স্টাফ রিপোর্টার ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিয়োজিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদনি না করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একইসঙ্গে ‘নির্বাচনপূর্ব’ সময়ে তাদের ছুটি বাতিলেরও আদেশ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে বুধবার এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন।
এ চিঠিসহ বুধবার কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক স্বাক্ষরিত মোট চারটি চিঠি তিন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছেই পাঠানো হয়েছে দু’টি। বাকি দুই চিঠির একটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ও অপরটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবরে একটি চিঠিতে নির্বাচন কাজে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্বাচনপূর্ব সময়ে বদলি অথবা ছুটি বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী নির্বাচনের আগে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৬৪ জেলা প্রশাসক, দুই জন বিভাগীয় কমিশনারকে এ সময়ে অন্য কোথাও বদলি বা ছুটি দেয়া যাবে না। পাশাপাশি সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৫৭৭ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা ভূমি কমিশনারদের ক্ষেত্রেও একই আদেশ পালিত হবে।
একই ঠিকানায় পাঠানো অপর চিঠিতে আচরণবিধি পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে সরকারি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ থেকে জারি করার কথাও বলা হয় ইসির পক্ষ থেকে।
এতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে পারবে না। ‘সুবিধাভোগী’ প্রার্থীদের কথায় তাদের পক্ষে কাজ করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এ চিঠিতে আচরণবিধি অনুসরণে যাতে কোনো প্রকার শৈথিল্য না করার নির্দেশ আছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতেও আচরণবিধি অনুসরণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে এ চিঠিতে আগামী নির্বাচনের আগে কোনো প্রকল্প তহবিলে টাকা অনুমোদন না দেয়ার বিশেষ নির্দেশ দেয়া আছে। একইসঙ্গে নির্বাচনের কাজে কোনো সরকারি অফিস ও গাড়ি ব্যবহৃত না হওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
আর অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ঋণ খেলাপিদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এ ধরনের চিঠি দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও পাঠানো হয়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা যায়।
এছাড়াও মঙ্গলবার সারাদেশের রিটার্নিং অফিসার ও দেশের বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারদের কাছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনী প্রচারসামগ্রী সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে কমিশন কর্মকর্তাদের ধারণা, সারাদেশ থেকে নির্বাচনী প্রচার সরিয়ে ফেলার জন্য ৪৮ ঘণ্টা যথেষ্ট সময় না। এ জন্য সময় আরও বাড়ানো উচিৎ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইসি তো আর সেনাবাহিনী না যে, বললেই সব হয়ে গেলো। তবে ৪৮ ঘণ্টা খুবই অল্প সময়। এসময় আর বেশি হলে সংশ্লিষ্টরা প্রচারসামগ্রী ঠিকভাবে সরিয়ে ফেলতে পারবে।’
তবে বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ কোনো কথা বলেননি। দিন শেষে অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা তার কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলেই চলে যান। একই ঘটনা বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সময়ন্বয়কারী নীল ওয়াকারের ক্ষেত্রেও। দুপুরে তিনি সিইসির সঙ্গে আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে নিচে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের দেখে তিনি অন্য সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান। গাড়িতে ওঠার সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এদিন বিকেলে সিইসির সঙ্গে চার কমিশনার বৈঠকে বসেন। বৈঠকে কোন প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে তা স্পষ্ট করে জানা যায়নি। তবে একজন কমিশনার বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসারদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বৈঠকে পর্যালোচনা করেছি। তবে এ পর্যালোচনা শেষ হয়নি। কালকের বৈঠকে সব ঠিক করতে পারবো।’