শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতি করবো না

প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতি করবো না

শেয়ার করুন

জেলা প্রতিনিধি, নরসিংদী ॥ প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। বলেছেন, প্রতিশোধের রাজনীতি করবো না। আমাদের রাজনীতি হবে জনগণের সেবা, কল্যাণ ও উন্নতির জন্য। সব ধরনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করে রেখেছি। সময় এলেই আমরা নতুন ধারার রাজনীতির রূপরেখা প্রকাশ করবো। দিনভর বৃষ্টি উপেক্ষা করে জনসভায় সমবেতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা না দিলে লাগাতার হরতাল, অবরোধসহ সব কর্মসূচি আসবে। দরকার হলে আপনারা এ রাস্তাঘাট বন্ধ করে বসে থাকবেন। সরকারকে বলতে চাই, আমরা কারও কথায় ধার ধারি না। আমরা দেশের মানুষের কথায় চলবো। কোন দেশ কি বললো তাকে কিছু যায় আসে না। আমরা বলেছি, বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবো না। তবে সরকার পরিবেশ তৈরি করে আলোচনার আহ্বান জানালে জাতীয় স্বার্থে আমরা অবশ্যই সাড়া দেবো। ‘দুর্নীতিকে সবচেয়ে বড় শত্রু’ আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতি নির্মূলে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেবো। এমনকি আমরা ক্ষমতায় গেলে দলের এমপি-মন্ত্রীদেরও সম্পদের হিসাব নেয়া হবে। নরসিংদী পৌর শিশুপার্ক মাঠের জনসভায় খালেদা জিয়া সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করেন। মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে দেশব্যাপী জনসংযোগের অংশ হিসেবে গতকাল নরসিংদী থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতির ডাক দিলেন বিরোধী নেতা। বিকাল পাঁচটা ২০ মিনিট থেকে টানা ৪০ মিনিটের বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাবি আদায়, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, নানা প্রতিশ্রুতি ও সরকারের প্রতি গণহত্যা, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বিরোধী নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। অনেক আগেই আদালত তাকে রংহেডেড বলে উপাধি দিয়েছিল। মাথা খারাপ হলে তার চিকিৎসা ও বিশ্রাম দরকার। আমরা তার শুভাকাঙক্ষী, আমরা তার ভাল চাই।
খালেদা জিয়া নরসিংসীবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা প্রধানমন্ত্রীকে আজকে প্রশ্ন করুন- ১৯৯৬ সালে কি সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল? সেদিন তিনি গায়ের জোরে বলেছিলেন, বিএনপির অধীনে নির্বাচনে যাবো না, নির্বাচন হবে না, হতে দেবো না। এমনকি তিনি ১৭৩ দিন হরতাল করেেিলন। ভাঙচুর, নৈরাজ্য চালিয়েছিলেন। বাসে গানপাউডার দিয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছেন। এখন তিনি কেন সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন? খালেদা জিয়া বলেন, সংবিধানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলই। তাহলে কেন প্রধানমন্ত্রী তা তুলে দিলেন? এখন তিনি আদালতের দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু আদালত যে রায় দিয়েছিল সেখানেও আরও দু’বার তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আদালতের সে কথাও না মেনে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী একবারও আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। সুশীল সমাজের সঙ্গেও আলোচনা করেননি।
খালেদা জিয়া বলেন, চিরদিন ক্ষমতায় থাকতেই শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধন করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তার সরকারের মন্ত্রীরা দায়িত্বে থাকবেন, এমপিরা এমপি থাকবেন। তাদের অধীনেই নির্বাচন হবে। তিনি জনতার কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সে নির্বাচন কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এ সময় লাখো কর্মী-সমর্থক হাত নেড়ে ‘না-না’ জবাব দেন। ফের তিনি প্রশ্ন করেন, সংসদ রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন কি হয়? কিন্তু এমন নির্বাচন কোন দেশে হয় না, এদেশেও হবে না।
খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, সংসদে আপনাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। সংসদে বিল এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করুন। সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। আমরা কোন অযৌক্তিক দাবি করছি না। সকল দল অংশগ্রহণ করে সে নির্বাচন দাবি করছি। খালেদা জিয়া এ সময় দুই প্রধান জোটের বাইরে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কথা উল্লেখ করে বলেন, শুধু ১৮ দলীয় জোটই নয়। বিকল্পধারা, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ ও ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম নেতারাও বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তিনি কয়েকটি গণমাধ্যমের জরিপের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিন-চার মাস আগেই একটি জরিপে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করেছিল। এখন সে সংখ্যা আরও বাড়বে।
বিএনপি চেয়ারপারসন সমবেতদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বলুন, আমরা কি অযৌক্তিক দাবি করছি? আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ নেবো না। তার মানে কি এক দলীয় নির্বাচন হবে? না। একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না। কারণ একদলীয় নির্বাচন মানেই বাকশাল। এ দেশে আর বাকশাল করতে দেয়া হবে না। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা বারবার আলোচনার কথা বলেছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাদের আলোচনার সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপরও তিনি আলোচনার পরিবেশ তৈরি করে, যদি আলোচনা করতে চান আমরা সাড়া দেবো।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চায় কেন? শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে চান না কারণ ক্ষমতায় না থাকলে পুলিশকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। র‌্যাব বা সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। যারা প্রিসাইডিং অফিসার হয়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, ডিসি, এসপি, টিএনওদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। ক্ষমতায় না থাকলে কেউ তার কথা শুনবেন না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে তাদের বিশেষ বাহিনী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, গুণ্ডালীগ এসব আর থাকবে না। তারা পালিয়ে যাবে। খালেদা জিয়া নরসিংদীবাসীকে বলেন, তাদের অধীনে নির্বাচন হলে এসব বাহিনী ভোটকেন্দ্রে বাধার সৃষ্টি করে। এজেন্টদের বের করে দেয়।
বিরোধী নেতা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করে বলেন, আমাদের একটি আজ্ঞাবহ, অপদার্থ, মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন আছে। তারা শুধু জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর করে। একটি দৈনিকের সংবাদ দেখিয়ে তিনি বলেন, আরপিও লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন বলে, তারা অসহায়। খালেদা জিয়া বলেন, অসহায় হলে পদত্যাগ করো না কেন? জ্বি হুজুর মার্কা কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন। ফুটবল খেলার জন্যও সমান মাঠের দরকার। নির্বাচনও একটি খেলা। এর জন্যও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার। তারা যদি উঁচুতে থাকেন, আমরা নিচুতে থাকি তবে কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তিনি বলেন, সরকার যদি ভাল কাজ করে থাকে তবে মানুষ তাদের ভোট দেবে।
বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া বলেন, সমবেতদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, কি আমি ঠিক কথা বলিনি? উপস্থিত জনতা তার কথার সমর্থন জানান। এরপর তিনি বলেন, নরসিংদীর পর রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশালে জনসভা রয়েছে। আমি আপনাদের এই বার্তা তাদেরকে পৌঁছে দেবো। বলবো, নরসিংদীর জনগণ প্রস্তুত আছে।
খালেদা জিয়া অঙ্গীকার করে বলেন, নরসিংদীতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করবো। নরসিংদীতে এখন যে ট্রেন রয়েছে তা অনেক পুরনো। আমরা ঢাকার সঙ্গে ফার্স্ট ট্রেন চালু করবো। সবাই সহজভাবে কম সময়ে যেন যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া আমরা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করবো। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করব। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের ফ্রি শিক্ষার ব্যবস্থা আমরাই করেছি। ভবিষ্যতে সে সুযোগ আরও বাড়ানো হবে। শিক্ষকদের মান বাড়ানো হবে। স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন আনবো। এ সরকার একটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারেনি। কিন্তু আমরা দু’টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো।
বিরোধী নেতা নরসিংদীবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বর্তমান সরকারের ৫ বছরে আপনাদের নরসিংদীতে কোন কাজ হয়েছে? হয়নি। সারাদেশের অবস্থাই এমন। কোন কোন উন্নয়ন হয়নি। তাহলে এ টাকা যায় কোথায়? এ টাকা যায় সরকার দলের এমপি-মন্ত্রীদের পকেটে। আমার শোনা কথা, তারা অনেক টাকার মালিক। তাদের প্রত্যেকেই কানাডা ও মালয়েশিয়া বাড়ি করেছেন। অবস্থা বুঝেই তারা কেটে পড়বেন। তারা এখন এদেশে থাকা ও রাজনীতি করা নিয়ে আর চিন্তা করছেন না। কারণ তারা এখন অগাধ টাকার মালিক।
আরেকটি পত্রিকা দেখিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকারের আমলে ২৩ হাজার মানুষ খুন হয়েছে। প্রতিদিন গুম, খুন, হত্যা চলছে। এ সরকারের বড় গুণ হত্যা ও গুম। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা নাকি অনেক ভাল করেছেন। ভাল কাজ কি মানুষ খুন? খালেদা জিয়া বলেন, নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান খুন হয়েছে। তার খুনিকে এ সরকারকে ধরেনি। ধরতে গেলে তো আওয়ামী লীগ বেকায়দায় পড়ে যাবে। তবে ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রকৃত খুনিদের ধরা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, সিলেটে ১০ মিনিটে স্বর্ণের দোকান লুট হয়েছে। কারা করেছে তা সরকার জানে। কিন্তু ধরেনি। কারণে ধরলে যদি বেরিয়ে পড়ে তারা আওয়ামী লীগের লোক।
খালেদা জিয়া বলেন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের এজেন্সি। এজন্যই এখন সাংবাদিকরা সত্য কথা বলতে ও লিখতে পারে না। ভয় পায়। মানবাধিকার সংগঠনের নেতা আদিলুর রহমানকে সরকার অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। পৃথিবীর সবাই তার মুক্তি দাবি করছে। আমরাও তার মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
খালেদা জিয়া বলেন, শেয়ারবাজারে ৩৩ লাখ মানুষ পথে বসেছে। ডেসটিনি ও হল-মার্কের টাকা কোথায় গেল? আওয়ামী লীগ সরকারকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা তো নির্বাচনী ইশতেহারে কয়েকটি কথা বলেছিলেন। মইন-ফখরুদ্দীনের আমলের দ্রব্যমূল্য কমাবেন। দ্রব্যমূল্য কি কমিয়েছেন? আর এ মইন-ফখরুদ্দীন কে? তারা ছিলেন শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল। তাই তিনি তাদের গ্রেপ্তার, হত্যা ও অর্থ আদায়সহ সকল কাজের বৈধতা দিয়েছেন। তাদের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যত মামলা দেয়া হয় তা তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে নতুন নতুন মামলা।
লাখো মানুষের সমাবেশে তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে খালেদা জিয়া বলেন, সমাবেশে আমি তরুণদের উপস্থিতি বেশি দেখতে পাচ্ছি। আওয়ামী লীগ বলেছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। চাকরি দিয়েছে? সমস্বরে জবাব আসে, ‘না না।’ তাহলে কি প্রধানমন্ত্রীকে আমরা মিথ্যাবাদী বলতে পারি না। অবশ্যই পারি। তিনি বলেন, কোন চাকরি তো দিতে পারেনি উল্টো প্রবাস থেকেও শ্রমিকরা ফিরে আসছে। কারণ বিদেশীদের সঙ্গে এ সরকার এমন খারাপ সম্পর্ক করেছে যে তারা আর আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে না। ফিরিয়ে দিচ্ছে। বিরোধী নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে কৃষকদের বিনামূল্যে সার দেবে বলেছিল। কিন্তু এখন সারের দাম আমাদের সময়ের চেয়েও তিন গুণ বেড়েছে। আগে ৩০০ টাকায় যে সার পাওয়া যেতো তার দাম এখন ১১৬০ টাকা। একইভাবে বিদ্যুতের কথা বলে সরকার কুইক রেন্টালের মাধ্যমে জনগণের টাকা লুটছে। কিন্তু মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এ নরসিংদীতে কয়েকদিন আগে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষ প্রতিবাদ করেছে। আর এ সরকারের আমলে ৫০০ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় সংবিধানের কথা বলে। অনির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা দেয়া যাবে না বলেন। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশনে দু’জন অনির্বাচিতকে বসানো হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন, কেন নির্বাচিত মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে কেন সরানো হয়েছে। তাকে সরানোর পর নির্বাচন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুঝতে পেরেছে নির্বাচন দিলে সেখানেও তাদের খারাপ পরিস্থিতি হবে। তাই নানা টালবাহানা করে নির্বাচন দেয়া হয়নি।
খালেদা জিয়া বলেন, গার্মেন্ট খাতে চীনের পর বাংলাদেশের অবস্থান। কিন্তু বাংলাদেশ দিনদিন পিছিয়ে যাচ্ছে। আপনারা রানা প্লাজার ঘটনা দেখেছেন। তার মালিক ছিল সরকার দলের। মালিককে সরকার ধরেছে কিন্তু কারাগারে জামাই আদরে রেখেছে। তবে তার সঙ্গী মুরাদ জংকে এখনও ধরেনি। আরও জানা গেছে, ওই রানা প্লাজায় শুধু গার্মেন্টই ছিল না। সেখানে নাকি মাদকের আড্ডাও ছিল। কয়েকদিন আগে তার আশপাশ থেকে মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বিডিআর বিদ্রোহ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের সময় তা দমনের জন্য সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমতি চেয়েছিল। সেদিন প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিলে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তার জীবন বেঁচে যেতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী খুনিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। শেরাটন থেকে খাবার নিয়ে তাদের খাইয়েছেন।
হেফাজতের আন্দোলন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন বিরোধী নেতা। তিনি বলেন, হেফাজত কেন হলো? ইন্টারনেটে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে নাস্তিক ব্লগাররা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিল। মুসলমান বা হিন্দু যেই হোক ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এলে তারা প্রতিবাদ করে। এটা যৌক্তিক প্রতিবাদ। হেফাজতের আলেমরা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করেছিল। তাদের দাবি ছিল ব্লগারদের গ্রেপ্তার করা হোক। সমাবেশে এরা ছিলেন আলেম, ওলামা, এতিম ও সাধারণ মানুষ। তাদের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। ছিল কোরান, জায়নামাজ ও তসবিহ। আওয়ামী লীগের গুণ্ডারাই তাদের প্রথম আক্রমণ করে। খালেদা জিয়া বলেন, হেফাজতের নেতারা বলেছিল তারা শাপলা চত্বরে তাদের নেতা আল্লামা শফীর জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি আসবেন, বক্তব্য ও পরবর্তী নির্দেশনা দিলে তারা চলে যাবেন। কিন্তু সরকার পরিকল্পিতভাবে আল্লামা শফীকে আটকে রাখে। রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন বিদ্যুৎ বন্ধ করে, গণমাধ্যমকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে সশস্ত্র অভিযান চালানো হয়। সরকার বলছে, সেদিন কোন লোক মারা যায়নি। কিন্তু যে অভিযানে ১ লাখ ৫৫ হাজার গুলি ব্যবহৃত হয়েছে সেখানে কোন লোক মারা যায়নি এটা মিথ্যা। কেউ বিশ্বাস করবে না। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এ গণহত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
অন্য নেতারা যা বলেছেন
জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের সভাপতিত্বে সমাবেশে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, দাবি আদায়ে আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সারাদেশের সকল রাজপথ, নৌপথ ও রেলপথ অবরোধ করা হবে। বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, সরকার বলেছে তারা নাকি সারাদেশে উন্নয়নের বীজ বুনেছে। সরকারের উন্নয়নে আমরা কয়েকটা বিলবোর্ড বানাবো, একটি হচ্ছে শেয়ারবাজারের, হল-মার্কের, ডেসটিনির, সর্বশেষটা বানাবো পদ্মা সেতুর। যেখানে আবুল হোসের ছবি থাকবে। খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা ইসহাক আহমেদ বলেন, সরকারের ভোট চুরি করতে যে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সবাইকে রাজপথে নামতে হবে। ইসলামিক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে নামাজ-রোজা কিছুই করা যাবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে সরকার পাঁয়তারা করছে। বিএনপিকেও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার আবার একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায়। আন্তর্জাতিক আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার দাবি করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের ব্যর্থতার কারণে ভারত প্রহসনমূলক বিচার করেছে। জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য শামসুল ইসলাম এমপি বলেন, সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে সারাদেশের পাখির মতো মানুষ হত্যা করেছে। সরকার জানে, তাদের অপকর্মের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের প্রার্থীদের জামানত বাতিল হবে। জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেন তা অশ্রাব্য।
এছাড়া সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নরসিংদী জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ওসমান ফারুক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব আবুল হাসনাত আমিনীসহ বিএনপি ও ১৮দলীয় জোটের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেন।