রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > প্রবীণদের নিয়ে হতাশা আওয়ামী লীগে

প্রবীণদের নিয়ে হতাশা আওয়ামী লীগে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে প্রবীণদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বেকায়দায় দল ও সরকার। প্রবীণদের কারও কারও বেফাঁস মন্তব্য ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে সরকারবিরোধীদের হাতে ইস্যু তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে দল থেকেই অভিযোগ উঠেছে। নিজ দলের বিশ্বাসের বাইরে গিয়ে বই লিখেও সমালোচনার ঝড় ওঠে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এসব নেতাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসনে দলীয় সমর্থকদের ভূমিকা নিয়ে মন্তব্যে দলের ভেতরে-বাইরে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা সরাসরি মুখ না খুললেও তারা বলছেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্য ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মতোই তিনি দল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছেন বলে তারা মনে করেন। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রবীণ নেতা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘুষ ‘অবৈধ’ নয়, দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য, সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকারের আলোচিত-সমালোচিত বই ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’, সরকারকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এইচ টি ইমাম প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তার পদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি দল ও সরকারের ক্ষতি করেছেন এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত দ্বিতীয়বারের মতো অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। শেয়ারবাজার থেকে যখন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব, যখন আত্দহত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে, তখন শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ‘শেয়ার মার্কেটে কোনো ইনভেস্টর নেই, সব জুয়াড়ি, ফটকাবাজ,’ ‘অ্যাই অ্যাম ফেডাপ…।’ শেয়ারবাজার থেকে যখন এক লাখ কোটি টাকারও বেশি কারসাজির মাধ্যমে লুট করে নেওয়া হয়েছে, ওই সময় এমন মন্তব্যকে বিনিয়োগকারীরা দেখেন নির্মম পরিহাস ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের ভাষা হিসেবে।
দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি সম্পর্কে মুহিত বলেছিলেন, ‘চার হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি বড় ঘটনা নয়।’ তার মন্তব্য নিয়ে সংসদেও তীব্র সমালোচনার শিকার হন।
একপর্যায়ে তিনি তার ভুল স্বীকার করে বলেন, ‘এ মুহূর্তে বোধ হয় আমি দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি।’ এ ছাড়া ‘বোগাস’ ও ‘রাবিশ’ শব্দ দুটি হরহামেশাই আউরিয়ে তিনি বেশ আলোচিত ও সমালোচিতও হয়েছেন।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী ‘ঘুষ অবৈধ নয়’ এমন মন্তব্য করলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। তবে সব কিছুকে ছাড়িয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও পবিত্র হজের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে হঠাৎ সব কিছু এলোমেলো করে দেন। আকস্মিকভাবে একটি ইস্যু সৃষ্টি করে তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেন সরকারকে। পরে জরুরি বৈঠক ডেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যপদসহ প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হওয়ার পর এভাবে দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনা এটাই প্রথম। আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে পরিকল্পনা মন্ত্রী ও মুক্তিবাহিনীর উপ-প্রধান ৮৪ বছর বয়সী এ কে খন্দকার। যিনি ‘৭১ থেকে ‘৭৫ পর্যন্ত এয়ার ভাইস মার্শাল ছিলেন। সম্প্রতি ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ বইয়ে তিনি লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ভাষণ শেষ করেছিলেন ‘জয় পাকিস্তান’ বলে। আর সশস্ত্র যুদ্ধের কোনো প্রস্তুতি ছিল না রাজনৈতিক নেতৃত্বের। তবে এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি অসত্য কথা লিখেছেন। এ ছাড়াও প্রবীণদের মধ্যে আরও যারা বিভিন্ন সময়ে দল ও সরকারকে বিব্রত করেছেন তাদের মধ্যে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অর্থ কেলেঙ্কারি, সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকিরের মাথা ন্যাড়া করার থেরাপিতেও সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।