বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
বিপর্যয়ের পথে এগোচ্ছে বিশ্ব উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মো. ইউনূস বর্তমান পৃথিবী নিয়ে তিনটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে এক ভাষণে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। হার্ভার্ড ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়নের যুগে ভূ-রাজনীতি’ শীর্ষক ওই সম্মেলনের আয়োজক ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার ফাউন্ডেশন ‘রবার্ট এফ কেনেডি : রিপল্স অব হোপ’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কেরি কেনেডি।
ড. ইউনূসের তিন উদ্বেগ
তার একটি উদ্বেগ হলো- স্বল্প থেকে স্বল্পতর লোকের হাতে সম্পদের চরম ও ক্রমাগত কেন্দ্রীকরণ। পৃথিবীর সম্পদ যে কেবল অল্প কিছু লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে তা নয়, এ সম্পদ ক্রমাগতভাবে পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি দেশের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এবং এভাবে পৃথিবীর অবশিষ্ট এলাকা ক্রমাগতভাবে সম্পদশূন্য হয়ে যাচ্ছে। এটা পৃথিবীর ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য ধ্বংস করছে এবং একই সঙ্গে দেশগুলোর অভ্যন্তরে ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় উদ্বেগটি হলো- জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিপর্যয়, যা দ্রুত সংঘটিত হচ্ছে অথচ এটা বন্ধ করার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন যে, বিশ্বকে পুরোপুরি ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করতে আমাদের হাতে খুব কম সময় আছে- বড়জোর দুই থেকে তিন দশক। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো কোনো ‘স্বাভাবিক জীবন’ দেখতে পাবে না, যা তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলো দেখেছে। এটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মগুলোর আসলে কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
তৃতীয় উদ্বেগ হলো- আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সের দ্রুত বিস্তৃতি, যা অর্থনৈতিক জীবনের সব ক্ষেত্রে মানুষের জায়গা দখল করে নেবে। আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স মানুষের সব কাজ কেড়ে নিলে মানুষ পৃথিবীতে আর আদৌ টিকে থাকতে পারবে কি-না তিনি এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। কেউ কেউ বলছে যে, আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স মানুষের সব কাজ নিয়ে নিলেও মানুষের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ থাকবে না, কেননা মানুষ তখন সরকারের রাজস্ব থেকে দেয়া সর্বজনীন মৌলিক আয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারবে।
ড. ইউনূস তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এবং বলেন যে, আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স যদি সব কাজই মানুষের কাছ থেকে নিয়ে নেয় সে অবস্থায় মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার বলে আদৌ কিছু থাকবে এমন কোনো নিশ্চয়তা অনুভব করার কোনো কারণ থাকবে না। তাছাড়া মানুষ তার দৈহিক অস্তিত্বের জন্য ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছে, এমন একটা যুগ আসুক তা তিনি কিছুতেই দেখতে চান না।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৩০ জন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রাক্তন প্রধান নির্বাহীরা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।