রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > পণ দিতে না পারায় তিন বছর ধরে বাথরুমে বন্দি

পণ দিতে না পারায় তিন বছর ধরে বাথরুমে বন্দি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: পণপ্রথার আরও এক কদর্য-নির্মম কাহিনী। দাবি মতো পণ দিতে না পারায় বাড়ির বধূকে দীর্ঘ তিন বছর একটি শৌচালয়ে বন্দী করে রাখল স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা। পুলিশ বিহারের দারভাঙা শহরের রামবাগ এলাকায় এই মহিলাকে উদ্ধার করে।
মহিলা থানার অফিসার সীমা কুমারী তাঁকে উদ্ধার করেন। সীমা কুমারী জানিয়েছেন, ওই মহিলার পরণে ছিল মলিন-ছিন্ন কাপড়, তাঁর চুলে জট পড়েছে, হাত ও পায়ের নখ অনেক বেড়ে গিয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর অন্ধকার ঘরে আবদ্ধ থাকতে থাকতে এখন সূর্যের আলোয় তাঁর তাকাতে কষ্ট হচ্ছে। এক চিলতে ঘরে এতদিন কাটিয়ে প্রায় নিজের অস্তিস্তই ভুলতে বলেছিলেন ওই মহিলা। বিবাহিত হলেও তাঁর সিঁথিতে সিঁদুর বা কপালে বিন্দিও ছিল না।
ওই মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁকে ওই বাথরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। নিজের সন্তানকেও তাঁকে দেখতে দেওয়া হত না। উচ্ছিষ্ট-অবশিষ্ট খাবার কখনও সখনও তাঁকে দেওয়া হত। পুলিশকে তিনি আরও জানিয়েছেন, বাবার বাড়ি থেকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির চাহিদা মতো পণ দিতে না পারায় এবং কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় কারণেই তাঁকে এই ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দারভাঙা জেলারই অন্দ্রথাডি থানা এলাকার পাটসান গ্রামে ওই মহিলার বাবার বাড়ি। ২০১০-এ প্রভাত কুমার সিংহের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পরই আরও বেশি পণের দাবিতে তাঁর ওপর অত্যাচার শুরু করে স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন। পণের দাবি না মেটায় এবং কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় অত্যাচারের মাত্রা চরমে পৌঁছায়। সীমা কুমারী জানিয়েছেন, তাঁর বাবা-মা-র সঙ্গেও তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হত না। তাঁর আত্মীয়রা দারভাঙায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন এব্যাপারে আপত্তি করত। মহিলার বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে ঝগড়া করে তাঁদের তাড়িয়েও দিত। বাইরের কোনও ব্যক্তির সঙ্গেই ওই মহিলাকে কথা বলতে দেওয়া হত না।
শৌচালয়ে বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই ওই মহিলা তাঁর তিন বছরের কন্যাকে কাছে চান। কিন্তু এতদিন মাকে না দেখে সে চিনতে পারেনি। সেজন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই মহিলা।
বাবা শ্যামসুন্দর সিংহের চেষ্টায় ওই মহিলাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তিনি দারভাঙার এসএসপি-র কাছে এব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই এসএসপি মহিলা ইন্সপেক্টরকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। পুলিশ ওই মহিলার স্বামী, শ্বশুর ধীরেন্দ্র সিংহ এবং শাশুড়ি ইন্দ্র দেবীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। তাদের গ্রেফতারও করা হয়েছে।