শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > ফলোআপ > স্ত্রী-মেয়েকে খুনের পর আত্মহত্যা নাকি তিনজনকে হত্যা?

ফলোআপ > স্ত্রী-মেয়েকে খুনের পর আত্মহত্যা নাকি তিনজনকে হত্যা?

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুরে নিহত কামাল তার স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেছেন তার বাবা। নিহত ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের বাবা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের হায়দরাবাদ গ্রামের হাশেম মিয়া বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে জয়দেবপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে জমি বিক্রির টাকা ও সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে কামালের ভাই ও স্বজনরা ওই তিনজনকে হত্যা করেছে বলে নিহত কামালের শ্বশুর বাড়ির লোকজন দাবী করেছে।

জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম ও নিহতের স্বজনরা জানায়, গত বৃহষ্পতিবার সকালে পুলিশ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের হায়দারাবাদ এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে কামাল হোসেনের (৪০) বাড়ি থেকে গলায় ফাঁস লাগানো কামালের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। এসময় ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা কামালের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাদের একমাত্র সন্তান সানজিদা কামাল ওরফে রিমির (১৯) গলা ও পেট কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত নাজমা ও রিমির শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের বেশ কয়েকটি চিহ্ন রয়েছে। রিমি রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্রী।

বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, ছোট ছেলে কামাল হোসেন আর্থিক সমস্যার কারণে মানষিক বিষন্নতায় ভুগছিল। সে গত ১৮ জুলাই রাত ১০টার পর হতে পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার আগে যে কোন সময় তার স্ত্রী নাজমা আক্তার ও তাদের একমাত্র মেয়ে মোসা. সানজিদা কামাল রিমিকে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করায়ে অথবা অন্য কোন উপায়ে অচেতন করে অথবা অচেতন ব্যক্তি চাকু দিয়ে গলা কেটে ও আঘাত করে হত্যা করে। স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার পর কামাল নিজেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। নিহত কামালের দুইহাতের আঙ্গুলে কাটা জখম রয়েছে। পরদিন (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কামালের ঘরের বাইরে লাইট জ্বলতে দেখে তার ভাবী মাহমুদা আক্তার এগিয়ে যায়। এসময় তালাবদ্ধ ঘরে কারো কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে উকি দিয়ে লাশ দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকজনকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

এব্যাপারে নিহত নাজমা আক্তারের ভাই কামাল হোসেন ও স্বজনরা জানান, প্রায় ২০/২২ বছর আগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাড়ীয়ালী গ্রামের হাজী নাজিম উদ্দিনের মেয়ে নাজমা আক্তারকে ভালবেসে বিয়ে করেন হায়দরাবাদ গ্রামের হাশেম মিয়ার ছোট ছেলে কামাল হোসেন। কিন্তু এ বিয়ে মেনে নেয়নি কামালের পরিবার। এক পর্যায়ে বাবার দেয়া জমিতে ঘর নির্মাণ করে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করে কামাল। সে ঝুট ও জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতো। তাদের একমাত্র সন্তান সানজিদা কামাল ওরফে রিমির (১৮) রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্রী। গত কয়েক মাস আগে কামাল তার বড় ভাই দেলোয়ার হোসেনের মাধ্যমে পৈত্রিক ৩৫ শতাংশ জমি প্রায় ৭০লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এ জমি বিক্রির জন্য দেলোয়ার ১১ লাখ টাকা কামালের কাছে দাবী করে। কিন্তু জমি বিক্রির টাকা কামালকে পরিশোধ না করে দেলোয়ার নানা টালবাহানা করতে থাকে। এ নিয়ে গত ১০/১২দিন আগে কামাল তার বড় ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকা দাবী করলে দু’ভাইয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও ঝগড়া বিবাদ হয়। এলাকাবাসী তাদের দু’জনকে থামিয়ে দেন। এদিকে বড় ভাই দেলোয়ারের আমন্ত্রণে কামাল তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ঘটনার রাতে (১৮ জুলাই) দেলোয়ারের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেন। খাওয়া দাওয়া শেষে রাতে তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসেন। পরদিন সকালে তাদের তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। কামালের স্বজনরা সকালে নিহতদের লাশ দেখতে পেলেও দুপুরে নিহত নাজমার ভাইদের সংবাদ দেওয়া হয়। গলায় ফাঁস লাগানো কামালের লাশ ঝুলে থাকলেও তার পা মাটিতে স্পর্শ করেছিল। কামালের দু’হাতের আঙ্গুলে কাটা ও জখম রয়েছে। এছাড়াও নাজমা ও মেয়ে রিমির গলা ও পেট কাটাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব বিরোধের জের ধরে জমি ও টাকা আত্মসাৎ করতে কামালের ভাই দেলোয়ার হোসেন ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে কামাল ও তার স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে নিহত কামালের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার অভিযোগে নিহত ছেলের বিরুদ্ধে তার বাবা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে কামালের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন এ তিন খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, বাবার দেয়া ৩৮ শতাংশ জমির মধ্যে ৫ কাঠা জমি বিক্রির জন্য কামাল দু’ক্রেতার সঙ্গে মাসখানেক আগে বায়না রেজিষ্ট্রি করে। রেজিষ্ট্রি দলিলে সনাক্তকারী হিসেবে আমার স্বাক্ষর রয়েছে। তবে আমার সঙ্গে অর্থনৈতিক বা জমি নিয়ে কামালের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই। এছাড়াও ঘটনার রাতে বিনা আমন্ত্রণেই স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কামাল আমার বাড়িতে বেড়াতে এসে খাওয়া দাওয়া করে চলে যায়। পরদিন সকালে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে হায়দরাবাদ এলাকার কৃষক হযরত আলী (৭৫) বলেন, কামাল হোসেনের পরিবারে মা-মেয়ে বা স্ত্রীর সাথে কোনো বিরোধ এলাকাবাসী হিসেবে আমরা শুনিনি। নিরব, শান্তিপ্রিয় ও গোছানো একটি পরিবার ছিল কামাল হোসেনের। সে তার বাবা ভাইয়ের সাথেও কোনো বিবাদে জড়িয়েছে বলের আমরা শুনিনি।

এদিকে শুক্রবার ময়না তদন্ত শেষে নিহত কামাল হোসেন ও তার মেয়ে সানজিদা কামাল ওরফে রিমিকে হায়দরাবাদ গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে পাশাপাশি কবরে এবং নাজমা বেগমকে বাড়ীয়ালী গ্রামের পৈত্রিক বাড়ির গোরস্থানে দাফন করা হয়।