প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভুয়া মানি রশিদ ও কাগজপত্র দিয়ে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

মাঠ পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকর্তাদের দিয়ে অনেক দিন ধরেই এ কাজটি করছে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা দিনের পর দিন প্রধান কার্যালয়ে ধর্ণা দিয়েও এর প্রতিকার পাচ্ছেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কর্তৃপরে যোগসাজশে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান টার্গেট গ্রামের স্বল্প সার, নিরর ও সহজ-সরল মানুষের। বিশেষ করে নারীরা।

নারীদের ইসলামের দোহাই দিয়ে ও নানা প্রলোভন দেখিয়ে বীমার পলিসি করানো হয়। এরপর মাসের পর মাস ওই পলিসি বিপরীতে প্রিমিয়ামের টাকা নেওয়া হয়। পরিবর্তে গ্রাহককে দেওয়া হয়, জাল মানি রশিদ। অনেক সময় গ্রাহকের পলিসি যাবতীয় কাগজপত্র নানা ছলছুতায় জিম্মি করে রাখেন এজেন্টরা।

এছাড়াও বীমা দাবির টাকা না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। দাবি নিষ্পত্তিতে দএই কাগজ, ওই কাগজ লাগবেদ ছাড়াও অসংখ্য অজুহাতে গ্রাহকদের দিনের পর দিন ঘোরানো হয়।

দাবি পরিশোধের সময়সীমা ৯০ দিন বেঁধে দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহকের আত্মীয়-স্বজনদের দাবির টাকা দেয় না প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি, কোম্পানিটির অভ্যন্তরীণ নিরীা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গাজীপুর সাংগঠনিক অফিসের এক ক্যাশিয়ার জাল সিল, প্যাড ও রশিদ বানিয়ে বিগত তিন বছর ধরে টাকা তুলে আসছিলেন।

গ্রাহকরা প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করলে অভ্যন্তরীণ নিরীা কমিটির এসভিপি ও ইন-চার্জ শিব্বির হোসেন এফসিএকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি। তদন্ত কমিটি ২৩ জন গ্রাহকের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত চালায়। এর মধ্যে ১৫ জনই নারী পলিসিধারী।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছত্রছায়াতেই থাকা ম্যাসেঞ্জার মো. জাকির হোসেন গাজীপুরের ২৩ জন গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের বীমা প্রিমিয়ামের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

মো. জাকির হোসেন প্রতারণার মাধ্যমে মোট চার লাখ তিন হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, শুধু ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে নয়, কোম্পানির প্রতারণার জাল সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রায় সহস্রাধিক গ্রাহক তাদের বীমার কিস্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন।

সূত্র আরো জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে দুর্নীতির ছিটেফোঁটা উঠে এসেছে মাত্র। আবার অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীকে আশ্রয় দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

এদিকে, ঢাকা কর্পোরেট জোন-০১ এর ক্যাশ নিরীা করে ৮১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। নিরীাটি চলতি বছরের এপ্রিলে করা হয়। ঢাকা জোনের ক্যাশ অফিসার আবদুল বারী নেতৃত্বে এ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

এর মধ্যে চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে আট লাখ ৩৬ হাজার টাকা। আর ২০১২, ২০১১ ও ২০১০ সালে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ৩০ লাখ ২৬ হাজার টাকা ও দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা।

বিষয়টি ধরা পড়লে কোম্পানি সচিব হাবিবুর রহমান মধ্যস্থতা করেন। পরে জানা যায়, হাবিবুর রহমান ওই অর্থ আত্মসাৎকারীর নিকট-আত্মীয় ও বাড়ির পাশের লোক। তিনিই তাকে চাকরি দিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মর্তুজা আলী বলেন, ‘প্রতারণার মাধ্যেমে যে পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন তার থেকে বেশি টাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫