শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > বিনোদন > নুসরাত ফারিয়া, ‘আল্লাহ মেহেরবান’ গান ও কিছু কথা

নুসরাত ফারিয়া, ‘আল্লাহ মেহেরবান’ গান ও কিছু কথা

শেয়ার করুন

বিনোদন ডেস্ক ॥
বস-২ ছবিতে আল্লাহ মেহেরবান গানটি নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বেশ তোলপাড়। রোববার সেটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে নিতে লিগ্যাল নোটিশও দিয়েছে আদালত। আর সেই গানটি দিয়েই নতুন করে আলোচনায় এসেছে চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়ার নাম। এবার নুসরাত ফারিয়া ও আল্লাহ মেহেরবান গানটি নিয়েই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন প্রবাসী কলাম লেখক শাফকাত রাব্বী।

ফেসবুকে এক পোস্টে শাফকাত রাব্বী লিখেছেন, নুসরাত ফারিয়ার চেহারাটা চিনতাম ফেসবুকের সুবাদে, কিন্ত সে আসলে কে, কি করে এতো ডিটেইলস জানা ছিল না। আল্লাহ মেহেরবান নিয়ে ব্যাপক হাউকাউ শুরু হওয়াতে গতরাত্রে ইফতারের পরে তাকে নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাটি করলাম। ফারিয়ার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে তার নিজের বাসায় হেঁটে হেঁটে ফেসবুক লাইভে কথা বলা দেখলাম । এরপরে দেখলাম তার দুই তিনটা সাক্ষাতকার। ফেসবুক, ইউটিউব, আর ওয়েবনিউজ মিলে মোটামুটি দুই ঘন্টার রিসার্চ করলাম মেয়েটার উপর। সেই সীমিত রিসার্চের উপর ভিত্তি করে কিছু কমেন্টস করছি ফারিয়া এবং আল্লাহ মেহেরবান ইস্যুতে।

১। নুসরাত ফারিয়া নিঃসন্দেহে মারাত্মক রকম ইম্প্রেসিভ। তাকে অসাধারণ সুন্দর, গ্ল্যামারাস এবং স্মার্ট মনে হয়েছে। উল্লেখ্য যে বস টু মুভিতে ওর পাশে যেই ভারতীয় মেয়েটা কাজ করেছে, তার চাইতে নুসরাত অনেক বেশি সুন্দর এবং শারীরিক কাঠামোর দিক থেকে অনেক বেশি ফিট। নুসরাতের ইন্টারভিউতে জানতে পারলাম তার ওজন ৪৫ কেজি, সে দিনে ১২০০ ক্যালোরি খায় এবং দিনে দুই ঘন্টা ব্যায়াম করে। এর পাশাপাশি এটাও জানলাম সে এক সময় ভালো বিতর্ক করতো এবং খুব ভালো উপস্থাপনাও করতো। নর্থসাউথ এর ছাত্রী, প্রাক্তন বিতার্কিক, দাদা সেনা কর্মকর্তা ইত্যাদি মিলিয়ে টোটাল প্যাকেজ হিসেবে ফারিয়ার চাইতে ইম্প্রেসিভ নায়িকা বাংলাদেশে আর কে কবে ছিল বা আছে তা আমার জানা নাই। আমাদের সময়ের শাবনুর, পপি, মৌসুমীদের যদি স্কেল হিসেবে ধরা হয়, তাহলে নুসরাত নিঃসন্দেহে কথায় বার্তায় দেখতে শুনতে এক্কেবারে টপ-নচ।

বস টু মুভিটা বানিয়েছে ভারতের পরিচালক। ছবির সিনেমাটোগ্রাফি, মিউজিক, ঘটনার প্রেক্ষাপট ইত্যাদি সব কিছুতেই আছে ভারত। ২ মিনিটের ট্রেইলারে কয়েকবার ভারতের পতাকা, ভারতের বিভিন্ন বাহিনীর নাম ইত্যাদি বলা হয়েছে। সিনেমার ট্রেইলারের শেষে খুব বড় করে, গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে ‘ঈদ ২০১৭’তে মুক্তি পাবে।

যেকোন সিনেমা কবে মুক্তি পাবে এটা সেই সিনেমার মার্কেটিং এ খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কমার্শিয়াল সিনেমা মুক্তির পরপরই মূল ব্যবসাটা করে ফেলে। সেই যুক্তিতে বস টু মুভি ভারতের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হলেও, তার মার্কেটিং এর মেইন টার্গেট ছিল বাংলাদেশের ঈদের বাজার, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

সিনেমার প্রচার বাড়ানোর জন্যে ট্রেইলার ছাড়া হয় দুনিয়ার সব জায়গায়। কোটি কোটি টাকার প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। ভারতের সিনেমার ক্ষেত্রে আগে থেকে আইটেম গান বানিয়ে সেটা ছেড়ে দিয়ে প্রচারণা চালানোর প্রচলন আছে।

একটা সিনেমা বানাতে যতটা মনোযোগ দেয় নির্মাতারা, অনেক সময় তার চাইতেও বেশি মনোযোগ দেয় ট্রেইলার বানাতে। এই যুক্তির আলোকে, এটা ধরে নিতে হবে যে ভারতীয় মিডিয়া কোম্পানি খুব খেয়াল করে, কেয়ার নিয়েই এই আল্লাহ মেহেরবান গানটি বানিয়েছে সিনেমার প্রচার আগে ভাগে বাড়ানোর জন্যে।

‘আল্লাহ মেহেরবান’ শব্দ দুটোকে গানের টাইটেল দিয়ে, ৫ জন বিখ্যাত ভারতীয় বেলি ড্যান্সার এর সাথে মুসলিম মেয়ে ফারিয়াকে বেলি ড্যান্সিং এর শুটিং করিয়ে, ঈদুল ফিতরে রিলিজ হতে যাওয়া সিনেমার মার্কেটিং প্রথম রোজার দিন ছাড়ার ব্যাপারটা নিয়ে নিশ্চয়ই প্রচুর গবেষণা এবং চিন্তা ভাবনা করেছে সিনেমা নির্মাতারা ট্রেইলার রিলিজের আগে। এতোগুলো বিষয় একই সাথে কাকতালীয়ভাবে হতে পারে না এতো বড় বিগ বাজেট সিনেমার ক্ষেত্রে।

সুতরাং, এধরনের একটা গান, এভাবে পরিবেশন করার পরে যে বিতর্কের সৃষ্টি হবে সেটা মিডিয়া হাউজ খুব ভালো করেই জানতো বলে ধরে নেয়া যায়। তারা হয়তো এই বিতর্কটিকেই চেয়েছিল। এখন দেখতে হবে বিতর্কের পরে সিনেমাটা বাংলাদেশে ভালো ব্যবসা করতে পারে কিনা। যদি ভালো ব্যবসা করতে পারে, তাহলে এধরনের সিনেমার মার্কেটিং ভবিষ্যতেও আরো দেখতে হবে ।

এরপরে ফেসবুক স্ট্যাটাসে শাফকাত রাব্বী লিখেছেন,

৩। যারা আল্লাহ মেহেরবান গান নিয়ে প্রতিবাদ করছেন, তারা খুব সম্ভবত আইটেম গানটিতে আল্লাহর নামের ব্যবহার নিয়ে মাইন্ড করেছেন। যদিও খুদা শব্দটি এর আগে হিন্দি-উর্দু গানে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে আধুনিক ভাই বোনদেরকেও দেখলাম প্রতিবাদ করতে, কেউ কেউ ফেসবুকে গিয়ে সিনেমা নির্মাতার ওয়েবসাইটে নেগেটিভ রিভিউ দিয়ে রেটিং কমিয়ে দিচ্ছেন। যারা এগুলো করছেন, তাদের অনেকেই নিয়মিত হিন্দি সিনেমা দেখেন বলে আমার ধারণা।

যারা আইনীভাবে আল্লাহ মেহেরবান গানটিকে মোকাবেলার পক্ষে, তারা হয়তো বলতে পারেন যে এই গানটিতে সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে নেংটা-নেংটি দেখানোর পাশাপাশি আল্লাহর নামটাও জুড়ে দিয়ে।

এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হতে হবে যে শুধু নেংটা নেংটি নিয়ে তাদের আপত্তি নাই। নেংটির সাথে আল্লাহর নাম জুড়ালে আপত্তি আছে। ইসলামের দৃষ্টিতে খুব সম্ভবত আজকের যুগের ৯৯% হিন্দি সিনেমা, গান এবং ১০০% আইটেম গানগুলো নিষিদ্ধ হবার যোগ্য। প্রতিবাদীদের কেউ সব হিন্দি কিংবা সব আইটেম গান নিষিদ্ধের দাবি এখনো করেন নাই বলেই মনে হচ্ছে সাচ্চা মুসলিম হলে যদিও তেমনটাই করার কথা ছিল।

৪। বাংলাদেশ সরকার ও সেন্সর বোর্ড এই গানটার বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত দেয় সেটা সিনেমা মার্কেটারদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা টেস্ট কেস হয়ে থাকবে। সরকার বস টু সিনেমাটা যদি ব্যান না করে , তাহলে এই সিনেমা বাংলাদেশের বাজারে কেমন মার্কেট পায় সেটা ভারত ও বাংলাদেশের মুভি ইন্ডাস্ট্রি দেখার অপেক্ষায় থাকবে।

বিতর্ক সৃষ্টি করে ভালো ব্যবসা হয় কি না হয়, কিংবা ‘অল পাবলিসিটি ইজ গুড পাবলিসিটি’- এই থিওরি বাংলাদেশে খাটে কিনা সেটাও দেখার ইস্যু।

সবশেষে শাফকাত রাব্বী লিখেছেন, এরই মধ্যে একটা মামলা হয়েছে এই ইস্যুতে, যেখানে একজন আইনজীবী ইউটিউব থেকে আল্লাহ মেহেরবান গান সরানোর জন্যে হাইকোর্টে নির্দেশ চেয়েছেন। টেকনিকালি ইউটিউব বাংলাদেশের সম্পত্তি না, সারা বিশ্বের সম্পত্তি। বাংলাদেশের কেউ বড় জোড় দাবি জানাতে পারে বাংলাদেশের গ্রাহকরা যেন এই গান ইউটিউবে দেখতে না পারে। ইউটিউব ইস্যুতে হাইকোর্ট কি রুলিং দেয় সেইটাও একটা টেস্ট কেস।

আমেরিকান সুপ্রিম কোর্ট পর্নোগ্রাফির কোনো অফিশিয়াল সংজ্ঞা দেয় না। তারা বলে পর্নের কোনো সংজ্ঞা নাই। কোর্ট কোনো ভিডিও আগে দেখবে, তারপরেই জানাতে পারবে সেইটা পর্ন ছিল কিনা।

আল্লাহ মেহেরবান ইস্যুতে বাংলাদেশের কোর্টকেও এই রকম কিছু বলতে হবে। কেননা, আমি নিশ্চিত সকল প্রকার আইটেম গান, হিন্দি গান বা নেংটু সংগীত হাইকোর্ট ব্যান করতে যাবে না। এই গুলির গ্রাহকের সংখ্যা প্রচুর। কোর্ট সর্বোচ্চ শুধু বলতে পারে যে এই স্পেসিফিক আল্লাহ মেহেরবান গানটা ব্যান করা হোক, কেননা এই খানে সীমা লঙ্ঘন হয়েছে। আর সেই সীমাটা হতে হবে শুধু আল্লাহর নাম জুড়ে দেয়ার ব্যাপারটাই।