রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > পতিতালয়ের অন্দরমহল

পতিতালয়ের অন্দরমহল

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ আমেরিকার নেভাদা ছাড়া বাকি সব রাজ্যে পতিতাবৃত্তি অবৈধ। এমনকি লাস ভেগাসেও। আমেরিকার নেভাদার এক পতিতাপল্লী ঘুরে এসে একজন বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকায় ‘ও ডধষশবফ ওহঃড় অ ঘবাধফধ ইৎড়ঃযবষ অহফ গু ঊীঢ়বপঃধঃরড়হং ডবৎব ঝযধঃঃবৎবফ’ শিরোণামে এক লেখা লিখেছেন। লেখাটি পড়ার পর আমার পাঠকদের সঙ্গে লেখাটার চুম্বক অংশ শেয়ার করার ইচ্ছে হলো। সঙ্গে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আর বাংলাদেশের পতিতালয় ও পতিতাবৃত্তি নিয়ে কিছু কথাবার্তাও থাকলো।

সবাই জানেন পতিতাবৃত্তি পৃথিবীর প্রাচীণতম পেশাগুলোর অন্যতম। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে পতিতাবৃত্তি নিয়ে এক ধরনের রাখঢাক আছে। কোথাও কোথাও আইনগতভাবে পতিতালয়ের স্বীকৃতি আছে। কোথাও নেই। তবে সকল দেশ ও সমাজ নির্বিশেষে গোপন পতিতালয়ের অস্তিত্ব যে আছে সেটা চোখকান খোলা রাখলে সহজেই বোঝা যায়।

আমার এক আত্মীয় কাজ করেন বিমান বাংলাদেশে। তার বাসা মোল্লারটেক। বিমানের বলাকা বিল্ডিং থেকে বের হয়ে কখনো কখনো তিনি হেটে এয়ারপোর্টের বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে রিকশা নেন। তবে বলাকা বিল্ডিং থেকে বের হয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসাটা সবসময় তার জন্য অস্বস্তিদায়ক হয়ে থাকে। শীতকালে সন্ধ্যা তাড়াতাড়ি চলে আসে। আর সন্ধ্যায় ওই পথটুকু পাড়ি দেওয়া রীতিমতো আতঙ্কের। স্ট্রিট লাইট লাগানো হলেও সেগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। পথচারীদের জন্য আতঙ্কের হলেও খোলা আকাশের নিচের এই মিনি পতিতালয় (তবে পতিতালয়ের সংজ্ঞা মোতাবেক এটিকে পতিতালয় বলা যাবে না।) যারা চালায় তাদের জন্য এটি অভয়ারণ্য।

বিষয়টি বোঝার জন্য সন্ধ্যায় কিংবা রাতে বলাকা বিল্ডিং থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ফুটপাথে হেটে আসতে পারেন। দেখবেন, প্রকাশ্যে দর কষাকষি চলে খদ্দেরের সঙ্গে ভাসমান যৌনকর্মীদের। কেউ কেউ খদ্দেরের সঙ্গে দূরে কোথাও চলে গেলেও, অনেকেই পাশের ঝোপঝাড়গুলো যৌনকর্মের জন্য ব্যবহার করে থাকে। আপনার হয়তো মনে হবে দেশে কোন আইন কানুন নেই। অবশ্য ঢাকা শহরের কমবেশি সব জায়গাতেই যৌনকর্মীদের আনাগোনা আছে। বছরখানেক আগে ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা একজনকে প্রায়শ স্ট্যাটাস দিতে দেখতাম। তিনি বিপদে পড়েছিলেন বনানীতে নতুন ফ্ল্যাটে উঠার পর যখন জানতে পারলেন যে, তার প্রতিবেশীর বাড়িতে টাকার বিনিময়ে যৌনকর্ম করার বন্দোবস্ত আছে। প্রয়াত নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের কোথাও কেউ নেই নাটকে কুত্তাওয়ালী নামে এক চরিত্র ছিল যে অভিজাত পাড়ায় মেয়েদের দিয়ে যৌন ব্যবসা চালাতো। কুত্তাওয়ালী চরিত্রটি যখন কোন পতিতালয়ে থাকে তাকে বলে মাসি।

ঢাকার মিরপুর এলাকায় দুই দশক ধরে বাস করেন পেশায় আইনজীবি একজন একবার বলেছিলেন- বৃহত্তর মিরপুর এলাকাতেই ১৫,০০০ নারী যৌনকর্মী হিসেবে সক্রিয় আছেন। মিরপুরে নিবাসী এক শ্রমিক নেতার মতে সংখ্যাটি কমবেশি ৫০,০০০ হবে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে মিরপুর নিবাসী এই শ্রমিক নেতা মনে করেন, সংসার চালানোর খরচ বেড়ে যাওয়ায় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে এই পেশা বেছে নিয়েছে।

দেশের অনেক উপজেলায় দুই চার ঘর যৌনকর্মী থাকতে দেখা যায়। হোটেলভিত্তিক যৌনকর্মী আমাদের দেশে খুবই সাধারণ এক চিত্র। মগবাজারে চার রাস্তার মোড়কে ঘিরে থাকা অনেকগুলো হোটেলে এমন কাজ চলে সেটা আমি প্রথমে জানতে পেরেছিলাম সম্ভবত ৮৪/৮৫ সালে। বাংলাদেশে এইচআইভি এইডস নিয়ে কাজকর্ম বাড়ার পর যৌনকর্মীদের আনাগোনা কোথায় আছে সে ব্যাপারে অনেকেই সচেতন হয়েছে। এনজিওতে এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ বিষয়ক কাজের সুবাদে আমার ছোট ভাই সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় হোটেলভিত্তিক যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করত। সেসময়ে তার কাছে হোটেলভিত্তিক যৌনকর্মীদের বিভিন্ন ঘটনা জেনেছি। কুয়াকাটায় শুধু যে স্থানীয়রা কাজ করত তা নয়, ঢাকা ও বরিশাল থেকে চুক্তিভিত্তিক যৌনকর্মীরাও যেতো। তার কাছ থেকে পর্যটন এলাকাকে ঘিরে বাসাবাড়িতেও যৌনব্যবসা গড়ে উঠার কথা জানতে পেরেছি।

অবশ্য হোটেলভিত্তিক যৌনকর্মীদের ব্যবসা বাংলাদেশে অনেক পুরনো। নব্বই দশকের শুরুতে আমি ও আমার এক বন্ধু চাঁদপুরে গিয়েছিলাম একটি কাজে। সন্ধ্যায় হোটেল বয় এসে জানতে চেয়েছিল রাতে লাগবে কিনা। এই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি বরিশালের নুপুর হোটেল, খুলনার রয়েল হোটেলসহ দেশের আরো অনেক হোটেলেই। তবে হোটেলে যৌনকর্মীদের পাওয়া গেলেও হোটেলগুলো কিন্তু পতিতালয় নয়, মূলত হোটেল ম্যানেজার বয়রা মিলে এই ধরনের ব্যবসা করে থাকে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো পতিতালয়টি বোধহয় বানীশান্তায়। এছাড়াও কান্দুপট্টি, ইংলিশ রোড, টানবাজার, দৌলদিয়া, গোয়ালন্দ, ফরিদপুরের রথখোলা, টাঙ্গাইল শহরের পতিতালয়সহ দেশে মোটামুটি এক কুড়ি সরকার স্বীকৃত বড় আকারের পতিতালয় রয়েছে। সরকার স্বীকৃত পতিতালয়গুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। ছোট ছোট খুপরিতে দিনে ১০/১৫ জন খদ্দেরের সঙ্গে মিলিত হতে হয় এক একজন যৌনকর্মীকে। দেশের অনেক পতিতালয়ে যৌনকর্মীদের সন্তানরা বড় হয়। অনেক সময় দেখা যায় মায়েরা শিশু সন্তানের সামনেই খদ্দেরের সঙ্গে মিলিত হয়।

বাংলাদেশের পতিতালয়গুলো কেমন সেটা দেখার কয়েকবার মোক্ষম সুযোগ পাওয়া গেলেও যাওয়া হয়নি। আজকে লিখতে বসে মনে হচ্ছে ডাঃ গিয়াস ভাইয়ের সঙ্গে দৌলদিয়া দেখার অভিজ্ঞতাটুকু নিয়ে রাখলে আজকে নেভাদার পতিতালয় শ্যারি’স র‌্যাঞ্চ নিয়ে লিখতে অনেক সুবিধা হতে পারত। যাই হোক। বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ও ডধষশবফ ওহঃড় অ ঘবাধফধ ইৎড়ঃযবষ অহফ গু ঊীঢ়বপঃধঃরড়হং ডবৎব ঝযধঃঃবৎবফ’ শিরোণামের লেখাটা থেকে জানা যায় আমেরিকার নেভাদায় পতিতাবৃত্তি ও পতিতালয় বৈধতা পায় ১৯৭১ সালে। লেখক লিখেছেন, লাস ভেগাস শহর থেকে এক ঘণ্টার গাড়ি পথের দূরত্বে অবস্থিত পতিতালয়টির নাম শ্যারি’স র‌্যাঞ্চ (শ্যারির খামার বাড়ি!)।

আমার গাড়ির ড্রাইভার ফাবিও কাজ করে শ্যারি’স র‌্যাঞ্চে এবং দিনে কয়েকবার লাস ভেগাস আসা যাওয়া করে আমার মতো অতিথিদের আনার জন্য। শ্যারির পতিতালয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি সার্ভিসটুকু ফ্রি। ইচ্ছে করলে গাড়িতে যেতে যেতে শ্যারি পতিতালয়ে থাকা যৌনকর্মীদের ভিডিও দেখে নেওয়ার সুযোগ আছে। সেখান থেকে প্রাথমিক বাছাইটা সেরে ফেলা যায়। কোন প্রশ্ন থাকলে সেটার উত্তরও ড্রাইভার জানিয়ে দেয়। তবে ড্রাইভার নিজে থেকে কাউকে রিকমেন্ড করতে পারে না। কারণ তাতে কেউ বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ পেতে পারে। ওখানে দুটো গেট আছে। একটা স্পোর্টস বারের জন্য। অন্যটা ‘সেই’ জিনিসের জন্য।

ঢ়রপঃঁৎব-ংযবৎরবং-ৎধহপযশ্যারির র‌্যাঞ্চে আমাদের দেশের মতোই মাসি আছে। তাকে বলে ‘ম্যাডাম’। হুমায়ূন আহমেদের কোথাও কেউ নেই এর সেই কুত্তাওয়ালীর মতোই এখানকার ম্যাডাম ডিনা মেয়েদের খুব যতœ আত্তি করে। তাদের সুবিধা অসুবিধাগুলো দেখে। প্রতিদিনের ব্যবসা যাতে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয় সেটা নিশ্চিত করে। কাস্টমারদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্বও তার। র‌্যাঞ্চে অনেকগুলো বিল্ডিং আছে। মূল ভবনে রেস্টুরেন্ট ও মেয়েরা থাকে। পেছনে সুইমিং পুল আছে। যারা মূল ভবনের ভীড় এড়িয়ে থাকতে চান তাদের জন্য আছে কয়েকটি থিমেটিক বাংলো। র‌্যাঞ্চে যারা আসেন তারা সবাই যে মেয়েদের কাছে যাবেন তা নয়। শুধুমাত্র খাবার খেয়েও তারা চলে যেতে পারেন। কেউ আটকাবে না। সবমিলিয়ে র‌্যাঞ্চে জায়গার পরিমাণ ৩১০ একর।

বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের প্রত্যেকের একটা গল্প আছে। তারা বেশিরভাগ বাধ্য হয়ে পতিতাবৃত্তিতে এসেছে। শ্যারি’স র‌্যাঞ্চের যৌনকর্মীরা আবেদন করে এই পেশায় এসেছে। এজন্য তাদেরকে প্রথমে নেভাদা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়েছে। বছরের যেকোন সময় আবেদন করা যায়। পার্ট টাইম করারও ব্যবস্থা আছে। এই পতিতালয়ে একটি মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট আছে। তার বক্তব্য হলো- এখানে কখনো স্লট ফাঁকা থাকে না।

এখানের মেয়েরা দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করার সুযোগ পায় না। দিনে দুই শিফটে কাজ হয়। একটি শিফট হলো সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা। অন্যটি সন্ধ্যা ৫টা থেকে সকাল ৫টা। প্রত্যেকের আলাদা রুম আছে। যে যার মতো করে সাজিয়ে নিতে পারে। তবে রুমের জন্য তাকে র‌্যাঞ্চ মালিককে দিনে ৪৬ ডলার ভাড়া দিতে হয়। ৪৬ ডলারের বিনিময়ে সে পুরো দিনের খাবার পায়, হাউজকিপিং সার্ভিস পায়, কমপিউটার রুম ও লেডিজ লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও কাস্টমারদের কাছ থেকে যা আয় হয় তার ৫০ ভাগ র‌্যাঞ্চের মালিককে দিয়ে দিতে হয়।

বাকিটা যৌন কর্মীর। যারা পার্টটাইম কাজ করে তারা সপ্তাহ কিংবা পনরদিন অন্তর বাড়ি যেতে পারে। এখানে কনডম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও খদ্দেরদের চোখের দেখায় একবার চেক করে নেয়া হয়। একে সংক্ষেপে বলে ‘ডিসি’ বা ‘ডিক চেক’। কোন মেয়েই এখানে একটানা তিন সপ্তাহের বেশি কাজ করতে পারে না। তবে তিন সপ্তাহ কাজ করার পর ফিরে গিয়ে কিছুদিন পর আবার ফিরে আসতে পারে।

র‌্যাঞ্চটি সপ্তাহের প্রতিদিন এবং বছরে ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। ওখানে গিয়ে যেমন বাছাই করা যায় তেমনি ইন্টারনেট থেকেও পছন্দ করে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রুমে যাওয়ার পর কথাবার্তা বলতে বলতে ঠিক করে নিতে হয় খদ্দের কি কি করতে চায় এবং কতো খরচ করতে হবে। চুক্তি হওয়ার পর খদ্দের প্রথমে টাকাপয়সা দেয়। তারপর চুক্তি অনুযায়ী যা করার করে চলে যায়।