বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
স্বচ্ছ বদলি-পদায়নের মাধ্যমে ভূমি প্রশাসনের দুর্নীতির চক্র ভাঙতে চায় ভূমি মন্ত্রণালয়। এজন্য ব্যাপক আকারে বদলির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভূমি প্রশাসনের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলিও করা হয়েছে গত মাসে। এটা চলমান থাকবে বলে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর থেকে জানা গেছে।
ভূমি অফিসকে দুর্নীতির অন্যতম বড় জায়গা বলে মনে করা হয়। ভূমি সেবা নিতে গিয়ে মানুষের হয়রানির শেষ ছিল না। কিন্তু নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে ভূমিমন্ত্রী করে। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। গত এক বছর তার বিভিন্ন উদ্যোগে এই খাতের অনিয়ম-ভোগান্তির চিত্র বদলাতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একই ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন চাকরি করায় পারস্পরিক যোগসাজশে দুর্নীতির চক্র গড়ে ওঠে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। স্বচ্ছতা না থাকায় অনেক কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে সুবিধাজনক স্থানে বদলি বাগিয়ে নিতেন। তাই একই স্থানে দীর্ঘদিন থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বদলির প্রক্রিয়ায়ও আনা হচ্ছে স্বচ্ছতা। লটারির মাধ্যমে বদলি করা হচ্ছে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের।
গত ২৯ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর ও আওতাধীন অফিসের তিন বছর বা এর বেশি দিন ধরে কর্মরত ৭৭ জন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে বদলি করা হয়। পরদিন ৩০ ডিসেম্বর একই কারণে একসঙ্গে ৫২ জন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে বদলি করা হয়।
শুধু তাই নয়, গত ২৯ ডিসেম্বর ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের কোনো শাখায় তিন বছর বা এর বেশি সময় ধরে কর্মরত ৫৬ জন কর্মচারীকে বদলি করে অন্য শাখায় পদায়ন করা হয়েছে। এই কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন- উচ্চমান সহকারী, সাঁটলিপিকার, স্টোরকিপার, অফিস সহকারী তথা কম্পিউটার অপারেটর, জিংক কারেক্টর, ড্রাফসম্যান, কম্পোজিটর, পেশকার, বিল ক্লার্ক, সহকারী প্রুফ রিডার, রেকর্ড কিপার, গ্রেইনার, ফ্রেম ক্যারিয়ার, টিন্ডেল, অফিস সহায়ক, গেলিবয়। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরকে এ বদলির জন্য নির্দেশনা দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়।
বিভিন্ন স্থানে গাড়ি চালকদেরও বদলি করা হয়েছে। এছাড়া একই সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে চাকরিকাল তিন বছরের বেশি হওয়া সব কর্মচারীকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। গত ২৪ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশনা দিয়ে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গত ১১ ডিসেম্বর ৫৪৮ জন সার্ভেয়ার, ডি/ম্যান-কাম-এ/ই-কাম সিট কিপার, ড্রাফসম্যান, পেশকার, কম্পিউটার, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কানুনগো (ম্যানেজমেন্ট ও উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পদোন্নতি পাওয়া ৫৪৮ জন কানুনগোর মধ্যে ম্যানেজমেন্টে ২৫২ জন এবং উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হচ্ছেন ২৯৬ জন।
পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের লটারির মাধ্যমে বদলির সিদ্ধান্ত নেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ১২ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে লটারিতে বদলি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
ওই দিন ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘সবার ইচ্ছা থাকে ভালো জায়গায় পোস্টিং নেয়া। এ বিষয়ে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। লটারির মাধ্যমে বদলি হওয়ায় যার যেখানে পড়বে তিনি সেখানে যাবেন। এ বিষয়ে কারও কোনো প্রশ্ন থাকবে না। কেউ বলতে পারবেন না যে, তদবির করে এখানে এসেছি।’
ভূমি সচিব মাক্ছুদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘সবাই নিজ সুবিধা অনুযায়ী বদলি হতে চান। দেখা যায় একই জায়গার জন্য অনেকে তদবির করেন। আবার কোনো জায়গায় বদলি হতে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন করার জন্যও অনেকে উপায় খোঁজেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেক সময় বিব্রতবোধ করেন। লটারি পদ্ধতি চালু হওয়ায় এসব দূর হবে।’
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের সাতজন অফিস-সহকারী, তথা কম্পিউটার অপারেটর, তিনজন প্রধান সহকারী, তথা হিসাবরক্ষক ও চারজন কপিস্টকে বদলি করা হয়েছে।
ব্যাপক বদলির কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাও তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বদলি হওয়া অনেক কানুনগো বা উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার এক বছরের মধ্যে অবসরে যাবেন। এতে বিপত্তিতে পড়ছেন তারা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রকল্পে ভূমি সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত কর্মকর্তাদের বদলিতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. তসলীমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বদলির মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনার অনিয়ম দূর করার চেষ্টা করছি। ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে বদলিও করা হচ্ছে লটারির মাধ্যমে।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া তিন বছরের বেশি সময় ধরে কোনো স্থানে থাকা কর্মকর্তাকেও আমরা সরিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার পিওনকেও সরিয়ে দিয়েছি, কোনো পক্ষপাতিত্ব করিনি।’
অল্প সময়ের মধ্যে অবসরে যাচ্ছেন এমন কর্মকর্তাদেরও বদলি করায় সমস্যা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মহাপরিচালক বলেন, ‘যারা ছয় মাসের মধ্যে অবসরে যাবেন তাদের আমরা বদলি করিনি। তবে এক বছর আছে এমন কর্মকর্তাদের বদলি করেছি। হয়তো ছয় মাস পর তাকে আমরা তার নিজের জায়গায় দিতে পারব।’