শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ও বকেয়া ঋণের বোঝা বাড়ছে

পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ও বকেয়া ঋণের বোঝা বাড়ছে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। পাঁচটি সরকারি ব্যাংকের এই টাকা সংস্থাগুলোর কাছে খেলাপি হিসেবে পড়ে আছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর কাছে সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের বকেয়া ও খেলাপি ঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর কাছে গত এক মাসে সোনালী ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। তবে অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের বিপুল অংকের মূলধন এভাবে আটকে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো নতুনভাবে বিনিয়োগ করতে পারছে না। ঋণের কার্যক্রমেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। ওই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে এরই মধ্যে ব্যাংকিং খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক প্রায় ৩৩শ’ কোটি টাকার রাইট শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি পত্র দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে। পত্রে উল্লেখ করা হয়, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর বকেয়া ও শ্রেণিকৃত ঋণের তথ্য প্রেরণ করা হল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১ কোটি টাকা: অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত শীর্ষ ব্যাংক সোনালী ব্যাংক রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর কাছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১ কোটি টাকা। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বকেয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সংস্থার খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯৮১ কোটি টাকা। যদিও এ খাতে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসা খাতে খেলাপি ঋণ নেই। তবে এ খাতে ৫টি ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৫ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। যোগাযোগ ও পরিবহন সংস্থার কাছে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৯ কোটি টাকা: সর্বশেষ তথ্য মতে, রাষ্ট্রীয় শিল্প সংস্থাগুলোর কাছে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ টাকা, সেবা খাতে এই ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অবশ্য সরকারি সংস্থা শিল্প খাত, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসা খাত, পরিবহন ও যোগাযোগ খাত, কৃষি খাত, সেবা খাত সব মিলিয়ে মোট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৬ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫ কোটি টাকা: অগ্রণী ব্যাংক রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর কাছে ঋণ দিয়েছে ৬ হাজার ২১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে শিল্প খাতে ১০ কোটি টাকা, বাণিজ্যিক খাতে ১৪ লাখ, সেবা খাতে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ।

রূপালী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ ২৭ কোটি টাকা: সরকারি কৃষি সংস্থাগুলোর কাছে রূপালী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এ খাতে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২১ কোটি টাকা। সেবা খাতে খেলাপি ঋণ হচ্ছে ৫ কোটি টাকা। বর্তমান সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি থাকায় মোটা অংকের টাকা আটকে গেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। অপর দিকে ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি রয়েছে ৩ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। এই মূলধন ঘাটতি পূরণ করতে ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা মূলধন বৃদ্ধির প্রস্তাব ব্যাংকটি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণ এবং সাধারণ ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো মারাÍক মূলধন সংকটে পড়েছে। অনেক টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে গেছে। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এদিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছে। কিন্তু ওইসব ঋণ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর মূলধনের ওপর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনটি পাওয়া গেছে। বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।