রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ফুল বিক্রি করে ২০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ

ফুল বিক্রি করে ২০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ফুল বিক্রি করে খোদ রাজধানীতে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ফুল বিক্রির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে ছোটবড় পাঁচ শতাধিক ফুলের দোকান। এসব দোকান ও ভাসমান ফুল বিক্রেতা মিলে রাজধানীতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়। আর বিশেষ দিবসে এই অঙ্ক বেড়ে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

শুদ্ধতা, পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের প্রতীক ফুল। ফুলে বন্ধু মেলে, ভরে মনও। আবার সেই ফুল কখনও জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমও হয়ে ওঠে। ফুল বিক্রি করে খোদ রাজধানীতে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ফুল বিক্রির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে ছোটবড় পাঁচ শতাধিক ফুলের দোকান। এর মধ্যে গুলশান, বনানী ও বেইলী রোডে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফুলের দোকান। এসব দোকান ও ভাসমান ফুল বিক্রেতা মিলে রাজধানীতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়। আর বিশেষ দিবসে এই অঙ্ক বেড়ে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

নির্ধারিত দোকান ছাড়াও রাজধানীতে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক পথশিশু ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। রাজধানীর বিজয় সরণি, শাহবাগ, বিজয় নগর, ধানমন্ডিসহ ভিআইপি ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টে এবং বড় বড় বিপণি বিতানের সামনে এসব পথশিশুরা ফুল বিক্রি করে থাকেন। বিজয় সরণি ট্রাফিক সিগন্যালে ফুল বিক্রিকারী পথশিশু রেহেনা জানায়, পরিচিত এক চাচা তাকে এখানে ফুল বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়। সাধারণত ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির যাত্রীরাই তার কাছ থেকে ফুল কিনে থাকে। মহাজনের কাছ থেকে বাকিতে ফুল নেয়, বিক্রি শেষ করে টাকা দেয়, এতে প্রতিদিন তার ৮০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। এই আয় বাবা-মাসহ তাদের পাঁচজনের সংসার একটু স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে সহযোগিতা করে। তার মতো রাজধানীতে আরও পাঁচ শতাধিক পথশিশু এভাবে ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

ফুলের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গড়ে উঠেছে দুটি পাইকারি বাজার। একটি শাহবাগে, আরেকটি ফার্মগেটের খামারবাড়ির সামনে রাস্তার ফুটপাথে। প্রতিদিন ভোর রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব বাজারে ফুল আসতে শুরু করে। দুই থেকে তিন ধাপে চলে বেচাকেনা। প্রথম ধাপে বেচাকেনা চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপে চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত আর তৃতীয় ধাপে দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কিছু ফুল বেচাকেনা হয় একেবারেই খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। রাজধানীর ওই দুই ফুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, অর্কিড, গ্লাডিওলাস, কামিনী, বকুল, দোঁলনচাপা, পদ্ম, জিপসিসহ আরও নানা ধরনের বাহারি ফুলে ভরপুর থাকে এই বাজারগুলো। বর্তমানে শাহবাগের পাইকারি ফুলের বাজারে প্রতি ১০০ গোলাপ বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা দরে, রজনীগন্ধা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ এবং গ্লাডিওলাস বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত দরে। রাজধানী ও রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা এই দুই বাজার থেকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ফুল কিনে নিয়ে যায়। চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এসব বিক্রেতারা দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করছে বলে শাহবাগের একাধিক ফুল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।

শাহবাগ ফুল মার্কেটের ভ্যালেনটাইনস ফ্লাওয়ারের মালিক ও ফুল ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ বলেন, আশির দশকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় মালঞ্চসহ কয়েকটি ফুলের দোকান গড়ে ওঠে। এসব ফুলের দোকনকে কেন্দ্র করেই রাজধানীতে ধীরে ধীরে ফুলের ব্যবসা সম্প্রসারিত হতে থাকে। প্রথমদিকে এই মার্কেটের ফুল ব্যবসায়ীরা ফুলচাষিদের নানাভাবে ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করত। পরবর্তী সময়ে ফুলচাষিদের ফুল বিক্রিকে কেন্দ্র করে শাহবাগেই গড়ে ওঠে একটি পাইকারি ফুলের বাজার। রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যেতে থাকে। এভাবেই সম্প্রসারিত হতে থাকে ফুলে চাষ ও বিক্রি। দোকান ও ভাসমান ফুল বিক্রেতা মিলে রাজধানীতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়। আর বিশেষ দিবসে এই অঙ্ক বেড়ে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। বর্তমানে রাজধানীতেই প্রায় ২০ হাজার মানুষ ফুল বিক্র করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশের ১৯ জেলায় ফুল চাষ হয়। জেলাগুলোর মধ্যে যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কঙ্বাজার ও নারায়ণগঞ্জ অন্যতম। তবে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের পথিকৃৎ জেলা হলো যশোর। বর্তমানে সারা দেশের ফুলের চাহিদার ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ফুল এই জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। লাভজনক ফুল চাষ এখন ওই জেলার পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফুল চাষের ফলে এসব জেলার গ্রামের মহিলাদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ফুলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঁশ বেত শিল্প। এভাবে সারা দেশে পাঁচ লাখের ওপর মানুষ ফুল ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।

শাহবাগের ফুলের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক ফুলের প্রধান গ্রাহক হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মী। তারা তাদের নেতাদের জেল মুক্তি, জন্ম দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। তারপর বিয়ের অনুষ্ঠানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে ফুলের ব্যবহার তো রয়েছে। তাছাড়া সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা তাদের বসের প্রমোশন ও বিদায় অনুষ্ঠানে ফুলের শুভেচ্ছা দেন এখানেও ফুলের একটা বড় অংশের কাটতি রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার করে থাকেন। তরুণ-তরুণীরা তাদের প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা জানাতে ফুল কিনে থাকেন, তাদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

গ্রাহক পর্যায়ে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছরই ফুলের চাষ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, গত বছর সারা দেশে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল ও বাহারি গাছের চাষ হয়েছিল। চলতি বছর এর পরিমাণ আরও বাড়বে। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেথ দুবাই, কাতার, ওমান, সৌদি আরব ও কুয়েত। রফতানিকৃত ফুলের মধ্যে রয়েছেথ রজনীগন্ধা, গ্লাডিউলাস ও গোলাপ।

শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, যুগের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুল চাষ ও ব্যবসা সম্প্রসারিত হলেও এদিকে সরকারের মনোনিবেশ নেই বললেই চলে। প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে রাজধানীর ফুল ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে তাদের জন্য নির্ধারিত একটি জায়গা চেয়ে এলেও কোনো সরকারই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। যে কোনো সময় উঠে যাওয়ার অজানা এক আতঙ্ক নিয়েই তারা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা। তারা আরও জানান, সরকার দেশে ফুল চাষের প্রতি জোরালো নজর দিলে দেশের চাহিদা পুরোপুরি মিটিয়ে বিদেশেও বাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।আ.বাংলাদেশ