রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > পাকিস্তানকে সমর্থন করায় ৬৭ ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

পাকিস্তানকে সমর্থন করায় ৬৭ ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ভারত ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড হওয়া ৬৭ জন কাশ্মিরি ছাত্রের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ওই ছাত্রদের। দেশদ্রোহে অভিযুক্তদের সর্বনিম্ন শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড। তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে।

গত রবিবার ক্রিকেট ম্যাচ চলার সময় পাকিস্তানের সমর্থনে গলা ফাটানো কাশ্মিরি ছাত্রদের ওপর হামলা করে মেরঠের স্বামী বিবেকানন্দ শুভার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্ররা। দুই পক্ষের মারামারি, ভাঙচুরে অভিযোগের আঙুল ওঠে ৬৭ ছাত্রের দিকে। তাদের ৩ দিনের জন্য সাসপেন্ডও করা হয়।

আজ তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা আনা হলে এই পদক্ষেপের নিন্দায় করেছে জম্মু ও কাশ্মিরের রাজনৈতিক দলগুলো। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, এ শাস্তি মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। ছাত্রদের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও কথা হয়েছে। টুইট করেছেন, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি দেখবেন বলেছেন। তবে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে জম্মু ও কাশ্মিরের পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও। দলের প্রধান মুখপাত্র নঈম আখতার বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু কাশ্মিরি ছাত্রদেরকেই অভিযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন। ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত না করেই ছাত্রদের পুরো দলটিকে সাসপেন্ড করে দিয়েছেন। এটা ফ্যাসিস্ট মনোভাবের পরিচয়। আর এই ঘটনায় কাশ্মিরি ছাত্রদের বিরোধিতা করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে সমাজবাদী পার্টি ও বিজেপি।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির মতো ব্যক্তিরা ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচ চলার সময় অন্য দলের ভালো খেলায় হাততালি দেন। তখন তো সেটা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তার দাবি, অবিলম্বে অভিযোগ তুলে নেওয়া উচিত। শুধু তাই নয়, উত্তরপ্রদেশ সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ওই ছাত্রদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নেওয়া উচিত বলে জানান নঈম আখতার। একই বক্তব্য দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের। দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুস্তাফা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ছাত্রদের অবিলম্বে ফিরিয়ে নিতে।

ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তানও। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তনসিম আসলাম জানিয়েছেন, কিছু কাশ্মিরি ওই ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকেই সমর্থন করে। এটা নতুন কিছু নয়। তার জন্য ছাত্রদের সাসপেন্ড করে দেওয়া ঠিক নয়। ক্রিকেট ম্যাচে একটা দলকে সমর্থন করলেই যদি দেশদ্রোহিতা করা হয়, তবে তা দুর্ভাগ্যজনক।

তিনি আরো বলেন, ওই কাশ্মিরি ছাত্ররা পাকিস্তানে এসে পড়াশোনা শেষ করতে পারেন। রাস্তা সব সময় খোলা থাকবে।

এ ব্যাপারে মুখ খুলেছেন অভিযুক্ত ছাত্ররাও। গুলজার ও মাতিফ নামের দুই ছাত্র জানিয়েছেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে মেরঠে ফিরতে রাজি নন তারা। খেলায় একটা ভালো দলকে সমর্থন করায় বেআইনিভাবে অভিযোগ এনেছে পুলিশ। অন্যদের বক্তব্য, আমরা কোনো অন্যায় করিনি। আমরা জঙ্গি নই। কাশ্মিরি এবং ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করি। এই কারণে হেনস্থা করা হচ্ছে আমাদের।

এজাজ আহমদ নামের এক ছাত্র বলেন, মজার ব্যাপার হলো, যারা মারধর শুরু করলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ভাঙচুর করল তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়াই আমাদের বার করে দেওয়া হলো, দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হলো।

রবিবারের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এজাজ বলেন, সেদিন পাকিস্তান জিতে যাওয়ার পরও সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ কয়েকজন ছাত্র দুজন কাশ্মিরিকে মারতে শুরু করে। হোস্টেলের ওয়ার্ডেন এবং কয়েকজন উঁচু ক্লাসের ছাত্রও ওদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। এভাবে ঝামেলা গড়ায় বেশ কিছুক্ষণ। রাতে ভেবেছিলাম, সকালে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরের দিন আমাদের অবাক করে দিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করে অন্য ছাত্ররা। তাদের দাবি, কাশ্মিরি ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আজ একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ প্রত্যাহারের ব্যাপারে এখনো কিছু জানাননি কর্তৃপক্ষ।