বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আসছে ॥ জানুয়ারিতে আরো উত্তপ্ত হবে রাজনীতির মাঠ

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আসছে ॥ জানুয়ারিতে আরো উত্তপ্ত হবে রাজনীতির মাঠ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: জানুয়ারিতেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে মিছিল সমাবেশসহ বিএনপি লাগাতার কর্মসূচি দিতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে ৫ জানুয়ারি মাঠে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। এই দিন সারাদেশে মিছিল সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে দলটি। জানুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের আরও ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকছে।

এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর প্রধান বিরোধী পক্ষ বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। দুই দলের সম্ভাব্য কর্মসূচিকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশংকাও প্রবল।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গঠিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনে নামার কথা বলে আসছে বিএনপি। আগামী জানুয়ারি থেকে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে বলে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন। ৫ জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি আসতে পারে বলেও জানান তারা।

এদিকে বিএনপির আন্দোলনকে মোকাবেলা করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আন্দোলন ঠেকাতে প্রশাসনিকভাবে কঠোর অব্স্থানে যাবে সরকার ও সরকারি দল। অর্থাৎ প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আওয়ামী লীগ ও এর নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও রাজপথে থাকবে বলে সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন। আগামী ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সারাদেশে মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এরই মধ্যে দৃশ্যত মাঠে নেমে পড়েছে ছাত্রলীগও।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভা প্রতিহত করকে বলে ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। ওই স্থানে ছাত্রলীগও সমাবেশের ডাক দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের দেওয়া ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ৫ জানুয়ারির আগেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এবং আরও উত্তপ্ত হবে বলে আশংকা। গত ২০ ডিসেম্বর এক সমাবেশে ছাত্রলীগ তারেক রহমানকে তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে আল্টিমেটাম দেয়। বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়া না হলে যেখানে খালেদা জিয়া সমাবেশ ডাকবেন সেখানেই ছাত্রলীগ সমাবেশ ডেকে তাকে প্রতিহত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার একদিন পরই খালেদা জিয়ার গাজীপুরের সমাবেশ প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তৃণমূল পর্যায়ে জনসভার কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ১৪ দলের কর্মসূচি।

আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট জানুয়ারি থেকে সরকারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে তা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। লাগাতার আন্দোলন-কর্মসূচিতে নামার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। এই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকামিছিল ও ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের সমাবেশ করতে পারে। এই সমাবেশে বাধা দেওয়া হলে ঢাকা ঘেরাও, লাগাতার অবরোধ এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হতে পারে। সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার কর্মসূচিও থাকতে পারে। আন্দোলনের কৌশল হিসেবে ঢাকায় বিচ্ছিন্নভাবে শতাধিক স্পট করা হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন।

আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবো তা রাজনৈতিকভাবে সফল করবো। সরকার বাধা দিলে সেসব বাধা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবো।

এদিকে এই আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য সরকার আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালের মতো পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেজন্য সরকার প্রশাসনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এদিকে প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও রাজনৈতিকভাবে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয়দিবস’ ঘোষণা করে ওই দিন সারাদেশে মিছিল সমাবেশ করবে দলটি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির যে কোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে রাজনৈতিকভাবে নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। রাজনীতির মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে জানুয়ারি থেকে দলীয় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে তারা আরও জানান।

এই ধারাবাহিক কর্মসূচিকে সফল করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথসভা করছেন। এরই মধ্যেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর অন্তর্গত থানা কমিটির নেতৃবৃন্দ, ঢাকাস্থ দলীয় সংসদ সদস্য ও সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথ বৈঠক করা হয়েছে। এরপর পৃথকভাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

সূত্র জানায়, ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মাঠ যেন বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো দখলে নিতে না পারে সেভাবেই জোর প্রস্তুতি নিতে হবে।

আওয়ামী লীগের ৫ জানুয়ারির কর্মসূচির পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকায় জনসভার কর্মসূচি রয়েছে। এই জনসভায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ১৪ দল। ধারাবাহিকভাবে এইসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একাধিক টিম এই সমাবেশ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ জনসভার কর্মসূচি নেবে বলে দলের একাধিক নেতা জানান।

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবো, রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবো। তারা আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সন্ত্রাস করার চেষ্টা করলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম