আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় রক্তাক্ত শ্রীলংকা। শোকে স্তব্ধ দেশটির লোকজন। এ হামলা কেন হলো, কীভাবে হলো- এসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। সবার মুখে মুখে শুধু একই জল্পনা।
ভয়াবহ এ হামলায় মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে ফিরে এসেছেন বেশ কয়েকজন মানুষ। মৃত্যুঞ্জয়ী দুই প্রত্যক্ষদর্শী হামলা স্বচক্ষে দেখার বর্ণনা দিয়েছেন গণমাধ্যমে। তাদের মধ্যে একজন হামলাস্থল চিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের ব্যবস্থাপক ও অন্যজন শ্রীলংকান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। চিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের ব্যবস্থাপক বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, সময়টা ছিল সকাল সাড়ে ৮টা। এই সময় এমনিতেই হোটেলে ব্যস্ততা থাকে। হামলাকারী বুফের সারিতে দাঁড়ানো ছিল। তারা মানুষের অপেক্ষায় ছিল। পরে সারির সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে তারা বিস্ফোরণ ঘটায়। সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। চারদিকে শুধু শব্দ আর শব্দ।
শ্রীলংকান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক অধ্যাপক কিয়েরান আরাসারাতœম জানান, হামলার সময় তিনি রেস্তোরাঁর দ্বিতীয় তলায় ছিলেন। বিবিসিকে তিনি জানান, বিস্ফোরণের ভয়াবহ শব্দ শুনে তিনি ১৮তলা থেকে নিচতলায় দৌড়ে নামেন।
কিয়েরান বলেন, সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, একেবারে বিশৃঙ্খল অবস্থা। আমি তাকিয়ে দেখি চারদিকে শুধু রক্ত আর রক্ত। সবাই শুধু ছোটাছুটি করছিল। এদের অনেকেই জানত না কী ঘটেছে আসলে। মানুষের শার্টে রক্ত। একজনকে দেখলাম এক মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিতে। দেয়াল ও মেঝে রক্তে ঢেকে গেছে।
কিয়েরান জানান, যদি নাস্তার জন্য তিনি একটু দেরি না করতেন, তা হলে বিস্ফোরণে হতাহতের মধ্যে তিনিও থাকতেন। তিনি বলেন, আমি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম শিশুদের মরদেহ দেখে। শিশুদের রক্তাক্ত শরীর দেখা মর্মান্তিক। ৩০ বছর আগে শরণার্থী হিসেবে শ্রীলংকা ত্যাগ করি আমি। কখনও ভাবিনি এমন দৃশ্য আমাকে আবার দেখতে হবে।
প্রসঙ্গত শ্রীলংকায় রোববারের ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় অন্তত ২৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০০ জনের বেশি মানুষ। বোমা হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে কারা হামলা চালিয়েছে তা এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি দেশটির সরকার।
সকালে দ্বীপরাষ্ট্রটির রাজধানী কলম্বো এবং শহরতলির তিনটি গির্জা ও দেশের বড় তিনটি হোটেলে এ হামলা হয়। পরে আরও দুটি স্থানে হামলা হয়। গতকাল ছিল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় উৎসব ইস্টার সানডে। হামলার সময় তিন গির্জায় ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলছিল।