোগ্যতা না থাকলেও এমন ব্যক্তিদের দিয়ে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। এদের মধ্যে কানাডা ইউনিভার্সিটি, পিপলস ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় (আরএসটিইউ), নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অন্তর্ভুক্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ইউজিসি থেকে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক এবং যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনা কেউ আমলে নিচ্ছে না। বরং ইচ্ছামত শিক্ষার্থী ভর্তি করে সকলে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও জানা গেছে, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউথ এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এতটা খারাপ যে, সম্প্রতি তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে ইউজিসি। সেই সুপারিশও এখন লাল ফিতায় বন্দি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা তাদের বারবার সতর্ক করছি কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।’
‘নখ-দন্তহীন ইউজিসি হওয়ায় তাদের কাছে আমরা অসহায়’- উল্লেখ করে চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘যারা খুবই নিম্নমানের দিকে ধাবিত হচ্ছে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছি। এছাড়া অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন বিভাগ খুলতে অনুৎসাহী করা হচ্ছে।’
আব্দুল মান্নান বলেন, ‘খুব বেশিদিন তাদের কার্যক্রম চালাতে দেয়া হবে না। এ কারণে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। জাগোনিউজ