ফার্মগেটে পুলিশি পাহারায় অসামাজিক কাজ!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে রাতের বেলায় পুলিশি পাহারায় চলছে নানা অসামাজিক কাজ। এলাকার ইন্দিরা রোড ও খামারবাড়ি রোডের মাঝে অবস্থিত ‘শের ই বাংলা নগর পার্ক’ হয়ে উঠেছে এসব অসামাজিক কাজের প্রাণকেন্দ্র। নিরীহ সাধারণ মানুষকে এখানে প্রতিনিয়ত পড়তে হচ্ছে নানা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার।

পার্কের ভেতরে ভাসমান যৌনকর্মীদের অসামাজিক কার্যকলাপ ছাড়াও নেশাখোরদের বিভিন্ন নেশার আড্ডাও চলে অবাধে। আর পার্ক সংলগ্ন রাস্তা ও ফুটপাতে ছিনতাইকারী ও পকেটমাররা তাদের অপকর্ম চালায়।

শুক্রবার দিবাগত রাতে সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা গেছে, সন্ধ্যার পরেই এলাকটি চলে যায় ভাসমান যৌনকর্মী, পকেটমার, ছিনতাইকারী আর নেশাখোরদের দখলে। পুলিশের সহায়তায়ই চলছে এসব অসামাজিক কাজ। আর ভাসমান যৌনকর্মীদের পাহারায় পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে একটি দালাল চক্র।

শের ই বাংলা নগর পার্কের কাছে দু’জন যুবকের মানিব্যাগ নিয়ে টানাটানি করতে দেখা গেল এক পুলিশ সদস্যকে। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য তাদের চড়-থাপ্পর দিয়ে ছেড়ে দিলেন। ওই দুই যুবকের পিছু নিয়ে ফার্মগেট ওভারব্রিজের কাছে এসে কথা হয় তাদের সঙ্গে।

কথা বলে জানা গেল, মো. রাকিব (২৭) ও মো. কাওসার (২৯) নামের ওই দুই যুবক চুক্তিতে কাজ করেন মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত ঐশি গার্মেন্টেসে। থাকেন ফার্মগেটের রাজাবাজার এলাকার একটি মেসে। বাস না পেয়ে পায়ে হেঁটে ফিরছিলেন মেসে। শের ই বাংলা নগর পার্ক এলাকায় আসতেই পড়েন পুলিশের খপ্পরে।
রাকিব ও কাওসার জানান, পুলিশ তাদেরকে ওই স্থানে থাকা যৌনকর্মী আসমার সঙ্গে পার্কের ভেতরে যেতে বলে। পুলিশের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে নেয়। এরপর তাদেরকে চড়-থাপ্পর মেরে ছেড়ে দেন।

এরই মধ্যে পুলিশ অন্য দু’জনকে ধরে পার্কের ভেতরে নিয়ে গেছে। পার্কের ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, তিন জন পুলিশ সদস্য তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের দুই জন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলছেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেন। জানা গেল, অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে ওই দুই শিক্ষার্থীকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে পুলিশের দাবিমতো অর্থ দিতে না পেরে মুচলেকা দিতে বাধ্য হন তারা।

পার্কের আর একটু ভেতরে চার পাঁচজন যৌনকর্মী অসামাজিক কাজ করছিলেন। এ সময় ছবি তুলতে গেলে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন তারা। তবে পুলিশ সদস্যরা এ সময় নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

পার্কের পাহারার দায়িত্বে থাকা এসআই জাহাঙ্গীর জানান, পার্কের পাহারার দায়িত্বে প্রতিদিন পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত থাকেন। তবে পার্কের ভেতরে আলো না থাকা ও চারদিকের সীমানা প্রাচির ভাঙ্গা থাকার কারণে প্রতিনিয়ত পার্কের ভেতরে অসামাজিক কাজ চলে। একদিক থেকে ধাওয়া দিলে তারা অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যান। ফলে পুলিশ চেষ্টা করেও পার্কের ভেতরের অসামাজিক কাজ বন্ধ করতে পারছে না।
এসআই জাহাঙ্গীর জানান, পার্কটিতে সাধারণত আসেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত ছাত্ররা এবং রিকশা-ভ্যান চালকেরা।

পার্কের ভেতরে যারা অসামাজিক কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা কোনো উত্তর না দিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে যান।

তবে ভাসমান যৌনকর্মীদের নেত্রী (নাম প্রকাশ করা হলো না) অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ আমাদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নেয়। স্থানীয় বড় ভাইরাও আমাদের সহায়তা করে থাকেন।

এ পেশায় কেন এসেছেন জানতে চাইলে ‘জাহান্নামে আছি’ বলে চলে যান তিনি।

যৌনকর্মীদের দালাল চক্রের সদস্য নোয়াখালীর মমিন (৩৫) জানান, পার্কটিতে ভাসমান যৌনকর্মীদের নেত্রীত্বে থাকা মেয়েটি মিরপুরে থাকেন। আর অন্যান্যরা পার্কের সঙ্গে লাগোয়া ফুটপাতে পলিথিন দিয়ে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা ঘরে থাকেন। সকাল হওয়ার আগেই তারা এ স্থান ত্যাগ করে চলে যান।

তবে ফুটপাতে পলিথিন দিয়ে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা ঘরগুলোতে এসব যৌনকর্মীরা ছাড়াও কিছু অসহায় মানুষ থাকেন বলে জানান মমিন।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫