শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > নেতাকর্মীদের মনোভাব চাঙ্গা হলেও আস্থাহীনতায় ভুগছেন খালেদায়

নেতাকর্মীদের মনোভাব চাঙ্গা হলেও আস্থাহীনতায় ভুগছেন খালেদায়

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দল গুছিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করা হবে, খালেদা জিয়ার এমন ঘোষণায় নেতাকর্মীদের মনোভাব চাঙ্গা হলেও আস্থাহীনতায় ভুগছেন দলের কর্মীরা। বারবার ঘোষণা দিয়ে কঠোর আন্দোলনে না যাওয়া এবং শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্বের কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।

দশম সংসদের বাইরে থেকে বহুমুখী চাপে রয়েছে বিএনপি। সরকার ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বী আচরণ, মামলা, কূটনৈতিক মহলের বাধ্যবাধকতা, সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা এসব পরিস্থিতির মধ্যেই দল গোছানোর আলোচনা চলছে বিএনপিতে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে বিএনপি গুরুত্ব দিলেও হাই কমান্ডের নির্দেশনা অনেক উপজেলায় মানা হচ্ছে না। বেশ কয়েক জায়গায় বিএনপি সমর্থিত একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তাই এ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনেক চিন্তা রয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের।

উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সরব হওয়ার চিন্তা করছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে।

জেলা-উপজেলাগুলোতে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি সফল বলে দাবি করলেও ঢাকা মহানগর নিয়ে খোদ চেয়ারপারসন নাখোশ। নগর কমিটির সঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঢেলে সাজানোর জন্য খালেদা জিয়া এরইমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীর মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন।

জানা গেছে, কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন তথা শীর্ষ নেতৃত্বের অনেক দূরত্ব রয়েছে। কর্মীরা খালেদা জিয়ার ওপর আস্থা পাচ্ছেন না। আবার খালেদা জিয়াও কর্মীদের ইচ্ছা অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারছে না। এর কারণ খালেদা জিয়া ও কর্মীদের মাঝখানে যারা আছেন তারা সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক কর্মী বলেন, ‘৪ রাত জেগে খালেদা জিয়া ছাত্রদলেরর কমিটি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেছিলেন, এখানে কোনো ভাইয়া ভাইয়া চলবে না। যারা মাঠে কাজ করবে তারাই নেতৃত্ব আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো, যারা নেতৃত্বে এলেন তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন, আর একজনের বিরুদ্ধে খোদ বিএনপির পক্ষ থেকেই মামলা করা হয়েছিলো।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা, মামলা, হয়রানির শিকার হচ্ছে। সেখানে খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ বা নির্বাহী কমিটির নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মী বা তাদের স্বজনদের খোঁজ নিচ্ছেন না। একটা ফোন পর্যন্ত কেউ করেন না।’

বিএনপির অপর এক কর্মী বলেন, ‘ম্যাডামের সঠিক তথ্য দেওয়ার মতো কেউ তার পাশে নেই। ম্যাডামের আলোচনার জায়গাটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। দল গোছানোর জন্য মাঠের সঠিক তথ্য থাকতে হবে। কিন্তু দলের কাছে সঠিক তথ্য নেই। আন্দোলন চলাকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। দেখলাম ওখান থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের তালিকা করা হচ্ছে। ম্যাডামের সঙ্গে ফোনে কথা বলানো হচ্ছে। যাদের তালিকা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেই এলাকায় আন্দোলন কর্মসূচিতে না থেকে ঢাকায় বসবাস করছেন। আর সাধারণ মানুষ এবং তৃণমূলের কর্মী এবং সমর্থকরাই মূলত আন্দোলন করছে।’

দলটির মধ্যম পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, ‘বিএনপিতে নেতা বেশি, কর্মী কম। নেতারা সুবিধাবাদী, কর্মীরা ত্যাগী। নেতা হতে চাই না, কর্মী থাকতে চাই। শুধু কর্মীর মর্যাদা আর সম্মানটুকু নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কামাল আনোয়ার আহমেদ দল গোছানোর প্রক্রিয়ায় তার প্রত্যাশা সম্পর্কে বলেন, ‘এটা অবশ্যই ভালো। তবে দল গোছানোর নামে যেন আবার ত্যাগী নেতারা বাদ না যায়।’

তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বের পরিবর্তন যতোটা জরুরি, তার চেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে নেতৃত্বের মানসিকতার পরিবর্তন, যারা দল ভালোবেসে জিয়াউর রহমানে আদর্শ ছড়িয়ে দেবে, অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবী বিক্রি করবে না, নতুন নেতৃত্বে যারাই যাবেন তাদের কাছে এটাই প্রত্যাশা করি।’

যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল বলেন, ‘ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্যরাই এবার জায়গা পাবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।’

দল গোছানোর সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘দল গোছানোর প্রক্রিয়া চলছে। আরো কিছু বিষয় বাকি আছে। আগামীতে কাউন্সিল হবে। ৩ বছর পর পর কাউন্সিল হওয়ার কথা। যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে, দলকে ভালোবাসে, তারাই এবার নেতৃত্বে আসবে।’