শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > পর্ষদকে তলব করবে দুদক ॥ জাল সনদেই শাহজালাল ব্যাংকে নিয়োগ

পর্ষদকে তলব করবে দুদক ॥ জাল সনদেই শাহজালাল ব্যাংকে নিয়োগ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নিয়োগ জালিয়াতির ভয়াবহ তথ্য এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টেবিলে।

রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় লোক দেখানো লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলেও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ‘রেফারেন্স’-এ নিয়োগ দেওয়া হয় ব্যাংকটিতে। এতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েও ঝরে পড়েছে মেধাবীরা।

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, দুই ডজন ব্যক্তি ভুয়া জাল সনদ নিয়ে ব্যাংকটিতে চাকরি করে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। ভুয়া সনদধারীদের কারো কারো পদোন্নতিও হয়েছে। এরা যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দেখিয়েছেন তা সেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতোমধ্যে ‘জাল সনদ’ হিসেবে সনাক্ত হয়েছে।

এসব অভিযোগে ভুয়া সনদধারীদের পাশাপাশি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। সংস্থাটি মনে করছে, বড় ধরনের ওই অনিয়মের জন্য ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদও দায়ী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশে দুদক প্রথম শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২৪জনের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ নেওয়ার সংশ্লিষ্টতা পায়।

দুদকের কাছে যাদের বিরুদ্ধে ভুয়া জাল সনদ নেওয়ার তথ্য রয়েছে তারা হলেন- শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় শাখার সিনিয়র অফিসার মো. আবদুল্লাহ আল আমিন (আইডি নং-১৩১৯), সিলেট শাখার অফিসার মো. নুরুল ইসলাম (আইডি নং-২০৩৮), ব্যাংকের প্রধান শাখার অ্যাসিসট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. মনিরুল ইসলাম (আইডি নং-৮১৪), বিজয়নগর শাখার সিনিয়র অফিসার মো. রিয়াদুল ইসলাম (আইডি নং-১০৬৬), উত্তরা শাখার জুনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট সোনিয়া সুলতানা (আইডি নং-৬২), কলেজ গেট শাখার অফিসার (ক্যাশ) তপন কুমার সাহা (আইডি নং-১০০৬), উত্তরা শাখার ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার জিনিয়া সুলতানা (আইডি নং-৮৭), ধানমন্ডি শাখার শিক্ষানবিশ অফিসার (ক্যাশ) মো. বদরুল হক (আইডি নং-২১৫১), মহাখালী শাখার শিক্ষানবিশ অফিসার (ক্যাশ) মো. শরিফুল ইসলাম (আইডি নং-২১৩৪), বেড়াচওড়া শাখার সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ) মো. রফিকুল ইসলাম (আইডি নং-৬৩৫), করপোরেশন শাখার ব্যবস্থাপনা শিক্ষানবিশ অফিসার মো. আলাউদ্দিন (আইডি নং-১৯৫২), নওয়াবপুর শাখার জুনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. রেজাউল হাসান (আইডি নং-২৫১), প্রধান শাখার আর্থিক প্রশাসন ডিভিশনের সিনিয়র অফিসার বিল্লাল রাসেল (আইডি নং-১৮৫৬), বংশাল শাখার অফিসার (ক্যাশ) মো. ফারহানা সুলতানা (আইডি নং-১৫৩২), কলেজ গেট শাখার অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন (আইডি নং-১২৭৬), বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় শাখার অফিসার (ক্যাশ) মো. মাসুদ করিম খান (আইডি নং-৭৬৩), মতিঝিল শাখার অফিসার (ক্যাশ) মো. আফসার হোসাইন (আইডি নং-১৬৭৭), ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ইমরান হোসেন (আইডি নং-২৮৭), মিডফোর্ড শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইদুর রহমান (আইডি নং-৬৯), বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় শাখার ফার্স্ট অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ মসিউজ্জামান (আইডি নং-২৪২), ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জালাল আহমেদ (আইডি নং-৯৫), টঙ্গী এসএমই শাখার অফিসার (ক্যাশ) মো. জিয়াউর রহমান (আইডি নং-১৭১৪), রামগঞ্জ শাখার অফিসার মো. নজরুল বিশ্বাস (আইডি নং-২১১৬) ও গুলশান সাউথ অ্যাভিনিউ শাখার অফিসার (ক্যাশ) মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (আইডি নং-১৮৮৫)।

অভিযুক্ত ২৪ কর্মকর্তার মধ্যে ২০ জনের সনদই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং চার জনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ইস্যুকৃত।

দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুদকের অনুসন্ধানে জালিয়াতির প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।’

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভুয়া জাল সনদধারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে পর্ষদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভুমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে পর্ষদ দায় এড়াতে পারে না।

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরির নামে ব্যাংক থেকে দীর্ঘদিন বিপুল পরিমাণ আর্থিকসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেছেন, যা অনৈতিক ও প্রতারণার শামিল। ব্যাংক থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই পদত্যাগপত্র গ্রহণের মাধ্যমে স্বাভাবিক ছাড়পত্র প্রদান করেছে। পর্ষদ তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও তা কৌশলে এড়িয়ে গেছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা হলেন- চেয়ারম্যান একে আজাদ, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, মো. আবদুল বারেক, পরিচালক সাজেতুজ জুম্মা, আনোয়ার হোসাইন খান মোহাম্মদ ফারুক, তোফাজ্জল হোসেন, মো. সানাউল্লাহ শহীদ, মো. হারুন মিয়া, মো. ফররুখ, মো. সোলায়মান, সৈয়দ নজরুল আরেফিন, আবদুল হালিম, মহিউদ্দিন আহমেদ, আক্কাস উদ্দিন মোল্লা, খোন্দকার সাকিব আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌহিদুর রহমান, মোশাররফ হোসাইন, স্বাধীন পরিচালক ফরিদা পারভীন নুরু ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরমান আর. চৌধুরী। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম