শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > পাটজাত মোড়কের ব্যবহার : অভিযানের আওতার বাইরে মিনিপ্যাক

পাটজাত মোড়কের ব্যবহার : অভিযানের আওতার বাইরে মিনিপ্যাক

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥

নির্ধারিত ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিত এবং পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে সোমবার থেকে সারাদেশে বিশেষ অভিযান শুরু হচ্ছে। তবে হলুদ, মরিচ, ধনিয়া এসব মসলা জাতীয় পণ্যের ১০০ বা ৫০ গ্রাম মিনিপ্যাক আপাতত এ অভিযানের আওতার বাইরে থাকছে বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আগামীতে ধীরে ধীরে মিনিপ্যাকেও পাটের মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে।

সূত্র জানায়, ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর আদেশ জারি করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এরপর গত ২১ জানুয়ারি পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া এবং তুষ-খুদ-কুড়ার মোড়ক হিসেবে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। দুই দফায় ১৭টি পণ্যে পাটের মোড়ক বাধ্যতামূলক করে সরকার।

‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন’ অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত পণ্যে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। একই অপরাধ পুনরায় করলে সাজা হবে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাধারণত মোড়ক সবকিছুতেই ব্যবহার করার কথা। কিন্তু ৫০ বা ১০০ গ্রাম নিয়ে তো আমরা কথা বলিনি।’ তাহলে কি শুধু বেশি পরিমাণের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আইনে কোথাও ফাঁক রাখা হয়নি। সবক্ষেত্রেই পাটের মোড়ক ব্যবহার করতে হবে। ১০০ বা ৫০ গ্রাম বলে কোনো কথা রাখা হয়নি। তবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে হয়তো বিষয়টা বিবেচনায় আসবে। আইনে ওই রকম বলা নেই যে ৫০ বা ১০০ গ্রামের ক্ষেত্রে কী হবে। যেহেতু কিছু বলা নেই সেহেতু সবক্ষেত্রেই পাটের মোড়ক প্রযোজ্য হবে।’

মন্ত্রণালয় বলছে, উল্লিখিত পাটের বস্তা বিজেএমসির (বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন) সব মিল থেকে নির্ধারিত মান ও মূল্যে চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করা হচ্ছে। ১০০ বা ৫০ গ্রামের ক্ষেত্রে কি ওইসব মিলে পাটের মোড়ক পাওয়া যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১০০ বা ৫০ গ্রামের বিষয়টি এখনও আলোচনায় আসেনি বলে ওটা হয়নি। আলোচনায় এলে এবং বিজেএমসিকে প্রস্তাব দিলে তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য বলেন, কথা হচ্ছে এক থেকে ১০ কেজি এসব পরিমাণ নিয়ে। ৫০ কেজি আগে থেকেই ছিল এখন সেখানে এক থেকে ১০ কেজিও চলে আসছে। ৫০ বা ১০০ গ্রামের জন্য কোনো প্রস্তাব এলে বিজেএমসি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তিনি আরও বলেন,  ১০০ বা ৫০ গ্রাম পণ্যের মোড়ক হিসেবে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ তৈরির উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এটা শিগগিরই চালু হয়ে যাবে। তখন আর ৫০ গ্রাম ১০০ গ্রামের প্রশ্ন আসবে না।

মোড়ক হিসেবে পাটের বস্তা সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেএমসির ম্যানেজার ( মাকেটিং) মো. জাকির হোসাইন খান জাগো নিউজকে বলেন, এখন আমরা যেগুলো সরবরাহ করছি সেগুলো ৫০ কেজির বস্তা। তবে আরও ছোট বস্তার যদি কারও চাহিদা থাকে তাহলে সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে বিশেষ অভিযান সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যক্রম গ্রহণ করে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে বলে রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।

তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মহাপুলিশ পরিদর্শক, ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত পণ্য আমদানি ও রফতানিকালে পাটজাত ব্যাগ দ্বারা মোড়কীকরণ করা না হলে আইআরসি এবং ইআরসি বাতিল হবে মর্মে শর্তারোপ করেছে।

এছাড়া পাটের ব্যাগে মোড়কীকরণ না করলে চাতাল-মিল মালিকদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করেছে বলেও জানান মির্জা আজম। পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০ টাকার একটি প্লাস্টিক ব্যাগে একবারই মালামাল পরিবহন করা যায়। আর ৪৫ টাকার একটি পাটের ব্যাগে ৪ থেকে ৫ বার মাল পরিবহন করা যায়।

টাকা কম লাগলেও প্লাস্টিকের ব্যাগ নতুন প্রজন্মের জন্য ক্ষতি করছে উল্লেখ করে মির্জা আজম বলেন, প্লাস্টিকের জন্য জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে, নদীর তলদেশ ভরে যাচ্ছে, ড্রেনেজ সিস্টেম কলাপস করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের ৯০ শতাংশ রফতানি হয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১০ শতাংশ পাটও দেশে ব্যবহার করতে পারি না। তিনি বলেন, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন’ বাস্তবায়ন হলে দেশে উৎপাদিত পাটের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ব্যবহার হবে।রফতানি নির্ভরতা আর থাকবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে বিশেষ অভিযানে এক হাজার ৬০৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক কোটি ৫১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং দুইজনকে কারাদণ্ড দেয়া হয়। গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত আরও ৮৪৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৭৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয় বলে জানা গেছে।