॥ মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার ॥
জনাব ইকবাল হোসেন সবুজ। তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১০ অক্টোবর সন্ধ্যার পর গণভবনে এক সভায় এ ঘোষণা দেন। সভাপতি পূর্বের জনই অর্থাৎ মাননীয় মু্িক্তযোদ্ধা বিষয় মন্ত্রী আলহাজ এ্যাড. আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর জেলা কমিটি ঘোষণার পর থেকেই জনাব ইকবাল হোসেন সবুজ ভাইয়ের বাসা গাজীপুর শহরের উত্তর ছায়াবীথীতে ভক্তবৃন্দ ও দলীয় নেতাকর্মীদের ভীড় জমতে থাকে। খবর পেয়ে প্রথমে রাত ৯টা থেকে শহরের আশপাশে লোকজন জড়ো হচ্ছিল। সবুজ ভাই তখনও ছিলেন গণভবনে। ঢাকা থেকে নেতা আসবে এ অপেক্ষা করছিল সবাই। লোকজনের ভীড় দেখে অজিৎ দা বাসার সামনে কয়েক’শ চেয়ার রাখার ব্যবস্থা করেন। উত্তর বিলাপুরের রঞ্জিত দা তাঁর দলবলসহ ফুলের মালা, ১৫ কেজি মিস্টি নিয়ে অপেক্ষা করছেন নেতার আগমনের। উৎসুক নেতাকর্মীরা আনন্দে পটকা-বাজি ফোঁটানো শুরু করছে। আনন্দে নিজেকে সামলাতে না পেরে সবুজ ভাইয়ের ঘনিষ্ট সহচর হালিম পালোয়ান ও শামিম বাজি ফোঁটিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা যায়। রাতে এ শব্দে আশপাশের বাসার লোকজন পর্যন্ত সবুজ ভাইয়ের সামার সামনে ভীড় করছিল। নাম না জানা অনেক নেতাকর্মীরা প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল, রিক্সায় চরে আসতে শুরু করে। এদের অনেকের সাথে মিস্টি, ফুলের তোড়া, ফুলের মালা আনতে দেখা যায়। লোকে লোকারণ্য বাসার চারপাশ। বাসার ভিতর থেকে ভাবী নির্দেশ দিয়েছেন এসব মিস্টি অপেক্ষমান লোকজনের মধ্যে বিতরণ করতে। কথা মতো তাই চলছে। রাত ১১টার পর অজিৎ দার মাধ্যমে নেতা ঢাকা থেকে মেজজ দেন, সবাই চলে যেতে, আজ রাত তিনি আসবেন না। এ খবর পেয়ে অপেক্ষমান নেতা-কর্মীরা হতাশ। অবশেষে বাড়ি না ফেরার উপায় নেই। যদিও তিনি রাত ৩টায় বাসায় ফিরেন।
পরদিন সকাল থেকে নেতার বাড়িতে ভীড় জমতে শুরু করে। শ্রীপুরের প্রাণপুরুষ সবুজ ভাইকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে শ্রীপুর থেকে দলে দলে ভক্ত নেতা-কর্মীরা আসছেন। গাজীপুর জেলার অন্যান্য উপাজেলা থেকেও কমবেশি দলীয় নেতা-কর্মীরা আসছেন। রাত গভীর পর্যন্ত চলে নেতার সাথে সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা জানাতে। আমিও বসে থাকতে পারিনি। একটু শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজেকে ধন্যকরতে গিয়ে ছিলাম রাত ১০টায়। কাছে যেতেই আমার প্রিয় ভাই, প্রিয় ব্যক্তিত্ব সবুজ ভাই আমাকে বুকে জড়িয়ে নেন। তাতে নিজেকে ধন্য মনে করলাম। আমার সাথে গিয়ে ছিলেন আমার এক বন্ধু, সবুজ ভাইয়ের এক প্রতিবেশি। তিনি এক মাদ্রাসার সুপার। নাম নাজমুল হাসান কবির। তিনি ইতোপূর্বে কখনো নেতার বাসায় যাননি। ওইরাতে কবির সাহেব অবাক হয়ে আমাকে বলেছেন, আমি কখনো কোন আওয়ামী লীগের নেতার সম্ভর্ধনায় যায়নি। তবে এ রকম সম্ভর্ধনাও ইতোপূর্বে কখনো দেখিনি। বাসাটির নিচতলা, বাসায়র সামনের স্পেস, শ্মশানে যাওয়ার রাস্তা হাজার হাজার লোক। এ কোন আনুষ্ঠানিক সম্ভর্ধনা নয়। এরপরও এতো লোকের ভীয়, এতো ফুলেল শুভেচ্ছা, নেতার প্রতি কর্মীর এতো ভালবাসা। আবাল বৃদ্ধ বনিতার অশ্রুসিক্ত গভীর ভালবাসা। নেতা ও তাঁর কর্মীর মধ্যে যে গভীর ভাবের উদয় দেখতে পেয়েছি, তাতে কোন কৃত্রিমতা নেই, শুধুই সহজ সরল ও প্রাণের। এ যেন পিতা-পুত্রের গভীর মমত্ব। এ রমক নেতা ও কর্মীর মধ্যে ভাবের যে প্রেম, আমি আর কোথাও দেখিনি। এরকম অনেক কথা শুনালেন আমাকে। শেষমেষ একটা কথা বলেছেন কবির, সবুজ ভাই রাজনীতির হাইওয়েতে উঠতে পেরেছেন। উনার নিজেস্ব যোগ্যতা ও গুণাবলিতে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
গাজীপুরবাসী প্রায় একটি বছর অপেক্ষায় ছিলেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে। তবে সভাপতি পদে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এটি শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা বললে কেবল ভুল হতে পারে, এটাকে এক প্রকার যুদ্ধ বলা যেতে পারে। এ পদে আসতে এমপিপুত্র দূর্জয় একটি বড় ফ্যাক্টর ছিল। দূর্জয়ের যতটুকুই না নিজেস্ব যোগ্যতা রয়েছে তার চেয়ে বেশি শক্ত ছিল তাঁর খুঁটি। তাঁকে এ পদে বসাতে পিতা এমপি রহমত আলী স্বয়ং যুদ্ধে নেমেছেন। সাথে ডজন খানেক কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি, মন্ত্রী নিয়ে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হেভিওয়েট নেতা এমপি মন্ত্রী থেকে শুরু করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত লবিং করেছেন পুত্রের জন্য পিতা। এবিষয়ে গাজীপুরের কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন নাকি রহমত আলী এমপি’র সাথেও। ইকবাল হোসেন সবুজ ভাইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী জামিল হাসান দূর্জয়। দূর্জয় সাহেবের দলে বড় কোন পদ-পদবী না থাকায় এবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কারণ দূর্জয় সাহেব স্বপ্ন দেখছেন শ্রীপুরের ভবিষ্যৎ এমপি। সবুজ ভাই ওই পদ পেলে দূর্জয় সাহেবের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই মরণ কামড় দিয়ে লবিং-গ্রুপিং করেছেন। তবে এরই মধ্যে গাজীপুরের হেভিওয়েট আ.লীগ নেতারা সংকিত ছিলেন- সবুজের টাকা নেই, দূর্জয়ের টাকা কাছে। তাঁরা মনে করেছিলেন, কোটি কোটি টাকার অফারও থাকতে পারে। তবে এক বিশ্বস্থ সূত্রে এও বলেছেন, দূর্জয় মরণ কামড় দিয়ে লেগেছিলেন, চেষ্টার কোন প্রকার ত্রুটি রাখেন নি।
শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি সবুজ ভাইয়ের সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, দলের প্রতি আনুগত্য ও মুজিবিয় আদর্শের কাছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁকে অনেক আগে থেকেই একজন আদর্শ কর্মী হিসেবে জানতেন।
তবে শ্রীপুরের সাধারণ মানুষ আরো আগে থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেন জনাব ইকবাল হোসেন সবুজ জাতীয় সংসদ সদস্য(এমপি) হিসেবে এ এলাকবার প্রতিনিধিত্ব করবেন। তিনি জেলার সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ব্যাপারটি আরো পরিষ্কার হলো। তবে স্থানীয় রাজনৈতিকদের ধারণা, তিনি একবার এমপি হলে মন্ত্রীও হবেন। ইনশাআল্লাহ।