শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > পাখি-কিরণমালা এখন শিক্ষার্থীদের খাতায়

পাখি-কিরণমালা এখন শিক্ষার্থীদের খাতায়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

সুনামগঞ্জ: বেশ কয়েক বছর ধরে ঈদের বাজারে ভারতীয় সিরিয়ালের নামে হরেকরকম পোশাক মিলছে। তবে তা পোশাকে সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে গেলে শিক্ষা উপকরণে।

পাখি, জলনূপুর, কিরণমালাসহ বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালের অভিনেতা -অভিনেত্রীর ছবি দিয়ে তৈরি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের খাতার মলাট। সুনামগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ লাইব্রেরি ও স্টেশনারি দোকানগুলোতে এখন পাওয়া যাচ্ছে।

সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এসেছে পুলিশ প্রশাসনের। শহরে চালানো হয়েছে অভিযান। এতে শহরের লাইব্রেরিগুলোতে আগের মতো প্রকাশ্যে এসব খাতা না দেখা গেলেও লুকিয়ে সুবিধা অনুযায়ী বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে উপজেলাগুলোর লাইব্রেরিতে ঢু দিলেই মিলছে এসব খাতা।

জানা যায়, কয়েকমাস আগে শিশুদের খাতায় নায়ক-নায়িকাদের বাহারি ছবি দিয়ে কৌশলে ব্যবসায়ীরা এসব খাতাপত্র বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৫০টিরও বেশি লাইব্রেরিতে দেখা মিলছে এ ধরনের খাতার। ব্যাপারটি নিয়ে ইতোমধ্যেই অভিভাবক ও সুধীজনদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা জন্ম দিয়েছে। বিশিষ্টজনদের মতে, এ ধরনের প্রবণতা শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় সিরিয়ালের পাখি, কিরণমালা, জলনূপুরসহ বিভিন্ন চরিত্রের ছবি সংবলিত খাতা বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। এরমধ্যে কিছু কিছু খাতায় ‘স্টার জলসা’ টেলিভিশনের কিরণমালা সিরিয়ালের প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রীর বড় বড় রঙ্গিন ছবি দেখা যায়। এ খাতাগুলোর নামও দেওয়া হয়েছে ‘কিরণমালা’। এছাড়া উপরে রয়েছে স্টার জলসা টেলিভিশন চ্যানেলটির লোগো। একইভাবে ‘পাখি’ খাতায়ও দেখা যায় পাখি চরিত্রের অভিনেত্রী ও এক অভিনেতার রঙ্গিন ছবি। এসব ছবি সংবলিত খাতা ব্যবহার করছে জেলার হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা। একজনের দেখাদেখিতে অন্য শিশুরাও এসব খাতা কিনছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের পৌর বিপনী এলাকার এক পুস্তক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ আমরা আগে এই খাতাগুলা বিক্রি করতাম, কিছুদিন আগে এসব খাতা বিক্রিতে নিষেধ করেছে পুলিশ, তাই এখন আর বিক্রি করি না। তবে, কোন কোন দোকানে এ খাতাগুলো পাওয়া যাবে, তারা গুদামে রাখা খাতাগুলো লুকিয়ে বিক্রি করছে।’ তার দাবি, এখানকার ব্যবসায়ীরা খাতাগুলো রাজধানীর চকবাজার থেকে নিয়ে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক দোকানের কর্মচারী বলেন, ‘পৌর বিপনীর সবগুলো লাইব্রেরিতেই এসব খাতা বিক্রি করা হতো, নায়ক- নায়িকাদের রঙ্গিন ছবির কারণে খাতাগুলো বেশি চলতো। ইদানিং পুলিশের ভয়ে বিক্রি কমে গেছে। আগের মতো খোলামেলা বিক্রি না করে কেউ কেউ লুকিয়ে বিক্রি করছেন। অনেকে আবার বাকি খাতাগুলো ঢাকায় ফেরত পাঠাচ্ছেন।’

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, জেলার দিরাই, ছাতক, জগন্নাথপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার প্রায় সবগুলো লাইব্রেরিতেই এসব খাতা বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে দিরাইয়ে ৯টি লাইব্রেরি, ছাতকে ৮টি, জগন্নাথপুরে ৫টি ও ধর্মপাশা উপজেলায় ১৩টি লাইব্রেরির ব্যবসায়ীরা এসব খাতা বিক্রি করছেন। খাতাগুলোর দাম ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ টাকার মধ্যে।

এদিকে, অধিক মুনাফার জন্য এ ধরনের খাতা বিক্রি করা হলেও তা শিশুদের মধ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য বিশিষ্টজনদের। তাছাড়া মুনাফার জন্য শিক্ষার্থীদের এভাবে প্রলোভনে ফেলাকে অন্যায় বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে বলেন, ‘আমার কাছে বিষয়টি খুব খারাপ লেগেছে, শিশুদেরকে ভিনদেশি সংস্কৃতির প্রতি আকর্ষণ বাড়ানো হচ্ছে। ফুল -পাখি ও দেশি ঐতিহ্যের বদলে ভিনদেশি ঐতিহ্য লালন করানো হচ্ছে। সিরিয়ালের নায়ক নায়িকাদের ছবি দেয়ার কারণে শিশুর মনে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুর সুন্দর আগামীর কথা চিন্তা করে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হযরত আলী জানান, এসব খাতাগুলো আমাদের নজরে এসেছে, আসলে আমাদের শিশুদের বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। অন্য দেশের সংস্কৃতির প্রচারণা দিয়ে যারা শিশুদের খাতা তৈরি ও বিক্রি করছেন ঠিক নয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি) ড. আহমেদ উল্লাহ বলেন, ‘এরকম কিছু খাতা আমার নজরেও পড়েছে, এগুলো শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আইনগতভাবে এগুলো বিক্রি বন্ধে কিছু না করা গেলেও সামাজিকভাবে এসব খাতা বাজারে না রাখার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।’

জেলা পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ জানান, পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রতি এসব খাতা বিক্রি বন্ধে শহরের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে অভিযান পরিচালনা করেছে। শুধু শহর নয়, জেলার সকল উপজেলাগুলোতেও পর্যায়ক্রমে এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। বাংলামেইল২৪ডটকম