শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত

পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ দুই দিনের অবরোধে বাজারে তরিতরকারিসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আসতে পারছে না সবজি। সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বরাবরের মতোই সবজির দামও কিছুটা বেড়ে গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পচনশীল পণ্য হওয়ায় সরবরাহ সংকটের তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে তরিতরকারি বাজারে। কিন্তু চাল, ডালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যে প্রভাবটা পড়তে একটু সময় লাগে।

সে কারণেই অনেক পণ্যের দামে এখনো অবরোধের প্রভাব পড়েনি। তবে অবরোধ ওঠে গেলেই এই প্রভাবটা পড়বে। কারণ দুই দিন যেসব ট্রাকমালিক ট্রাক চলাচল করতে দেননি, তাঁরা বেশি দামে পণ্য পরিবহন করবেন। ফলে সামনে আরও দুই-তিন দিন হয়তো ভুগতে হবে ক্রেতাদের। আরেকটি দুঃসংবাদ হচ্ছে, ১৮-দলীয় জোট অবরোধ আরও এক দিন বাড়িয়েছে, চলবে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো হলেও সরবরাহ হয়েছে খুবই কম। এক দিনের ব্যবধানে পণ্যভর্তি প্রায় দেড় হাজার কনটেইনার জমে গেছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বন্দর থেকে বেসরকারি ডিপো ও গুদামে প্রায় এক হাজার ১৪৫ একক কনটেইনার পণ্য সরবরাহ হয়েছে। এসব পণ্যের সিংহভাগই বেসরকারি ডিপোগুলোতে নেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রায় তিন হাজার কনটেইনার পণ্য সরবরাহ হয়।

অবরোধে দুই দিন ধরেই স্থলবন্দরে আটকে আছে নানা ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক। এসব ট্রাকের একটি বড় অংশজুড়েই রয়েছে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল।

অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজধানীর বাজার ঘুরে সরবরাহ-সংকটের প্রভাব চোখে পড়েনি, বিক্রি হয়েছিল তাজা তরিতরকারি। দামও তেমন বাড়েনি। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার কয়েকটি সবজির দাম বেড়ে গেছে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা। মঙ্গলবার ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া গাজর গতকাল ৪৫ থেকে ৫০, ৪০ টাকার শিম ৫০, ৩৫ থেকে ৪০ টাকার বেগুন ৪০, ৩০ থেকে ৩৫ টাকার ফুলকপি ৪০, ৩০ টাকার বাঁধাকপি ৩৫, ৪০ টাকার ঢ্যাড়স ৫০ টাকা, ১৫ টাকার পেঁপে ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, রাজধানীর তরিতরকারির বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে প্রতিদিন রাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী ছোট-বড় ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক আসে। কিন্তু মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আসে ২০ থেকে ৩০টি ট্রাক। এগুলো ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে সবজি নিয়ে এসেছে।

কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজারে তেমন সবজি আসছে না। তাই দামও একটু বাড়তি।’

আরও খারাপ অবস্থা আরেক বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের। শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির হিসাবে, প্রতিদিন এ বাজারে ৬০ থেকে ৭০টি পণ্যবাহী ট্রাক ঢোকে। এসব ট্রাকে মূলত পেঁয়াজ-রসুন-আদাই আনেন ব্যবসায়ীরা। আর সবজির বড় অংশই আসে নদীপথে। গত দুই দিনে কোনো ট্রাকই ঢোকেনি। ফলে এ বাজারে বিক্রি হচ্ছে দুই দিন আগের সবজি।

সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ খুবই কম। আগের সবজিই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাও কমে গেছে। ফলে বিক্রি হচ্ছে না। অনেক তরিতরকারি নষ্টও হয়ে যাচ্ছে।
নাটোর, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাল আসে রাজধানীর বাবুবাজারে। অবরোধের কারণে গত দুই দিনে চালবাহী একটি ট্রাকও এখানে আসতে পারেনি। অবশ্য এতে চালের পাইকারি দামে তেমন হেরফের হয়নি।
বাবুবাজারের রশিদ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বলেন, নতুন কয়েক ধরনের চাল উঠেছে। তাই মিনিকেট ছাড়া আর কোনো চালের দামই বাড়ার কথা না। তার পরও দাম কমছে না। এর কারণ হলো টানা হরতাল-অবরোধ। টানা হরতালে ট্রাক চলাচল করতে পারে না। কিন্তু হরতাল শেষ হলেই দ্বিগুণ ভাড়ায় চাল আনতে হয়।

ভোজ্যতেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ নিত্যপণ্যের প্রায় সবকিছুরই পাইকারি বিকিকিনি হয় রাজধানীর মৌলভীবাজারে। মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবরোধের আগেই মুদি দোকানদারেরা এখান থেকে একসঙ্গে বেশি করে পণ্য নিয়ে গেছেন। আবার মৌলভীবাজারের পাইকাররাও মিলমালিকদের কাছ থেকে বেশি করে পণ্য নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন।

স্থলবন্দরে ট্রাকের সারি: বেনাপোল স্থলবন্দরে গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত ৪৭৬টি পণ্যবাহী ট্রাক পড়ে ছিল। এসব ট্রাকের ১৪৩টিতে ছিল তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল, ১১টিতে ছিল মাছসহ পচনশীল পণ্য। আর বাকি ট্রাকে ছিল অন্যান্য শিল্পপণ্য ও কাঁচামাল। যশোরকেন্দ্রিক আমদানিকারকেরাই শুধু কিছু ট্রাক মঙ্গলবার খালাস করেছেন।

স্থলবন্দরটির যুগ্ম কমিশনার ফইজুর রহমান বলেন, বন্দরে আটকে থাকা ট্রাকগুলো যেন খালাস হতে পারে, সে জন্য শুক্র ও শনিবারও বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখা হবে।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে দুই দিন কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়নি। তাই কোনো পণ্যবাহী ট্রাকও আটকে নেই। তবে ভোমরা বন্দরের ভারতীয় সীমান্ত অংশ ঘোজাডাঙ্গা শুল্ক স্টেশনে আটকে আছে ৮০০ পণ্যবাহী ট্রাক।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ত্রিদেশীয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে সকাল থেকে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়নি। বন্দরের উভয় পাশে পণ্যবাহী শত শত ট্রাক অপেক্ষা করছে।

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানীকৃত পণ্য স্থলবন্দরে প্রবেশ করেনি। বন্দর থেকেও কোনো ট্রাক ভারতে প্রবেশ করেনি। তবে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা আসা-যাওয়া করেছেন।