স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুগান্তকারী আইন পাশ হলো। সন্তান পিতা-মাতার ভরণ পোষণ না দিলে ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে পিতামাতার ভরণ-পোষণ বিল সংসদে পাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু পিতামাতার ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত একটি বেসরকারি বিল-২০১৩ আনলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তা কণ্ঠ ভোটে দেন। বিলটি সর্বসম্মতক্রমে কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।
এসময় বিরোধী দলের সদস্যরা সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বুধবার জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ বিল দুটি পাশের সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রী ছাড়া অন্য সদস্যরা আইন প্রণয়নের জন্য কোনো বিল আনলে তা বেসরকারি বিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
সংসদে বেসরকারি বিল পাসের ঘটনা খবুই কম। এর আগে ২০১১ সালে সাবের হোসেন চৌধুরীর ‘দ্য লেপারস (রিপিল) অ্যাক্ট-২০১১’ নামে আরো একটি বিল পাস হয়। পূর্বের ৮টি সংসদে উত্থাপিত ২৫৫টি বেসরকারি বিলের মধ্যে পাস হয়েছে মাত্র ৬টি।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু সর্বপ্রথম ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত বিলটি সংসদে আনেন। পরে একই বছর ৪ জুলাই বিলটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহিদ।
মন্ত্রিসভায় অধিকাংশ মন্ত্রীর বিরোধিতার মুখে বিলটি অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদের বেসরকারি বিল সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলে বলা হয়েছে, ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিল-২০১১’ বিলে পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান তার পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ না করলে তা হবে জামিন অযোগ্য অপরাধ। তবে আপোসযোগ্য।
ভরণ-পোষণ ও এর খরচ না পেলে বাবা-মা আদালতের আশ্রয়ও নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সন্তান সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা বা অর্থ দণ্ডসহ অনাদায়ে অনুর্দ্ধ ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বিলে আরও বলা হয়, কোনো সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ প্রদান না করতে প্ররোচনা দিলে উক্ত স্ত্রী বা স্বামীও কিংবা অন্য সহায়তাকারী উপরিউক্ত অপরাধে অভিযুক্ত হবেন। বিলের বিধান অনুযায়ী সন্তানের আয়ের যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ পিতামাতাকে দিতে হবে।
বিলে বলা হয়েছে, ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। কোনো সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বৃদ্ধনিবাস, বা অন্য কোথাও বা আলাদা আলাদভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবেন না।
প্রত্যেক সন্তান তার পিতামাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখবেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে। তারা পৃথকভাবে বসবাস করলে সন্তানদের নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে হবে।
শুধু পিতা বা মাতার ভরণ-পোষণই নয়, পিতা বা মাতার মৃত্যুর পরও যদি দাদা-দাদী বা নানা-নানী বেঁচে থাকেন তবে তাদেরও ভরণ-পোষণ দেওয়া নাতী-নাতনীর আইনি দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিলে।
ভরণ-পোষণের খসড়া বিলে যা ছিল
বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে অসহায় অবস্থা থেকে বাঁচাতে মূলত আইনটি তৈরি করা হয়েছে। আর্থিকভাবে সক্ষম কিন্তু বাবা-মাকে ভরণ-পোষণ দিতে অনাগ্রহী সন্তানদের জন্য এ আইন অসহায় পিতামাতার রক্ষা কবচ।
খসড়া আইনে বলা আছে, প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হবে। কোনো পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে সেক্ষেত্রে সন্তানরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বাবা-মার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে।
খসড়া আইনে অপরাধের আমল-যোগ্যতা, বিচার ও জামিন-সংক্রান্ত বিধানে বলা হয়, ‘এ ধরনের অপরাধ প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য হবে। তবে কোনো আদালত এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট সন্তানের পিতা বা মাতার লিখিত অভিযোগ ছাড়া আমলে নেবে না। অভিযোগকারী পিতা বা মাতাকে শুনানির সুযোগ না দিয়ে কোনো আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেবে না।