রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিসেম্বর মাস প্রায় শেষ হয়ে এলো। আগামী মাস থেকেই নতুন মজুরি কাঠামোয় পোশাক শ্রমিকদের বেতন পাওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার ভয়াবহ প্রভাব পোশাক শিল্পের ওপরও পড়ায় তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারখানা মালিকরা নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পেরে উঠবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মজুরি বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী, জানুয়ারি মাস থেকেই শ্রমিকরা পাবে তাদের কাঙ্ক্ষিত ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু বেশ কিছু কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এটুকুই জানেন যে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু এখনো ঠিক হিসাব মেলাতে পারছেন না: কীভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন। এনিয়ে তারা খুবই সঙ্কটময় অবস্থায় আছেন তারা।

বিজিএমইয়ের সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজীম ক্লাসিক ফ্যাশন কনসেপ্ট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তিনি একদিকে বিজিএমইএর প্রতিনিধি, অন্যদিকে একটি কারখানারও প্রতিনিধি। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, ‘আমরা আগামী মাস থেকে কারখানায় নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করবো।’

কিন্তু বর্তমানে ব্যবসার যে অবস্থা তাতে অনেক কারখানাই তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আসলে এ সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে এমন অবস্থায় আছি যেখানে লস মিনিমাইজ নিয়ে ব্যস্ত সবাই। লাভের কথা তো কেউ চিন্তাও করছে না। ইতিমধ্যে বায়াররা অনেক অর্ডার কমিয়ে এনেছে। এরপরও যা আসছে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি। কে কত কমে কাজ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা। শুরু হয়েছে লস মিনিমাইজের প্রতিযোগিতা। এ অবস্থা থেকে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন আসলেই খুব কঠিন।’

রেডিসন অ্যাপারেলস লিমিটেডের পরিচালক গোলাম খোরশেদ শুভ্র বলেন, ‘এখন আসলে টিকে থাকাই দুষ্কর হয়ে যাবে। ব্যবসার যে অবস্থা তাতে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন খুবই কষ্টকর হবে আমাদের জন্য। তবে শ্রমিকদের আগামী মাস থেকেই এ বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে সৎ চেষ্টা করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসার ভালো পরিবেশ পেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াবো আমরা। তখন বর্তমান লস সহজে কাটিয়ে ওঠতে পারবো বলে আশা করছি।’

এ গার্মেন্টসের আরেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এএইচএম সাহসী রহমান বলেন, ‘আমাদের মোট শ্রমিক আছে ৩ হাজার। আগের বেতন কাঠামোতে শ্রমিকদের বেতন দিতাম ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর নতুন বেতন কাঠামোতে দিতে হবে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এটা একটু কঠিনই হবে।’

শ্রমিক সংগঠনগুলোও দেশের এ পরিস্থিতিতে নতুন ন্যূনতম মজুরি কাঠামো জানুয়ারিতে বাস্তবায়িত হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। কারখানা মালিককের কঠিন অবস্থার কথাও বিবেচনা করছেন তারা। এ ব্যাপারে শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা তাদের পাওনা ঠিকঠাক বুঝে পেতে চায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মালিকদের কথাও মাথায় রাখা উচিৎ।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন এ বেতন কাঠামো অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে। তবে সামনের মাসে মালিকরা তা কতটুকু বাস্তবায়ন করবে তা দেখার বিষয়।’

কারখানা মালিকরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা গার্মেন্টস ব্যবসাকে একদম কোণঠাসা করে ফেলেছে। আমরা এ অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে চাই। এমনকি মালিকরা ন্যায্য মূল্যে শ্রমের দাম দিতে আগ্রহী। কিন্তু তার জন্য ব্যবসার লেভেল প্লেইং ফিল্ড চান এ খাতের ব্যবসায়ীরা। আর ব্যবসায়ীদের এটা চাওয়ার অধিকার অবশ্যই আছে।