রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য আবিষ্কার

পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য আবিষ্কার

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তোষা (বিদেশী) পাটের জীবন রহস্য আবিষ্কারের পর এবার দেশী পাটের জীবন রহস্যও আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে পাটের ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনতত্ত্বও তারা খুঁজে পেয়েছিলেন গবেষণায়। এর মাধ্যমে পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবনতত্ত্ব আবিষ্কার হলো দেশী বিজ্ঞানীদের চেষ্টায়। আর এ গবেষণা কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের এ অর্জনকে জাতির সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন এ অর্জন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ আবিষ্কার সোনালি আঁশের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনবে। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন। গবেষণার বিষয়ে মতিয়া চৌধুরী ও আবিষ্কারের মেধাস্বত্ব নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেন। আবিষ্কারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না জানালেও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, বিগত বিএনপি সরকারের সঙ্গে পাটের বৈরিতা ছিল। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে তারা পাটের বাজার অন্য দেশে দিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাদের সময়ই আদমজীসহ অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে যায়। আমরা ক্ষমতায় এসে জুটমিলগুলো চালু করেছি। তিনি বলেন, একটি নতুন সুখবর হলো বিজ্ঞানীরা দেশী পাটের জন্মরহস্য আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এটি আগামী দিনের জন্য একটি অমূল্য অর্জন। তিনি বলেন, এখন পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনের গুরুত্ব বাড়ছে। এক্ষেত্রে পাটের বহুমুখী গুরুত্বও বাড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম বলেন, আমার পিতা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। এরপর থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশের জন্য কিছু করবো। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্থাপিত এ সংক্রান্ত গবেষণাগারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, পাটের জন্মরহস্য আবিষ্কারের আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব অর্জনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে একটি আইপি সেল করা হবে বলেও জানান তিনি।
২০১০ সালে বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম বিদেশী (তোষা) পাটের জীবন রহস্য আবিষ্কার করেন। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাটের জন্য ক্ষতিকর একটি ছত্রাকের জীবন রহস্য আবিষ্কার করেন তিনি। পাটসহ পাঁচ শতাধিক উদ্ভিদের বিধ্বংসী রোগ সৃষ্টিকারী ওই ছত্রাকের জীবনরহস্য আবিষ্কারের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে তার বক্তব্যে এ খবর প্রকাশ করেন।
ড. মাকসুদুল আলম একজন জিনতত্ত্ববিদ। তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিনোম সিকোয়েন্সি। উল্লেখ্য, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই বিজ্ঞানীর। জীব প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনের কথা প্রধানমন্ত্রী বিগত ২০১০ সালের ১৬ই জুন জাতীয় সংসদের মাধ্যমে জাতিকে অবহিত করেন। যে কোন ফসলের জীবন রহস্য উন্মোচন স্বল্পোন্নত দেশসমূহের মধ্যে এটিই প্রথম এবং সারা বিশ্বে ১৭তম। এ আবিষ্কারের ফলে পাটের বিভিন্ন প্রতিকূলতা সহনশীল (লবণাক্ততা, খরা, বিভিন্ন পোকা-মাকড় ও রোগ-জীবাণু সহনশীল ইত্যাদি) উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।