বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে জানিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনা মোতায়েন করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করে এ দাবি জানায়। বৈঠক শেষে সেনা মোতায়েন হচ্ছে না এমন ইঙ্গিত দিয়ে সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ জানান, সেনা মোতায়েনের মতো পরিস্থিতির আলামত দেখা যায়নি।
সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে পৌর এলাকাগুলোতে সংঘাত, হানাহানি, মারামারি ও দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা বেড়েছে। বিএনপির প্রার্থীদের ওপর দু’দিক থেকে চাপ, জুলুম ও অত্যাচার করা হচ্ছে। একটি চাপ আসছে প্রশাসন যন্ত্র থেকে, আরেকটি আসছে সরকারি দল থেকে।
মঈন খান আরও বলেন, প্রতিটি ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য আমরা ভোট কেন্দ্রগুলোতে সেনা মোতায়েনে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছি। তিনি বলেন, ৮ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সিইসির সঙ্গে আলোচনা করে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কিছু ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে যেসব পর্যবেক্ষণ করেছি, তাতে দেখেছি, সংঘাত, হানাহানি, মারামারি ও দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচনে সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. মঈন খান বলেন, আমরা যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেটি হল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। বিরোধী দল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচন করতে পারবে কিনা- সেটিই আশংকার বিষয়। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে ব্যক্তি পর্যায়ে হতো। এবার মেয়র নির্বাচন হচ্ছে দলীয় পদ্ধতিতে। এ নির্বাচন নতুন একটি ডাইমেশন। সেটা হল- ব্যক্তির ইচ্ছা, জনপ্রিয়তা, সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয় শুধু নয়, এখানে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যেসব রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে, সেগুলোই প্রতিফলিত হচ্ছে। সে কারণে দ্বন্দ্ব, আক্রোশ ও হিংসাÍক কার্যক্রম অনেক বেড়ে গেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে সেনা মোতায়েনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। যাতে প্রত্যেক ভোটার নির্ভয়ে, নিঃশংকায় ভোট দিতে পারেন।
সেনা মোতায়েনে ইসির কোনো পরিকল্পনা নেই বলে সিইসি আগেই জানিয়েছে- এ অবস্থায় বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু আগেই ব্যাখ্যা করেছি, সেদিন থেকে আজকের পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দলীয় রাজনীতির কারণে ঝুঁকি অনেক বেশি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে। পটুয়াখালীতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িতে হামলা করা হয়েছে। নোয়াখালীতে সাবেক চিফ হুইফের ওপর হামলা করা হয়েছে- এমন পরিস্থিতিতে যে আশংকা সৃষ্টি হয়েছে সেটি জানিয়েছি।
সেনা মোতায়েনের দাবির বিষয়ে সিইসি কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনগত তার করণীয় তিনি করবেন। তবে তিনি কী বলেছেন, তা আপনারা তার কাছ থেকেই শুনবেন। এখনও এ বিষয়ে ইসির অবস্থান জানি না।
বিএনপির প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হালিম, ক্যাপ্টেন সুজা উদ্দিন, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
সেনা মোতায়েনের আলামত দেখছে না ইসি : পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হচ্ছে না বলে আবারও ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ রাখার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করি। শনিবার আইনশৃংখলা বৈঠকও করেছি। সেখানে সারা দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। সবগুলো সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনা করে দেখেছি, যে ওরকম (সেনাবাহিনী মোতায়েন) পরিস্থিতির আলামত দেখা যায়নি বা সৃষ্টি হয়নি। তবে আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন এবং ভোট দিতে পারেন তার ব্যবস্থা করব।’
সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে কোনো বাহিনীই মোতায়েন করা হয় না। সেখানে পুলিশও মোতায়েন করা হয় না। আমাদের এখানে অনেক আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়। কেননা, এখানে রাজনৈতিক উন্নয়ন হয়নি। ইন্ডিয়াতেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আশা করি, আমাদের এখানেও রাজনৈতিক উন্নয়ন হবে। তখন রাজনীতিকরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলবেন, হাসি-ঠাট্টা করবেন। কিন্তু কেউ কারও মাথায় বাড়ি দেবেন না। এখানেও রাজনীতিতে গুণগতমানের উন্নয়ন হবে বলে আশা করি। তখন আমরাও কোনো বাহিনী মোতায়েন করব না।
বিএনপির নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে শংক বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিইসি বলেন, সব দলের প্রার্থীরাই সুন্দরভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রচারণা করছেন বলে গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। কোথাও অনিয়ম হলে আমরা ব্যবস্থাও নিচ্ছি। ইতিমধ্যে মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা রয়েছেন, তারা ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের জানাচ্ছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার অর্থদণ্ড দেয়া হচ্ছে। সব দলের প্রার্থীকে জরিমানা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে গণমাধ্যমের সংবাদের সমালোচনা করে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, আমাদের কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের মধ্য থেকে ৬০ জনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করেছি। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার পদে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল করছি। কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অনিয়মকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও আমরা তাদের জবাবদিহি করছি। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আপনারাও নিরপেক্ষ থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করবেন। ইসির অনুমোদিত বৈধ সাংবাদিকরাই ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন। কিন্তু বেশিক্ষণ ভোট কেন্দ্রে থাকতে পারবেন না। অন্যদের সুযোগ করে দেবেন। এছাড়া গোপন কক্ষে প্রবেশ করা যাবে না, ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যাবে না, ছবি তোলা যাবে না।