বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
দলীয় গঠনতন্ত্রের একটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের আদেশের ফলে একাধিক মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের যথাক্রমে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকার অনিশ্চিতা দেখা দিয়েছে।
রিটের এই আদেশের ফলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপাসন তারেক রহমানের পদে থাকা নিয়ে নিজ দলেই সংকট তৈরির সংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
দণ্ডিত বা দুর্নীতিপরায়ণ কোনো ব্যক্তি বিএনপির কোনো পদে থাকতে পারবেন না— এমন বিধান বাতিল করে দলটি যে গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাদ দিয়ে বিএনপি যে সংশোধনী প্রণয়ন করেছে, তা গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
দলটির সংশোধিত গঠনতন্ত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ অন্তর্র্বতীকালীন এক আদেশ দিয়ে রিটটি ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন।
বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি রিট আবেদন করেন। দণ্ডিত ব্যক্তিদের দলীয় কমিটিতে না রাখার যে বিধান বিএনপির গঠনতন্ত্রে ছিল, সংশোধনীতে তা বাদ দেয়া কেন বেআইনি হবে না এবং সংবিধানের পরিপন্থী হবে না, তা-ও জানতে চেয়েছেন আদালত। এই আদেশের ফলে, বিএনপির চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় নেতৃত্বে রাখা এবং দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন বিএনপির সংশোধনী গ্রহণ না করলে দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে, বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, কে কী বললো, তাতে কিছু আসে–যায় না। এ বিষয়ে আরও অনেক পথ দেখছে দলটি।
এদিকে, সরকারপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, হাইকোর্টের এ নির্দেশ মানতে বাধ্য ইসি। ফলে ইসি বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করলে বা বাতিল করে দিলে বিএনপির কোনো কমিটিতে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি থাকতে পারবেন না। এ কারণে বিএনপি চেয়ারপার্সন কারাবন্দি খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলটির কোনো পদে থাকতে পারবেন না বলে অভিমত আইন বিশেষজ্ঞদের।
তারা বলছেন, হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে বিএনপির। বিএনপি যদি আপিল করে এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন, সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের দলের শীর্ষ পদে থাকতে কোনো সমস্যা হবে না। যদি দলটি কোনো স্থগিতাদেশ না পায়, তবে তারা পদে থাকতে পারবেন না।
আইনজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনের অযোগ্য। এ কারণেই দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির বিএনপির পদে রাখার উদ্দেশ্যে দলটির গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনা দেশের সংবিধানের পরিপন্থী।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের আগে এ বছরের ২৮ জানুয়ারি সাত ধারা বিলুপ্ত করে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিলে এই সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার যথাক্রমে ১০ ও সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছে। অন্যদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও একটি অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের যথাক্রমে যাবজ্জীবন ও সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা আছে, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’ তারা হলেন- (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণার ১০ দিন আগে ৭ নম্বর ধারা বাদ দিয়ে বিএনপি সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।
আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আজ সংলাপে বসবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সংলাপ বিষয়ে চিঠি চালাচালি ও বিভিন্ন কথার মধ্যে গত মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হয়েছিল।
সংবিধানের ৬৬ (২) (গ) অনুচ্ছেদে সংসদ নির্বাচনের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে বলা আছে। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি পরিষ্কার যে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পদে থাকার অযোগ্যতার বিষয়ে বিএনপির গঠনতন্ত্রের সাত ধারায় উল্লেখ রয়েছে।