শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > প্রথম ধাপে প্রার্থী ৩৯,৪৩০

প্রথম ধাপে প্রার্থী ৩৯,৪৩০

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় ৭৩৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ তিন পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩৯ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৫৬৮ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৭ হাজার ৯৪৭ জন ও সংরক্ষিত (মহিলা) সদস্য পদে ৭ হাজার ৯১৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের মধ্যে ১৬টি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৯০০ জন। এছাড়া ১ হাজার ৬৬৮ জন স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ২৫টি ইউনিয়ন পরিষদে শুধু আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ৭০টি ইউপিতে বিএনপির মনোনীত কোনো প্রার্থী নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, শাসক দলের বাধার মুখে তাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।

মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় থেকে ইউপি নির্বাচন সংক্রান্ত এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আগামী ২২ মার্চ ভোটগ্রহণ হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বিক্ষিপ্ত বাধা ও সহিংসতার অভিযোগ থাকলেও অধিকাংশ স্থানেই উৎসবমুখর পরিবেশে সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউপিতে সব সময় বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন। এবারও বিপুল সংখ্যক প্রার্থী হয়েছেন, যা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের কর্মকর্তাদের খাটুনি একটু বেশি হবে। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। নির্বাচনে আইন ও বিধি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হবে। আশা করছি, উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন শেষ হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঢালাও অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়, সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পাওয়া গেলে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তারা মঙ্গলবার জমা পড়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু করছেন। আজ (বুধবার) তা শেষ হবে। এতে যেসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল বা গ্রহণ করা হবে, তার বিরুদ্ধে আগামী ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারি আপিল করা যাবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ ওইসব আপিল নিষ্পত্তি করা হবে। আগামী ২ মার্চ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওই দিনই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। আগামী ৩ মার্চ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হবে প্রচারণা।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে ইসিতে নিবন্ধিত ১৬টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা, বিএনপি ধানের শীষ, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা লাঙ্গল এবং অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন। ৭৩৮টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ৭৪১ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনটি ইউপিতে এ দলটির দু’জন প্রার্থী হয়েছেন। গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার ইউপি নির্বাচনে ৬৬৮টিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপিদলীয় প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ১৪৮টি ইউপিতে প্রার্থী দিয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হুমকি ও বাধা পেয়ে দলটির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাদের বাধা দেয়া হয় এবং মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়।

এবার ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ছাড়াও জাসদের ৩০ জন, বিকল্প ধারা ৫ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ২৪ জন, জেপি’র ২০ জন, বিএনএফ’র ৭ জন, জেএসডি’র ১ জন, সিপিবি’র ৪ জন, তরিকত ফেডারেশনের ১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ২ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৪৫ জন, কল্যাণ পার্টির ১ জন, ন্যাপ’র ২ জন ও জাকের পার্টির ১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

জানা গেছে, স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়পত্র দাখিলকারী ১ হাজার ৬৬৮ জন প্রার্থীর বড় অংশই হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন। দুই দলের প্রার্থীরা তাদের জয়ের প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দল দুটি। এছাড়া নিবন্ধন স্থগিত থাকায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন এ নির্বাচনে। তফসিল ঘোষণার পর ২৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার আভাস জানিয়ে কমিশনে চিঠি দিয়েছিল। ওই চিঠিতে মনোনয়নপত্র দেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছিল। কিন্তু প্রথম ধাপে ১৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। এর আগে পৌর নির্বাচনে ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।

২৫ ইউপিতে আ’লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় : একক প্রার্থী হওয়ায় ২৫টি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ মনোনীতরা ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ভয়-ভীতি দেখানো, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা, বাধা দেয়ার কারণে অনেক স্থানে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একই ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশংকা তাদের। যেসব ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছে, সেগুলো হল- ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নাচনমইল, বাগেরহাটের মংলা উপজেলার সোনাইলতলা, রামপাল উপজেলার মালিকেরবে, চিতলমারির চরবানিয়ারি, বড়বাড়িয়া, হিজলা, সন্তোষপুর, কলাতলা, ফকিরহাট, মুলঘর, মোল্লাহাটের আটজুড়ি, কোদালিয়া, কুলিয়া, উদয়পুর, বেমরতা, বিষ্ণুপুর, ডেমা, গোটাপাড়া, যাত্রাপুর, মোড়েলগঞ্জের পঞ্চকরণ, বরগুনা সদরের বুড়িচর, ভোলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কুতুবপুর, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার জৈনসার এবং সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপল ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আলমবাড়ি ইউপিতে। কোনো দল একাধিক প্রার্থী দিলে সংশ্লিষ্ট দলের সবার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
-যুগান্তর।