শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > প্রাথমিক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণে ধীরগতি

প্রাথমিক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণে ধীরগতি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ প্রাথমিক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বা শ্রেণীকক্ষ নির্মাণে ধীর গতি ভর করেছে। দুই বছরে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র দেড় হাজার শ্রেণীকক্ষের। ঘোষিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে ৩৭ হাজার ৬শ’ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নির্মাণ সম্পন্ন হবে কি-না তা নিয়ে খোদ মন্ত্রণালয়ই সন্দিহান। দেশের নির্বাচিত ৩৭ হাজার ৬শ’ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। লক্ষ্য পূরণে মন্ত্রণালয় কাজ করতে থাকলেও খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি।

এ ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের জন্য ডিজিটাল উপকরণ ক্রয়ে টেন্ডার আহ্বানে সময় ক্ষেপণ, উপাদান ক্রয়ে দীর্ঘসূত্রতা এবং স্কুল নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাব অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে ৮ হাজার ৫শ’ স্কুল নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ৫০৩টি মডেল স্কুল এবং ১ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ শেষ হয়েছে।

অবশিষ্ট ৭ হাজার স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে টেন্ডার বিষয়ক সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই এগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, প্রাথমিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় সব করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর, একটি মডেম এবং সাউন্ড বক্স দিয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ সাজানো। শ্রেণীকক্ষে ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে শিক্ষকরা ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক কনটেন্ট ডাউনলোড করে শিক্ষার্থীদের পড়ান। মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে ইন্টারনেট বিল বাবদ স্কুলগুলোকে ৪৬০ টাকা দিচ্ছে। আর যেসব কনটেন্ট এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে সেগুলোও শিক্ষার্থীদের দেখানো হয়ে থাকে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষে।

একেকটি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯শ’ টাকা। মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। মুখস্ত বিদ্যার চিরাচরিত অনুশীলন থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে আনাই এর লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যেসব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ গড়ে তোলা হয়েছে সেসব স্কুল পরীক্ষায় ভালো ফল করছে। এই ফল মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ গড়ে তোলার কাজে গতি আনবে। আর যদি তা না হয়, তাহলে ঘোষিত সময়ের মধ্যে ৩৭ হাজার ৬শ’ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ গড়ে তোলা সম্ভব নাও হতে পারে।

অন্যদিকে দেশের ২৩ হাজার ৫শ’ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সরকার এরই মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ২০ হাজার ৫শ’ মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করেছে। চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যে ৩ হাজার মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের কথা রয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত ‘কনটেন্ট’ এখনো তৈরি হয়নি। শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরির প্রতিও সরকারকে সমান মনোযোগী হতে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার। তিনি প্রশ্ন করেন, কনটেন্ট না থাকলে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? তিনি আশাবাদী খুব দ্রুতই কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে একটা বিশাল অগ্রগতি হবে। তিনি মনে করেন, কনটেন্ট হিসেবে এখনো যা আছে তা কিন্তু একেবারে অপ্রতুল নয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণে গতি থাকলেও গতি নেই প্রাথমিকে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের। তাদের অভিমত, শহর ও গ্রামের মধ্যে শিক্ষায় বৈষম্য দূর করতে হলে দ্রুত গতিতে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। সূত্র-বেঙ্গলিনিউজটোয়োন্টিফোর.কম