সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > প্রতিবেশী দেশে নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে চলছে ম্যাগি!

প্রতিবেশী দেশে নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে চলছে ম্যাগি!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নেসলের ‘ম্যাগি নুডলস’-এ বিষাক্ত ও মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকারক উপাদান থাকায় ভারত, সিঙ্গাপুর ও নেপালে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরীক্ষা করে মাত্রাতিরিক্ত সিসা থাকায় সম্প্রতি এ তিন দেশে পণ্যটি নিষিদ্ধ করা হয়। নেসলে ইতোমধ্যে ভারতের বাজার থেকে তাদের পণ্যটি প্রত্যাহারও করেছে। সেখানে আদালতের আশ্রয় নিয়েও তারা পণ্যটিতে ক্ষতিকারক উপাদান নেই তা প্রমাণ করতে পারেনি। ফলে আদালত নেসলের ম্যাগি নুডলস নিষিদ্ধের পক্ষে রায় দিয়েছে। তবে এসব দেশে পণ্যটি নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে ম্যাগি নুডলস চলছে স্বাভাবিকভাবেই। আরো একধাপ এগিয়ে অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে ‘বাংলাদেশ টেস্টিং এন্ড স্ট্যান্ডার্ডডাইজিং ইনস্টিটিউট’ (বিএসটিআই) ম্যাগিতে ক্ষতিকারক উপাদান নেই বলে ‘ভালত্বের’ সনদ দিয়েছে।
আর নেসলেও বাংলাদেশে পণ্যটির বাজার ধরে রাখতে বিএসটিআই-এর ভালত্বের সার্টিফিকেটকে উদ্ধৃত করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ভোক্তারা যেমনি বিভ্রান্ত হচ্ছে, তেমনি ক্ষতির আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। এছাড়া ম্যাগিতে ক্ষতিকর সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা অনেক বেশি বলেই বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে। ফলে বিএসটিআই-এর এই পরীক্ষায় আস্থা রাখতে পারছে না ভোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (এফএসএসএআই) একাধিকবার পরীক্ষায় ম্যাগিতে সিসা ও ক্ষতিকারক রাসায়নিকের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। কিন্তু বিএসটিআই বলছে ম্যাগিতে ক্ষতিকারক কিছুর প্রমাণ পাচ্ছে না। যে কারণে একই প্রতিষ্ঠানের একই পণ্য ভারতে নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে এখনও কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি। বরং অতিরিক্ত ছাড়ের প্রলোভন দেখিয়ে ম্যাগি নুডলস বাজারজাত করছে নেসলে।
সম্প্রতি কোম্পানিটি বিএসটিআই-এর সনদ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নুডলস নিরাপদ বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।ভারতের উত্তর প্রদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) পরীক্ষায় নেসলে ইন্ডিয়ার তৈরি নুডলসে উচ্চমাত্রার সীসা পাওয়ার পর গত ২০ মে পণ্যটি বাজার থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এফডিএ’র কর্মকর্তারা বলেছেন, পরীক্ষা করা দুই ডজন প্যাকেটের সবগুলোতেই ১৭ দশমিক ২ পিপিএম সীসা পাওয়া গেছে, যা অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে সাতগুণ বেশি। ভারতে শূন্য দশমিক শূন্য ১ পিপিএম থেকে ২ দশমিক ৫ পিপিএম পর্যন্ত সীসার উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ভারতের ম্যাগিতে স্বাদবর্ধক মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটের (এমএসজি) মাত্রাও বেশি ছিল বলে কর্মকর্তারা জানান।ভারতে সর্বপ্রথমে দিল্লিতে ম্যাগি নুডলস নিষিদ্ধ হবার পর আরও পাঁচটি রাজ্যে এটি নিষিদ্ধ করা হয়।
এগুলো হল আসাম, উত্তরাখন্ড, গুজরাট, জম্মু ও কাশ্মীর এবং তামিলনাড়ু। তামিলনাড়ু এবং উত্তরাখন্ডে নেসলের এ পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ হয়েছে ৩ মাসের জন্য। আসাম, জম্মু ও কাশ্মীর এবং গুজরাটে অবশ্য বিক্রি বন্ধ ১ মাসের জন্য। পাঁচটি রাজ্যেই ম্যাগির নির্মাতা নেসলেকে অবিলম্বে সব স্টক তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ক্ষতিকারক উপাদান থাকায় পার্শ্ববর্তী দেশে যখন ম্যাগি নিষিদ্ধ হচ্ছে ঠিক তখনই বাংলাদেশে ম্যাগি উৎপাদনকারী নেসলেকে ‘ভালোত্বের’ সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছে বিএসটিআই।
ভোক্তারা বলছেন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)’র পরীক্ষার মান বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। আর খাবারটি যেহেতু শিশুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় তাই দাবি উঠেছে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভারতের বাজারে বিক্রীত নুডলসের চেয়ে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রীত নুডলসে ক্ষতিকর সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা অনেক বেশি। ভারতের বাজারের বিক্রীত নুডলসে এই সোডিয়ামেই পাওয়া গেছে মোনো সোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি), যা ক্ষতিকর মাত্রার সীসার উৎস বলে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।দুই দেশে বিক্রীত ম্যাগি নুডলসের প্যাকেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভারতের বাজারের প্যাকেটে এর গুণাগুণ যেভাবে বর্ণিত একইভাবে বাংলাদেশেও।
ভারতের একটি ৯৫ গ্রাম নুডলস প্যাকের সঙ্গে বাংলাদেশে উৎপাদিত ৬২ গ্রাম প্যাকের পার্থক্যগুলোও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গড়ে প্রায় প্রতিটি উপাদানই বাংলাদেশে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।ভারতে যেখানে ৯৫ গ্রামের প্যাকেটে চর্বি ব্যবহৃত হয় ১৪ গ্রাম সেখানে বাংলাদেশে ৬২ গ্রামের প্যাকেটে চর্বি থাকে ১০.৪ গ্রাম। তুলনামূলক হিসাবে যা ১.৩০ গ্রাম বেশি। এর মধ্যে ক্ষতিকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট ভারতের ৯৫ গ্রামের প্যাকেটে রয়েছে ৬ গ্রাম সেখানে বাংলাদেশের ৬২ গ্রামের প্যাকেটে রয়েছে ৪ গ্রাম। তুলনামূলক হিসাবে বাংলাদেশের প্রতি প্যাকেটে ক্ষতিকর এই ফ্যাট প্রায় ১ (প্রকৃত .৯) গ্রাম করে বেশি রয়েছে। ভারতের ৯৫ গ্রামের নুডলস প্যাকে সোডিয়ামের মাত্রা ১১৩০ মিলিগ্রাম। বাংলাদেশের ৬২ গ্রামের প্যাকেটে ৭৬৮.৮ মিলিগ্রাম। এই মাপের ভারতীয় নুডলসের চেয়ে ৩১.৪ মিলিগ্রাম বেশি সোডিয়াম রয়েছে বাংলাদেশে।
ভারতের নুডলসে এই সোডিয়ামেই মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত সীসা।ভারতে গোটা দেশে পুলিশ, সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর ক্যান্টিনে ম্যাগি নুডলস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বড় বড় বাজার গুলোতে আর ম্যাগি মিলছে না। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফা পরীক্ষা করে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ম্যাগির প্রস্তুতকারক নেসলের বিরুদ্ধে (জাতীয় ক্রেতা সমস্যা প্রতিকার কমিশনে (এসসিডিআরসি) অভিযোগ দায়ের করেছে।ভারতের নুডলসে পাওয়া গেছে মোনো সোডিয়াম গ্লুটামেট। এটি গ্লুটামেটিক এসিডমিশ্রিত সোডিয়াম লবণ। যা সীসার অন্যতম উৎস। তৈরি খাবারে স্বাদ আর গন্ধ যুক্ত করতেই এই সোডিয়াম লবণের ব্যবহার। ম্যাগি নুডলস তেমনই একটি খাবার। সোডিয়ামের ব্যবহার বেশি হলে এই এসিডের মাত্রা বেশি থাকার সম্ভাবনাই প্রকট। আর হিসাবে দেখা গেছে বাংলাদেশের ম্যাগি নুডলসে সোডিয়ামের ব্যবহারের মাত্রা ভারতের ম্যাগির চেয়েও বেশি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশে বিএসটিআই খুব দ্রুত তার পরীক্ষা সম্পন্ন করে সংবাদ সম্মেলন করে যে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে তাতে নেসলেরই প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকেই বিএসটিআই’র পরীক্ষণ পদ্ধতি নিয়েও কথা তুলেছেন। কারো কারো মন্তব্য পণ্যের সঠিক মান নির্ধারণে বিএসটিআই সারা দেশে খুব কমই আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। সে কারণে বিএসটিআই’র সার্টিফিকেটের খুব একটা মূল্য সাধারণ ক্রেতার কাছে নেই।
-ইনকিলাব।