জেলা প্রতিনিধি, বান্দরবান ॥ দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও একের পর এক টানা হরতাল অবরোধের কারনে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ছে তিন পার্বত্য জেলা। ফলে পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ার কারণে পাহাড়ের সম্ভবনাময় পর্যটন শিল্প এখন ধ্বংসের পথে।এছাড়াও অপার সম্ভাবনাময় পর্যটনখাতটি থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অনিশ্চয়তার খাপে পড়ে বাংলাদেশ বিমুখ হয়ে গেছে বিদেশী পর্যটকরা। এমনকি আগ্রহ হারাচ্ছে দেশী পর্যটকও।
সবুজ অরণ্যে ঘেরা প্রাকৃতির অপার সৌন্দর্যের তিন পার্বত্য জেলা (বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) বছরের এই সময়ে জেলার নীলাচল, প্রান্তিক লেক, নীলগিরি, বৌদ্ধ ধাতু জাদি, চিম্বুক, বগালেক, রিঝুক ঝর্না, মিরিঞ্জা পর্যটনে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড় থাকে। আর একে কেন্দ্র করে হোটেল, গেস্ট হাউস ও রেঁস্তোরা গুলো থাকত কানায় কানায় পরিপূর্ণ । যা হরতাল অবরোধের কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটনস্পট সহ হোটেল মোটেলগুলে ।
বান্দরবান জেলা শহরের হোটেল গ্রীন হীলের ম্যানেজার আশিষ ধর বলেন, আমাদের হোটেলগুলোতে ডিসকাউন্ট দিয়েও পর্যটক পাচ্ছিনা আমরা, পর্যটনের দু:সময় কখনন যে কাটবে জানিনা।
চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার কারণে পর্যটকরা বান্দরবান আসতে ভয় পাচ্ছে, এমন তথ্য জানা গেছে জেলার একাধিক ব্যবসায়ির সাথে কথা বলে।
জেলার মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র দেখতে আসা পর্যটক রবিউল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা ভেবে রাজনৈতিক দলগুলোকে পর্যটন সমৃদ্ধ জেলাগুলোকে হরতালের আওতামুক্ত রাখা উচিত।
বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: সিরাজুল ইসলামের জানিয়েছেন, পর্যটন শিল্প সম্পূর্ণ নির্ভর করে একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্ত পরিবেশের উপর। বিগত এক বছর ধরে বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সারা বিশ্বের আলোচিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিদেশী পর্যটকরা বাংলাদেশ বিমুখ হয়ে গেছে। দেশী পর্যটকরাও বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি কিংবা সাহস করেননি। আর পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচিরেই এই শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে ।
আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার সাথে সাথে বান্দরবান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন,পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সবসময় সতর্ক, যারা আসছেন তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে একসময় পর্যটকের আগমনে মুখরিত থাকতো খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পর্যটনস্পট আলুটিলা, রিচাং ঝর্ণা, তৈদু ঝরা ঝর্ণা, দেবতা পুকুর, পানছড়ি অরণ্য কুটির এখন আর আগের মত পর্যটকের দেখা মেলেনা। অলস সময় কাটছে পর্যটনস্পটে দায়িত্বরত কর্মচারীদের।
খাগড়াছড়ির শৈল সূবর্ণা হোটেলের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, বাইরের পর্যটকের আগমন না থাকার কারণে প্রতিদিন হোটেলে সিট খালি যাচ্ছে, গুণতে হচ্ছে লোকসান।
গত তিন মাস ধরে টানা হরতাল-অবরোধের কারণে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বন বিহার, ডিসি বাংলো, সুভলং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ-পর্যটন গুলোতে আগের মত পর্যটকের দেখা মিলছে না ।
সূত্র মতে, পর্যটন শিল্পের বিকাশকে কেন্দ্র অনেকে উদ্দ্যেক্তা পাহাড়ে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও পর্যটক না আসার কারণে পার্বত্য জেলার হোটেল-মোটেলগুলো গত তিন মাসে তিন থেকে চার কোটি টাকার উপরে লোকসান গুণছে। যেসব ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পর্যটন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে, সেইসব ব্যবসায়ীরা এই ঋণ কিভাবে মিটাবেন এ নিয়ে যেন তাদের দু:শ্চিন্তার শেষ নেই।
রাঙামাটির গ্রীণ ক্যাসাল হোটেলের ম্যানেজার গৌতম দাশ বলেন, আমাদের হোটেলে ব্যবসা না থাকার কারণে অধিকাংশ কর্মচারীকে ছাঁটাই করতে হয়েছে।
ক্ষোধ শীত মৌসুমে দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার কারনে পর্যটক না আসার কারণে ইতিমধ্যে ছোট ছোট অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে।
হোটেল সুফিয়া’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম মুন্না বলেন, এমনিতে ব্যবসায় লোকসান তার উপর কর বিভাগের বাড়াবাড়ি ও অন্যদিকে চাঁদাবাজি, সব মিলিয়ে শান্তিতে নেই আমরা। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচিরেই হোটেল বন্ধ করে দিতে হবে ।
বান্দরবানের ফারুক পাড়ার হস্তশিল্প ব্যবসায়ী নুপিয়াং বম বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে আমরা মাফলার,চাদর ও কম্বল তৈরী করে ক্রেতা হিসাবে পর্যটক পাবো বলে বসে আছি কিন্তু পর্যটক নেই।
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা,সহিংসতা এবং একের পর এক টানা হরতাল অবরোধে পর্যটন ব্যবসায় ক্রমাগত ধস নেমেছে। ফলে পর্যটনখাতে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে থমকে যাচ্ছে দেশ তথা পাহাড়ের অর্থনীতির গতি।