বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ২৩৯ আরোহী নিয়ে নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ বিমানটি বরিশালেও অবতরণ করতে পারে বলে সম্ভাবনা দেখা গেছে। শুধু বরিশালই নয়, বাংলাদেশের আরও আটটি স্থান কক্সবাজার, চট্টগ্রাম (পতেঙ্গা), ঢাকা (শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ক্যান্টনমেন্ট বিমানবন্দর), সিলেট, রাজশাহী, নীলফামারী (সৈয়দপুর) ও যশোরে অবতরণ করতে পারে বিমানটি।
নয়দিন ধরে নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ উড়োজাহাজটি ‘ছিনতাই’ হওয়ার আশঙ্কা করছে মালয়েশিয়া। তাদের সন্দেহের চোখে উড়োজাহাজের পাইলট, ক্রু ও যাত্রীরা রয়েছেন। ছিনতাইয়ের দিকে চোখ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকারীরা চোখ দিচ্ছেন উড়োজাহাজটির সম্ভাব্য অবতরণ স্থানের ওপরও।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম মিরর জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে উড়ে যাওয়ার পর্যাপ্ত জ্বালানি ছিল উড়োজাহাজটিতে। নিখোঁজ বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি বিশ্বের ৬৩৪টি রানওয়েতে অবতরণ করতে পারে বলে বলা হয়েছে মিররের প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিভিত্তিক অলাভজনক ওয়েবসাইট ও অবাণিজ্যিক, সরকারি রেডিও ডব্লিউএনওয়াইসি (ডঘণঈ) এর একটি মানচিত্রের বরাত দিয়ে এ দাবি করা হয়েছে।
ডব্লিউএনওয়াইসি’র মতে, ২৬টি দেশের ৬৩৪টি রানওয়েতে নিখোঁজ উড়োজাহাজটি অবতরণ করতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ ২৬টি দেশের ৬৩৪টি স্থান অবতরণের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে দেখছে ডব্লিউএনওয়াইসি।
ওই মানচিত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশের উল্লেখিত নয়টি স্থানে উড়োজাহাজটি অবতরণ করতে পারে। ডব্লিউএনওয়াইসি জানিয়েছে, সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশ করে, উড়োজাহাজটি সবশেষ জ্ঞাত অবস্থান থেকে ২ হাজার ২শ নটিক্যাল মাইল উড়তে পারে।
৮ মার্চ প্রথম প্রহরে দিনগত রাতে ২২৯ যাত্রী ও ১২ ক্রুবাহী মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ ফ্লাইটি কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে মালয়েশীয় উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় উড়োজাহাজটির।
গত সপ্তাহের শনিবার সকালে গুজব ছড়ায় দক্ষিণ চীন সাগরের ভিয়েতনাম উপকূলে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এ খবরের পর দক্ষিণ চীন সাগরের ভিয়েতনাম উপকূলে ভিয়েতনাম ও চীন তল্লাশি চালায়। কিন্তু উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের কোনও নমুনা খুঁজে পায়নি ভিয়েতনাম ও চীনের তল্লাশি দল। এ খবরকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে মালয়েশিয়ার সরকার।
এরপর চীন দাবি করে, তারা গুগল মানচিত্রে উড়োজাহাজটির বিধ্বস্তের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন। পরে এ দাবি থেকে সরে আসে চীন। চীনের দাবির পরপরেই তা নাকচ করে দেয় মালয়েশিয়া।
উপগ্রহের তথ্য বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞেরা দাবি করেন, উড়োজাহাজটি গতিপথ পরিবর্তন করে মালাক্কা প্রণালীর দিকে উড়েছে। দক্ষিণ চীন সাগর থেকে তল্লাশি অভিযান শুরু হয় মালাক্কা প্রণালীতে। এর মধ্যে নতুন তথ্য দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলে, রাডার থেকে উধাও হওয়ার পরও চার থেকে ৫ ঘণ্টা আকাশে উড়েছে ১৪ দেশের নাগরিকবাহী উড়োজাহাজটি।
এ তথ্যও উড়িয়ে দেয় মালয়েশিয়া। এরপর মালয়েশিয়ার সামরিক বাহিনীর রাডারে ধরা পরা একটি অজ্ঞাত উড়োজাহাজের তথ্য বিশ্লেষণ শুরু করে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তদন্তকারীরা বলেন, উড়োজাহাজটি ভারত মহাসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের দিকে উড়েছে।
এ তথ্যের ভিত্তিতে মালয়েশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্রের তল্লাশি অভিযান এলাকা বাড়ানো হয় ভারত মহাসাগর পর্যন্ত। তল্লাশি অভিযানে যোগ দেয় ভারত, বাংলাদেশ।
সবশেষ শনিবার দুপুরের পর সংবাদ সম্মেলনে উড়োজাহাজটি ‘ছিনতাই’ হওয়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। তিনি বলেন, উড়োজাহাজটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অচল করে দেওয়া হয়েছে।
নাজিব রাজাকের এ মন্তব্যের পরপরেই উড়োজাহাজের পাইলটের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে মালয়েশীয় পুলিশ।
বর্তমানে উধাও উড়োজাহাজটির খোঁজে ২৫টি দেশ অভিযানে অংশ নিয়েছে।বা.প্রতিদিন