শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপির ৫১ কাউন্সিলর

পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপির ৫১ কাউন্সিলর

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: তিন সিটি করপোরেশনের বিএনপি সমর্থিত ৫১ জন কাউন্সিলর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির সময় সন্ত্রাস-নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা একাধিক মামলার আসামি তাঁরা। মূলত গ্রেপ্তার এড়াতেই তাঁরা আত্মগোপন করেছেন।
তাঁদের সঙ্গে একজন মেয়রও রয়েছেন। পলাতক কাউন্সিলরদের মধ্যে রাজশাহীর ১৪ জন, গাজীপুরের ২৫ জন ও বরিশালের ১২ জন। নাশকতার একাধিক মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে মাসের পর মাস তাঁরা ঘরবাড়িছাড়া।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সরকার পতনের আন্দোলন থেকে বিএনপি ঘরে ফিরলেও বিএনপি সমর্থিত এই কাউন্সিলররা আজও ঘরে ফিরতে পারেননি। জামিন মেলেনি, তাই পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাঁদের।
পরিবার-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বলে তাঁদের অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে দলের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণে তাঁরা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে অনেকে সংশ্লিষ্ট নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যোগ দিলে কী সুযোগ-সুবিধা মিলবে তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
তিন সিটির বেশ কয়েকজন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের। সন্ত্রাস-নাশকতার একাধিক মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে; পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছে তাদের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
বরিশাল: বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির সময় সন্ত্রাস-নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা একাধিক মামলার আসামি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ অন্তত ২২ কাউন্সিলর। গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা আত্মগোপন করেন। পরে কয়েকজন গ্রেপ্তার হন। এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন মেয়র বুলবুল এবং আরো ১৪ জন বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর।
রাসিক ও মহানগর বিএনপি সূত্র জানায়, টানা অবরোধ ও হরতালের সময় রাজশাহীতে বেশ কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মেয়র বুলবুল ও বিএনপি-জামায়াতপন্থী ২২ কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে যান তাঁরা। পরে আটজন কাউন্সিলর গ্রেপ্তার হন; তাঁরা জেলে। আর বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও ১৪ জন কাউন্সিলর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
গত ৭ মে বুলবুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার ও হয়রানি এড়াতে সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ডজনখানেক কাউন্সিলর দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন। রমজান মাস শুরুর আগেই অন্তত ১০ জন কাউন্সিলর আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন। তাঁরা মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন।
সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে বিএনপিপন্থী সাতজন কাউন্সিলর রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (পলাতক) নুরুজ্জামান টিটোর নেতৃত্বে এই কাউন্সিলররা লিটনের সঙ্গে কথা বলেন। ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু বাক্কার কিনু, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান লিটন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহম্মদ টুটুল, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান বাচ্চু ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজাহান আলী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর যাতে পুলিশি হয়রানি না হয়, করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যাতে অংশ নেওয়া যায়- এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
প্রসঙ্গত, নগরীর রাজপাড়া থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
গাজীপুর: গাজীপুর সিটির বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলরদেরও একই অবস্থা। জানুয়ারির প্রথম থেকেই ২৫ জন কাউন্সিলর সন্ত্রাস-নাশকতার একাধিক মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের অনেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা করছেন। ইতিমধ্যে সাবেক গাছা ইউনিয়ন শাখার সিনিয়র সহসভাপতি ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
জয়দেবপুর থানা বিএনপির এক নেতা ও কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেউলিয়া হয়ে গেছে। এই বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে না। হামলা-মামলার শিকার আর কত হব? নিরুপায় হয়েই গাজীপুর সিটির একাধিক বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঈদের পরই আমরা যোগ দেব।’
সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তানভীর আহাম্মদ বলেন, ‘বেশির ভাগ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা আছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকে পালিয়ে আছেন। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলছেন। আবার অনেককে ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও শ্রমিক দল নেতা ফয়সাল সরকার জানান, কাউন্সিলরদের অনেকে বিএনপি সমর্থিত হলেও সরাসরি রাজনীতি করেন না। তার পরও নাশকতার মামলায় আসামি হয়ে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। এ কারণে নাগরিকরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন। উন্নয়ন কাজও বন্ধ রয়েছে।
একই কথা বলেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাহারুল ইসলাম মোল্লা, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজি মেহেদী হাসান সরকার ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজমল হোসেন ভুঁইয়া। তাঁরা সবাই পলাতক।
বিএনপি নেতা ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুস সালাম আহম্মেদ আব্বাস জানান, পুবাইলের মীরের বাজারে একটি পিকআপ ভাঙচুরের ঘটনায় ১৯ কাউন্সিলরের নামে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। ঘটনাস্থল থেকে তাঁর বাড়ি প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। তার পরও তাঁকে জড়ানো হয়েছে। অন্যরাও দূরের এলাকার লোক।
বরিশাল : বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জিয়াউদ্দিন সিকদার গত পাঁচ মাস ধরে অফিস করছেন না। পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে। তিন মামলারই তিনি প্রধান আসামি।
জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। জামিন পাইনি। ফলে নিজের কার্যালয়ে যেতে পারছি না। তবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
মহানগর বিএনপির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আকবর হোসেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁর বিরুদ্ধে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে। তিনিও পাঁচ মাস ধরে আত্মগোপনে।
এ ছাড়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জাহিদুল কবির জাহিদ এবং মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র শরিফ তাছলিমা কালাম পলির বিরুদ্ধে দুটি করে মামলা রয়েছে। তাঁরাও পাঁচ মাস ধরে কার্যালয়ে যান না।
গত ৬ জানুয়ারি সরকার পতনের লক্ষ্যে শুরু হয় বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি। তখন থেকেই আত্মগোপনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিএনপি সমর্থিত ১২ জন কাউন্সিলর। তাঁদের কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে গোপনে এলাকায় আসা-যাওয়া করেন। তবে রাতে তাঁরা বাড়িতে থাকেন না বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
-কালের কণ্ঠ।