স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকা: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নতুন রেল সংযোগ স্থাপনের জন্য রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে যশোর পযর্ন্ত নতুন ব্রড গেজ লাইন নির্মাণ করবে সরকার।
১৬৯ কিলোমিটার দূরত্বের এই লাইনে লুপ সাইডিংস এবং ডাবল লাইনসহ মোট ট্র্যাক হবে ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ নির্মাণের জন্য মোট দৈর্ঘ্যকে চারটি সেকশনে ভাগ করা হয়েছে।
প্রথম সেকশন ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া, দ্বিতীয় সেকশন গেন্ডারিয়া থেকে মাওয়া, তৃতীয় সেকশন মাওয়া-ভাঙ্গা এবং চতুর্থ সেকশন ভাঙ্গা জংশন থেকে যশোর পযর্ন্ত নির্মিত হবে।
পদ্মাসেতু রেল সংযোগে মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৭০২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৯ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
বাকি ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা জি টু জি পদ্ধতিতে অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে চীন সরকার।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মো. ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এরইমধ্যে চীনের সঙ্গে কমার্শিয়াল চুক্তি হয়ে গেছে। চায়নিজ রেলওয়ে গ্রুপ অর্থায়ন করবে।
‘২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা চীন সরকার জি টু জি পদ্ধতিতে ঢাকা থেকে যশোর রেলপথ নির্মাণে ঋণ সহায়তা দেবে। আশা করছি প্রকল্পটি একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর শেষ করতে পারবো।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ আগামী ২০১৮ সাল নাগাদ শেষ হওয়ার কথা। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।
ডাবল ডেকের এই সেতুতে চারলেন সড়ক পথ এবং নিচের ডেকে ব্রড গেজ সিঙ্গেল রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। যাতে যশোর, খুলনা, বেনাপোল ও মংলা পযর্ন্ত সরাসরি রেলওয়ে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়।
বর্তমানে ঢাকা-যশোর রুটের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনতে পদ্মাসেতু হয়ে ভাঙ্গা থেকে যশোর পযর্ন্ত নতুন রেলওয়ে করিডোর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন রেলপথটি মতিঝিল, সবুজবাগ, সূত্রাপুর, ডেমরা, কেরানীগঞ্জ, ফতুল্লা, সিরাজদীখান, শ্রীনগর লৌহজং, জাজিরায় মিলবে।
এর পর শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সালথা, গোপালগঞ্জের মোকসুদপুর ও কাশিয়ানিতে একটি নতুন রুট নির্মাণ হবে। নড়াইল সদর, লোহাগড়া হয়ে সর্বশেষ যশোর সদর ও বাগপাড়ায় রেলপথটি শেষ হবে।
২০১৭ থেকে ২০২২ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পের ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন, ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইড, ৩ কিলোমিটার ডাকল ট্র্যাকসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রডগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে।
২৪ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, দুই কিলোমিটার র্যাম্পস, ৬৬টি ছোট সেতু, ২৪৪টি কালভার্ট, একটি হাইওয়ে ওভারপাস, ২৯টি লেভেল ক্রসিং ও ৪০টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, রেল যোগাযোগের উন্নয়নে ১৪টি নতুন ও ৬টি বিদ্যমান সেকশনের উন্নয়ন করাসহ ১ হাজার ৬৬৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। আর কেনা হবে ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী বগি।
‘এ রুটে কন্টেইনার চলাচলের ক্ষেত্রে জাতীয়, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ফ্রেইট, ব্রডগেজ কন্টেইনার ট্রেনগুলো প্রয়োজনীয় স্পিড ও লোড ক্যাপাসিটি চালু করা হবে। যাতে বাংলাদেশ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট নির্মিত হয়।’
ভবিষ্যতে দ্বিতীয় লাইন নির্মাণ এবং বরিশাল ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরকে এই রুটে সংযুক্ত করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।