শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > প্রহলাদপুর ইউপি নির্বাচন > ধানের শীষের মনোবল দুর্বল, নৌকার গতি প্রবল

প্রহলাদপুর ইউপি নির্বাচন > ধানের শীষের মনোবল দুর্বল, নৌকার গতি প্রবল

শেয়ার করুন

॥ সৈয়দ মোকছেদুল আলম ॥
গাজীপুর: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চলতি হ্ওায়া বইছে গাজীপুরেও। জেলার শ্রীপুর উপজেলার আওতাধীন আটটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে চলতি মাসের ২৩ এপ্রিল।
সম্প্রতি পরিবর্তন হওয়া আইনে এবারই প্রথম চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সরাসরি দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোন প্রার্থী কাগজেপত্রে বা প্রত্যক্ষভাবে দলের নাম ও প্রতীক ব্যবহার করতে পারতেন না। সংশোধিত আইনে এ বাধা দূর হয়ে যাওয়ায় এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মর্যাদার লড়াই হিসেবে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ কারণে, জাতীয় রাজনীতির প্রভাব মাঠ পর্যায়েও ডালপালা বিস্তার করছে। তাই মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে। প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হাওয়াও মূলত বইছে আ’লীগ ও বিএনপি-র প্রার্থীকে কেন্দ্র করে। এই লড়াইটাও আ’লীগের দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ ও চির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র ‘ধানের শীষ’ এর মধ্যে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, আসন্ন প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাঁরা হলেন- আ’লীগের মোঃ নূরুল হক আকন্দ, বিএনপি-র আবু সাইদ আকন্দ, জাসদের খন্দকার হাজী শামছুদ্দিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ ফরহাদ হোসেন, এড. আবুল কালাম আজাদ, হাফিজ উদ্দিন খন্দকার ও জাহাঙ্গীর হোসেন আঙ্গুর। এর মধ্যে শেষ দিন গত ৭ এপ্রিল হাফিজ উদ্দিন খন্দকার তাঁর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাইদ আকন্দ বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত। এর আগে নির্বাচন করে তিনবার পরাজিত হন। পরে ২০১১ সালে চতুর্থ দফার প্রতিদ্বন্দ্বীতায় প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে, প্রহলাদপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মোঃ নূরুল হক আকন্দ নিজ দলের মনোনীত প্রার্থী। তিনি টানা ১৩ বছর ইউনিয়ন আ’লীগের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময়ে দলের সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী করার পেছনে তাঁর নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত হাল নাগাদ তালিকা অনুযায়ী প্রহলাদপুর ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৩৯৫ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১০ হাজার ৩২৮ জন। এই ইউনিয়নে ৯টি সাধারণ ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে দশটি কেন্দ্রের ৫২টি কক্ষে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র ও এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমানার শেষ প্রান্তে প্রহলাদপুর ইউনিয়ন। শ্রীপুর থানা ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে দূরত্ব প্রায় ৩০ কিঃ মিঃ। অন্যদিকে, মাত্র ৫ কিঃ মিঃ পথ দূরে দক্ষিণ-পশ্চিমে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। জেলার এই প্রাণকেন্দ্র ঘিরে রয়েছে অন্যান্য সরকারি-বেসরকরি ও স্বায়ত্ব শাসিত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ।
ব্যবসা-বাণিজ্য,অফিস-আদালত, শিক্ষা ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা শ্রীপুরের চেয়ে গাজীপুরে বেশি। এ কারণে গাজীপুরের সাথে প্রহলাদপুরের মানুষের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। প্রহলাদপুরের অসংখ্য অবস্থাসম্পন্ন, সমাজের অগ্রগন্য, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী ্ও উচ্চাকাঙ্খী লোক গাজীপুর শহর কেন্দ্রে বাস করেন।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপুর প্রহলাদপুরে নিরিবিলি পরিবেশ। এই ইউনিয়নের ৮০% মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষি নির্ভর। এখানের উৎপাদিত ধান, টাটকা শাক-সবজি ্ও বিভিন্ন রকম ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে গাজীপুর জেলা শহরের নিকটবর্তী বাজার গুলোতে। তাই প্রহলাদপুরের মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে শহরের মানুষের নির্ভরতা ্ও প্রয়োজনীয়তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। এসব কারণে প্রহলাদপুরের নির্বাচনী হ্ওায়া শহরের মানুষের মন্ওে দোলা দিয়ে যায়। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার করে নেয়। তাই প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল জানার আগ্রহ ্ও কৌতুহল নিয়ে লোকজন গাজীপুর শহর্রে বিভিন্ন স্থানে আলোচনায় মাতেন। হোটেল, রেস্তোরাঁ আর ফুটপাথে আড্ডায় জড় হন। ঝড়্ তুলেন বাষ্পায়ীত ধূয়ার চায়ের কাপে।
মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ করে ধারণা প্ওায়া যায়, জাতীয় রাজনীতির ঋণাত্বক প্রভাব পড়েছে গাজীপুরের বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও। টানা সাত বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় মামলার ভারে জর্জরিত বিএনপি নেতা-কর্মীরা রয়েছেন ভয় ও আতঙ্কে। নতুন করে আর কোন ঝামেলায় জড়াতে চান না তাঁরা। ফলে একটা গা-ছাড়াভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে তাদের মধ্যে। তবে চারবার নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা পুঁজি করে বিএনপি প্রার্থী আবু সাইদ আকন্দ জনসংযোগের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আগে থেকেই তাঁর মাঠ অনেকটাই গোছানো। প্রতিকূল রাজনৈতিক আবহ্ওায়ায় কাজ করছেন নীরবে। নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলে জয়ের ব্যাপারে তাঁর কর্মী-সমর্থকরা যথেষ্ট আশাবাদী। আবু সাইদ আকন্দও একই কথা জানিয়েছেন বাংলাভূমিকে। তিনি জানান, নানা হুমকী-ধমকী-চোখ রাঙানিতে কর্মীরা মাঠে নামতে চাচ্ছে না। জোর জবরদস্তি করে ফলাফল প্রতিপক্ষ ছিনিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সবগুলো কেন্দ্রে তিনি ব্যাপক ব্যবধানে বিজয়ী হবেন Ñদৃঢ়তার সাথে এমন দাবিও করেছেন।
মানুষের মন ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। ভোটাররা শেষ পর্যন্ত কী করবেন আগে থেকে বলা যায় না। তবে কথাবার্তা, আলাপ আলোচনায় মনোভাব আঁচ করা যায়। বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাইদ আকন্দ তাদের কী দিয়েছেন, কী দিতে পারেন নি তা নিয়ে হিসেব-নিকেশ চলছে। আ’লীগ সরকার আমলে এই বিএনপি নেতা এলাকায় কতটা উন্নয়ন কাজ করতে পেরেছেন, ভবিষ্যতে কতটা পারবেন সে হিসাব নিয়েই মাথা ব্যাথা ভোটারদের।
ঈশারা-ইংগিতে নির্বাচনের চলতি হ্ওায়া বলছে, উন্নয়নের জন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধি অগ্রগণ্য; ভোটারদের মধ্যে এরকম মনোভাব তৈরি হয়েছে। এ কারণে মনোবল ও আত্মবিশ্বাস এর দিক থেকে এগিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের প্রার্থী-সমর্থক ও কর্মীরা। এ অবস্থায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আ’লীগ প্রার্থী মোঃ নূরুল হক আকন্দ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন ও ভোট প্রার্থনা করছেন। মাদক, চাঁদাবাজী, জমি দখলের মত বেআইনী ্ও সমাজবিরোধী কর্মকান্ড প্রতিরোধ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এলাকাবাসীকে। তাদের মধ্যে বেশ চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিজয় একরকম নিশ্চিত ধরে নিয়েই যেন মাঠ গুছাতে জনসংযোগ করছেন তাঁরা। দলীয় প্রতীক নৌকার রাজনৈতিক সুবিধাজনক পরিস্থিতি তাদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অনুকূল ¯্রােতে ভর করে তরী তটে ভেড়ানো এমন কী আর কঠিন কাজ? বাকী কেবল ভোট গ্রহনের আনুষ্ঠানিকতা!
পেছনে তাকালে সড়ক পথে গাজীপুর থেকে প্রহলাদপুর সরাসরি যাতয়াতের প্রধান অন্তরায় ছিল হানকাটা দিয়ে বহমান চিলাই নদী পারাপার হ্ওয়ার জন্য কোন সেতু না থাকার সমস্যা। ১৯৯০ সালে হানকাটা ব্রীজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর ২০১৪ সালে প্রহলাদপুরের মারতায় দুইটি ও নরুন এলাকায় একটি ব্রিজ এর কাজ সম্পন্ন হয়। এতে প্রহলাদপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। বর্তমানে ইউনিয়নের ভেতরে মানুষের আন্তযোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের জোর দাবি হচ্ছে, পায়ে চলার কাচা রাস্তাগুলো দ্রুত ব্রিকসলিং করার ব্যবস্থা নেয়া হোক।
মারতার দক্ষিণপাড়া, মারতা বাঘমারা ও মারতা চর এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত প্রায় ৫ হাজার মানুষ। এখানে প্রায় দুই হাজার পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা প্ওায়ার আশায় দীর্ঘ সময় ধরে তীর্থের কাকের মত দিন গুনছেন। সমস্যা সমাধানের জন্য মনে-প্রাণে খুঁজে বেড়াচ্ছেন রূপকথার সেই আলাদীনের আশ্চর্য চেরাগ-ওয়লাকে। এ প্রসঙ্গে গত ৭ এপ্রিল প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাইদ আকন্দ বাংলাভূমির প্রতিবেদককে বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে এমপি মহোদয়ের কাছ থেকে ডিও লেটার নিয়ে এসেছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি, খুব শিগইগরই বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।
প্রতাপপুর উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি মনিহারি দোকানের সত্ত্বাধিকারী নাছির উদ্দিন গত ৩ এপ্রিল নির্বাচন প্রসঙ্গে জানান, বিএনপি নেতা-কর্মীদের তেমন তৎপরতা এখন দেখা যায় না। এলাকায় মাদকের থাবা, চাঁদাবাজী ্ও জমি দখলের মত বেআইনী-সমাজবিরোধী কর্মকান্ড শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার মত লোকের প্রয়োজন অনুভব করছেন ইউনিয়নবাসী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন ধরনের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেন এবং এখানের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলেও অভিমত প্রকাশ করেন।