স্টাফ রিপোর্টার ॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না এলে বিএনপি জীবনের শেষ ভুল করবে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মেনন বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর পরই নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বিএনপি তাদের চরিত্র অনুযায়ী ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেছে। তারা বলা শুরু করেছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। নির্বাচন কার অধীনে হবে? সংবিধানে সহায়ক সরকারের কোনো বিধান নেই। অবশ্যই নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। যদি বিএনপি সেই নির্বাচনে না আসে, তাহলে তারা তাদের জীবনের শেষ ভুলটি করবে।
তিনি বলেন, বিএনপি যে দল, সেই দল মুসলিম লীগে পরিণত হয়ে যাবে। নির্বাচন প্রতিরোধ আমরা আগেও শুনেছি, এখনও শুনছি। তিনি (খালেদা জিয়া) অবরোধ দিয়েছিলেন নির্বাচন প্রতিরোধ করার জন্য। সেই অবরোধ এখনও পর্যন্ত প্রত্যাহার না করলেও সে কথার ফানুস রয়ে গেছে। তাই নির্বাচন প্রতিরোধ করার বিষয় কথার ফানুস থাকবে বলে আমি মনে করি।
মেনন বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঘোষণার পর একইসঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সাহেব, হিলারি নিজেরাই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে, নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে এসে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার পরামর্শ কিভাবে দেন আমরা জানি না?
তিনি বলেন, আমরাও সবার অংশগ্রহণে স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। কিন্তু সেটা হতে হবে আইনের অধীনে, সংবিধানের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশন যেভাবে পরিচালনা করবে সেভাবে। রাজনীতিতে এক নতুন প্রক্রিয়া লক্ষণীয়। জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও বিএনপির ছত্র-ছায়ায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে হেফাজতসহ দলগুলো নড়াচড়া শুরু করেছে। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে ৫ মের পুনরাবৃত্তির কথা বলেন। এই ঔদ্ধত্য অতীতেও গ্রহণ করা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
বাজেট নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটা যদি সাধারণ মানুষকে আঘাত করে তাহলেই বিপত্তি ঘটে। এ জন্য করের পরিধি বৃদ্ধি এবং এনবিআরকে আরও দক্ষ ভূমিকা পালন করার প্রয়োজন ছিল। আমরা লক্ষ্য করছি যে, এনবিআর যেখান থেকে সহজে আদায় করতে পারে সেখানে দৃষ্টি দিয়েছেন। এর প্রধান দৃষ্টি হচ্ছে আবাগারি শুল্ক বৃদ্ধি ব্যাংকের আমানতের ওপর। এই কর কেন গরিব মানুষের ওপর চাপবে সেটা আমরা জানি না।
মেনন বলেন, অর্থমন্ত্রী ঋণখেলাপীদের ছাড় দিচ্ছেন, তাদের কারণে ব্যাংকের ঘাটতি করের টাকা দিয়ে পূরণ করছেন। পেনশনভোগী নিম্ন-মধ্যবিত্তদের কেন টাকা বেশি দেওয়া যাবে না? ফলে তারা শেয়ার বাজারে যাবেন এবং ফটকার শিকার হবেন। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, পাচার হওয়া অর্থ একবছরের বাজেটের সমান। সেই টাকা ফেরত আনা যাবে না অথচ বাজেটের টাকা সংকুলানের জন্য ভ্যাট-ট্যাক্সের মহোৎসব চলবে এটা কিভাবে হয়? আমি আশা করি অর্থমন্ত্রী সংসদের আলোচনা শুনছেন, এ বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এবং প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করবেন।
মেনন বলেন, আমি জানি না কেন ধ্যানের ওপর ভ্যাট বসবে? আজকে যেখানে মাদকাসক্ত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ধ্যানের ভূমিকা রয়েছে। তখন এর ওপর ভ্যাট বসবে? আমি আশা করবো ভ্যাটের অব্যাহতিতে ধ্যানকে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আয়-বৈষম্য সম্প্রতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আসলে গ্রাম-শহরের ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্যই বাংলাদেশের সাধারণ চিত্র। বাংলাদেশের এই আয় বৈষম্যের কারণে গ্রাম-শহর এবং ধনী-দরিদ্রর মধ্যে বিভক্ত সৃষ্টি হচ্ছে। জাতি আজ বিভক্ত। এ জন্য সরকারের নীতিকে বার বার মূল্যায়ন করে এটাকে গ্রামমুখী, গরিবমুখী এবং নারীমুখী করতে হবে যাতে মানুষ ঐক্য অনুভব করে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা সমতার নীতি ধরে রাখতে পারলেই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারবো। প্রবৃদ্ধি সমতাভিত্তিক না হয়ে অসম একটি সমাজ সৃষ্টি করে চলেছে। অর্থমন্ত্রী নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন। সেখানে দুর্নীতি হওয়ার কারণে এই টাকা সঠিকভাবে পৌঁছায় না।